|
|
|
|
সনিয়া-প্রণবের উৎসাহে ভোলবদল রাইসিনার
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
দু’দিন বাদেই জয়পুরে চিন্তন শিবির বসবে কংগ্রেসের। কিন্তু সেটাই কি এক মাত্র চিন্তা সনিয়া গাঁধীর? বরং রাষ্ট্রপতি ভবনের অন্দরমহল ঘুরে আসুন, বুঝতে পারবেন, যিনি রাঁধেন তিনি গৃহসজ্জাও করান।
এত দিন দু’মাথা এক করে যে সনিয়া-প্রণব মূলত সরকার ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতেন, তাঁদের উদ্যোগেই রাতারাতি বদলে গিয়েছে রাইসিনা প্রাসাদের অন্দরসাজ। সংস্কার হয়েছে পাঠাগারের। বিদেশি অতিথিদের জন্য উত্তর ও দক্ষিণের বৈঠকখানার সাজগোজ বদলে গিয়েছে। এমনকী, রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলও ফিরে পেতে চলেছে অতীত গৌরব। কে বলতে পারে, গত প্রায় ২৫ বছরের ধারা বদলে দিয়ে অশোকা হলের পরিবর্তে ২০১৪ সালে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ এই দরবার হলেই হবে না!
রাইসিনায় এমন পরিবর্তন অবশ্য মোটেই আচমকা নয়। রাষ্ট্রপতির সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এর নেপথ্যেও একটা টানটান গল্প রয়েছে। বস্তুত যার সূত্রপাত রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত হওয়ার আগেই। দশ জনপথে কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে সে সময় এক ঘরোয়া আড্ডায় সনিয়া বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপতি ভবন সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই নানা খারাপ খবর পাচ্ছি। এক সময় শাশুড়ির কাছ থেকে শুনেছি, ওখানে প্রচুর বহুমূল্য আসবার ছিল। সে সবের নাকি কোনও হদিশ নেই! আপনি রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছে সে সব ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। সেই সঙ্গে অন্দরমহলের সংস্কারও করা যায় কিনা দেখুন।” |
|
অতীতে রাষ্ট্রপতি ভবনের শিল্পকার্য ও অন্দরসাজের ব্যাপারে যত্নশীল ছিলেন ইন্দিরা গাঁধীও। এমনকী বিদেশি অতিথি-অভ্যাগতরা রাষ্ট্রপতি ভবনে এলে তিনি নিজে রাইসিনায় গিয়ে অন্দরসাজের তদারকি করতেন। ইন্দিরা গাঁধীর সেই আগ্রহ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অজানা ছিল না। বরং শাশুড়ির পরে বউমার এই আগ্রহে উৎসাহী হয়ে ওঠেন প্রণববাবুও। এবং তাঁর নির্দেশেই সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যায় রাইসিনার প্রাসাদে। এক সময়ে যে প্রখ্যাত ইন্টিরিয়র ডেকরেটর সুনীতা কোহলিকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অন্দরসাজ বদল করেছিলেন রাজীব গাঁধী, সনিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে সংস্কারের কাজে তাঁকে নিয়োগ করে রাষ্ট্রপতি সচিবালয়। সূত্রের খবর, সংস্কারের কাজ চলাকালীন সুনীতার সঙ্গে বেশ কয়েক বার আলোচনা করেন সনিয়াও।
পেশাদার সংস্থা নিয়োগ করে সেই সংস্কারের কাজ অবশ্য এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে বাইরের মহলের কাজ শেষ হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি তা ঘুরে দেখেছেন সনিয়াও। তার পর সংস্কারের ভূয়সী প্রশংসা করে গত কাল তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে।
কিন্তু কী পরিবর্তন হয়েছে রাইসিনায়?
রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের কর্তারা সোমবার সেটাই ঘুরিয়ে দেখান সাংবাদিকদের। প্রথমেই সংস্কার করা হয়েছে দরবার হলের। ইন্ডিয়া গেট থেকে তাকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের যে মূল গম্বুজটি দেখা যায়, তার নীচেই রয়েছে এই দরবার হল। জওহরলাল নেহরু এখানেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন। অথচ সংস্কারের অভাবে গত প্রায় ২৫ বছর ধরে দরবার হলের বিশেষ ব্যবহারই ছিল না! কেন না এই হলে শব্দের এমন প্রতিধ্বনি হয় যে, কোনও অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছিল না। দীর্ঘদিনের অব্যবহারে যেমন ছাদে মাকড়সার ঝুল পড়েছিল, তেমনই অবহেলায় মেঝের মার্বেলও মলিন হয়ে পড়েছিল। সংস্কারের পর সেই দরবার হল তার পুরোনো চেহারা ফিরে পেয়েছে। মূল হলের মাঝামাঝি বসানো হয়েছে একটি পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি। আর তার সামনে রাষ্ট্রপতির
জন্য রাখা হয়েছে একটি সোনালি চেয়ার। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ ব্যবহার করতেন এই চেয়ারটি। অথচ ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন সেই চেয়ারটি এত দিন পড়ে ছিল রাষ্ট্রপতি ভবনের তোষাখানায়।
সংস্কার করা হয়েছে পাঠাগারেরও। যেখানে রাখা হয়েছে উনবিংশ শতাব্দী থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বই। যেগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। রাখা হয়েছে ব্রিটিশ জমানার ভাইসরয়দের নানা নথিপত্র। সংস্কারের পর রাষ্ট্রপতি ভবনের ওই পাঠাগার ঘুরে দেখেছেন প্রণববাবুও। তার পর সহাস্যে বলেছেন, “যে সব ঐতিহাসিক বই এখানে রয়েছে, তাতে কিছু না করে স্রেফ বই পড়েই পাঁচ বছর কাটিয়ে দেওয়া যায়।”
এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ভবনে বিদেশি অতিথিদের জন্য দু’টি বৈঠকখানা, অশোক হল এবং ব্যাঙ্কোয়েট হলের অন্দরসজ্জাও বদলে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভবনের মূল্যবান যে সব আসবাব আমলা বা কর্মচারীরা নিয়ে গিয়েছিলেন, সে সব কিছু কিছু ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেগুলিও রাখা হয়েছে সাজিয়ে।
সুখবর হল, এই সব কিছু এখন আর সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকবে না। বরং রাষ্ট্রপতি চাইছেন, রাষ্ট্রপতি ভবন ও তাকে ঘিরে ইতিহাস জানুক দেশের মানুষ। তাই সংস্কারের পর দর্শনার্থীদের ঘুরে দেখার জন্যও খুলে দেওয়া হয়েছে রাইসিনার এই বাইরের মহল। |
|
|
|
|
|