সাক্ষাৎকার ...
রাজনৈতিক দল যেন হাইজ্যাক না করতে পারে


দু’টি ক্ষেত্রে একটু তফাত আছে। তাহ্রির স্কোয়্যারে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চলেছে। এখানে লড়াইটা ভিন্ন স্তরে। একটা গণধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। মূলধারার রাজনৈতিক আন্দোলনের বাইরে গিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। আগেও এখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্য ধারার আন্দোলন হয়েছে। ‘আরব বসন্ত’র একটা সুনির্দিষ্ট দাবি ছিল। গণতন্ত্রের দাবি। স্বৈরতন্ত্রের অবসানের দাবি।


এই নাগরিক আন্দোলনের একটা দুর্বলতা হল যে, এটা ঠিক ভাবে দানা বাঁধে না। এর একটা মেকানিজম দরকার। একটা নীতির দরকার আছে। রাজনৈতিক দিশার দরকার আছে।


হ্যাঁ। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের কথা বলছি না, রাজনৈতিক বোধের কথা বলছি। পাশাপাশি, সতর্ক থাকতে হবে, এই নাগরিক আন্দোলনকে কোনও রাজনৈতিক দল যেন ‘হাইজ্যাক’ করতে না পারে।


রাষ্ট্র যে অর্থনৈতিক মডেল নিচ্ছে তার মধ্যেই দুর্নীতির বীজ লুকিয়ে আছে। ব্যক্তি এখানে দুর্নীতির প্রতীক মাত্র। অন্না হজারেরা কিন্তু এই সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না!


এই যে গণধর্ষণকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে, এটা ভাল ব্যাপার। কিন্তু, ধর্ষণটাই তো একমাত্র কথা নয়। আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, তার মানসিকতাই পারিবারিক হিংসার জন্ম দেয়। পণপ্রথা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সবই নারীকেন্দ্রিক। এই সব ক’টি বিষয়কে একত্রিত আন্দোলন চাই। কাজটা সহজ নয়, তবে করা যায়। এই আন্দোলনকে রাজনীতিকরণ থেকে রক্ষা করতে হবে।


কাজটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নারী আন্দোলনের কর্মীদের, মানবাধিকার কর্মীদের। তাঁদের প্রতিবাদের একটা ধারাবাহিকতা আছে। এমনকী, পরিবেশ আন্দোলনেরও একটা ধারাবাহিকতা আছে।


অবশ্যই। নারীবাদীরা সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলনের একটা ধারাবাহিকতা দরকার। যেমন উত্তরপ্রদেশে ‘কমলা গ্যাং’! কমলা দেবী নামে এক মহিলার নেতৃত্বে নারী বাহিনী ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত পুরুষদের লাঠি হাতে শায়েস্তা করে বেড়াচ্ছে। এটা স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ।


সেটাই বলতে চাইছি। আন্দোলনকে ছড়াতে হবে নানা স্তরে। যেমন, বিভিন্ন ‘খাপ পঞ্চায়েত’ এলাকাতেও এই নাগরিক আন্দোলন সংঘটিত করতে হবে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সুশাসনের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
ভিন্ন ঘরানা
প্রেসিডেন্ট মুর্সির বিরুদ্ধে তহরির স্কোয়্যারের প্রতিবাদ, কায়রো। একই দিনে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে
ইন্ডিয়া গেট-এ মোমবাতি-সমাবেশ, দিল্লি। দিনটি, ১৮ ডিসেম্বর ২০১২। ছবি: এ এফ পি, পি টি আই

খুবই ভাল হত। এঁরা এক মঞ্চে এলে জন্ম দিতে পারেন এক বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের। আলোচনার মাধ্যমে একটা ‘আদর্শগত পরিপ্রেক্ষিত’ তৈরি হতে পারে। তবে, ‘আইকন’ দিয়েই সব কিছু হয় না। সে তো মহাত্মা গাঁধীও একটা পরিপ্রেক্ষিত থেকে আন্দোলন চালিয়েছেন। একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিপ্রেক্ষিত জরুরি।


আমি গাঁধীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতের কথা বলতে চাইছি। এই প্রসঙ্গেই আমি বিকল্প বাম রাজনীতির কথাও বলছি। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণ সরব। এখানে রাজনীতি-বিমুখতার বিষয় এসে যাচ্ছে। একটা রাজনৈতিক আদর্শ ও নীতির প্রশ্ন উঠছে। একটা বিকল্প বামপন্থী রাজনীতির প্রয়োজন।


মাওবাদীরাই একমাত্র বিকল্প নন। আমাদের প্রয়োজন, দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে গণ আন্দোলন। মাওবাদীরা ছোট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। গণ-আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে তাঁরা অপ্রাসঙ্গিক নন। বিকল্প আন্দোলন হচ্ছে চিরাচরিত বাম আন্দোলনের বাইরে সুসংহত আন্দোলন। এর মধ্যে পস্কো-বিরোধী আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, ‘জল আন্দোলন’ বা কুড়ানকুলামে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতার মতো সামাজিক আন্দোলনও রয়েছে।


হ্যাঁ। তবে ওঁদের সঙ্গে তফাতটা হল, ওঁরা শুধু চান, আদিবাসীদের মধ্যে কৃষিবিপ্লব। বাকি আন্দোলন সম্পর্কে তাঁরা উদাসীন। মাওবাদীদের আন্দোলন সীমাবদ্ধ। তবে প্রান্তিক এলাকায় নানা কাজ মাওবাদীরা করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের চাপে ফরেস্ট বিল হয়েছে। মাওবাদীরা অনুঘটকের কাজ করেছেন।


ঠিকই তো। যত এ ধরনের আন্দোলন সংঘটিত হবে, ততই সরকারের উপরে চাপ বাড়বে। একেবারে তৃণমূল স্তরে সেই আন্দোলনকে পৌঁছে দিতে হবে। সরকার দমন-পীড়ন করবে। তাতে কিছু যাবে-আসবে না। ফরেস্ট বিলের মতো এক একটা আইন পাশ হলে তার সুযোগ নেওয়ার সুবিধা হবে।


এ ভাবে গণ আন্দোলন দমন করাটাই তো ভুল পদক্ষেপ! সহানুভূতির সঙ্গে এই আন্দোলনকে দেখা উচিত। বুঝতে হবে, কোন ঘটনায় এমন আন্দোলন হচ্ছে। এই রাষ্ট্র চূড়ান্ত অমানবিক!


বিচ্ছিন্ন ভাবে এ ধরনের আন্দোলন গোটা সিস্টেমের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তবে এ ধরনের আন্দোলন থেকে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে। সেটা হলে আমাদের লাভ।


চিরাচরিত রাজনীতি যাতে তাঁদের গিলে না খায়, সে দিকেও আমাদের সতর্ক নজর রাখতে হবে। আর একটা কথা বলতে চাই। বছর পঞ্চাশ আগেও শিক্ষা-স্বাস্থ্যে রাষ্ট্রের একটা বড় ভূমিকা ছিল। একটা ডেমোক্র্যাটিক স্পেস ছিল। এখন আর সেটা নেই। সব কিছুরই বেসরকারিকরণ হচ্ছে। এখন আর সাধারণ মানুষের কথা বলার স্পেস নেই। এটা গণতন্ত্রেরই ক্ষতি করছে। একটা সামগ্রিক সমাজতান্ত্রিক কাঠামো প্রয়োজন।


না। একুশ শতকের সমাজতন্ত্রে মার্কস বা মাওকে উদ্ধৃত করে কথা বলাটা বোকামি। এখনকার পক্ষে প্রাসঙ্গিক সমাজতন্ত্রের কথাই বলতে হবে।

সাক্ষাৎকার: তাপস সিংহ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.