মমতা চলে যেতেই ফাঁকা হোটেল
লগ্নি নয়, হৃদয়ের পরশেই খুশি পার্থ
স্টেপ ওয়ান— কাটিং অফ ব্যাম্বু।
স্টেপ টু— স্লাইসিং অফ ব্যাম্বু।
স্টেপ থ্রি— রোলিং অফ আগরবাতি।
ওয়েস্টবেঙ্গল: দ্য নিউ ডেস্টিনেশন অফ আগরবাতি ইন্ডাস্ট্রি।
বেঙ্গল লিডসের হল ডি-এর প্রথম স্টল। ঢুকলেই ধূপধুনোর সুগন্ধে ম ম করছে। মঙ্গলবার ঠিক এর পাশের ঘরেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে গিয়েছেন রাজ্যের বার্ষিক লগ্নি আহ্বানের মহাসভা।
আগরবাতিতে শেষ নয়। শিল্পমেলায় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রকাশন কেন্দ্র, অদ্বৈত আশ্রমেরও দুটো স্টল। অধ্যাত্ম্যবাদেও কি বিনিয়োগ চাইছে রাজ্য? স্বামী নরসিংহানন্দ বললেন, “কী করব! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আহ্বান করেছেন।” এখানে আসার পর যুব দফতরের অফিসাররা ওঁদের বলেন, “আমাদের স্টলটা আপনারা নিয়ে নিন।” তার পর শিক্ষা দফতরের লোকজন এসে বলল, “আমাদের সর্বশিক্ষার স্টল করতে হবে, কিন্তু কিছুই নেই। আপনি নেবেন?” স্বামীজির কথায়, “৫০০ বগর্ফুটের ৫ লক্ষ টাকা দামের স্টল আমাদের
দিয়ে চলে গেল। আমি স্বামী বিবেকানন্দের বেশ কিছু ছবি এনেছিলাম। লাগিয়ে দিলাম।” দু’দিনে ১০ হাজার টাকার বেশি বই বিক্রি করে ফেলেছে অদ্বৈত আশ্রম।
মাঝে মাঝেই তাই গুলিয়ে যাচ্ছে, এটা শিল্পমেলাই তো? নাগরদোলাটাই যা নেই। তা বাদে বাউল গান, ছৌ নাচ, কীর্তনের আসর, আচার-রুটি-ঘুগনি সবই হাজির। স্যুট-টাই পরা কিছু লোকজন, বণিকসভার বদান্যতায় কলকাতা থেকে আসা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সুবেশারা ছাড়া বাকি সব আর পাঁচটা গ্রামীণ মেলার মতোই।
উন্নয়নের ফানুস আর গানের আসর। ছবি: সুদীপ আচার্য
প্রাপ্তির ঝুলিও সে কথাই বলছে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মেলার সাফল্যের ফিরিস্তি দিচ্ছেন, “প্রাণের স্পন্দন, হৃদয়ের স্পর্শ। স্কুল পড়ুয়া থেকে স্থানীয় অধিবাসীদের উৎসাহ।” শিল্পপতিরা না থাকুন, শিল্পমেলা নাচগান নিয়েই খুশি। তারই মধ্যে দফায় দফায় সেমিনার। ‘এটা হলে ভাল হত’, ‘অমুকটা যদি করা যেত’, ‘তমুকটা নিয়ে কী ভাবছেন’ জাতীয় কথা। শিল্পপতিদের নিজেদের মধ্যে যাকে বলে বিজনেস টু বিজনেস (বি টু বি) আলোচনা, তার কোনও ব্যবস্থা নেই।
রাশিয়ার হব (HOBHK) পিএলসি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি অ্যালেসেই বুলিনিন দু’দিন ধরে পুরো মেলা চষে বেড়াচ্ছেন। শিল্পমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, “পুতিনের ডেপুটি। বড় লগ্নি করতে চান।” পরিকাঠামো বিষয়ক সেমিনারে বলতে আসা সরকারি কর্তা জানালেন, বুলিনিন রাজ্যে গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, বুঝতে পারছেন না। ওই কর্তা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, “আপনি শিল্পসচিব চঞ্চলমল বাচোয়াতের সঙ্গে কথা বলুন।” বুলিনিন বলছেন, দু’দিনে এই নামটা তিনি বার কয়েক শুনেছেন। কিন্তু ওই ব্যক্তিকে ধরতে পারেননি। এ দিন বিকেলে বুলিনিনের কাছে ফের জানতে চাই, “কথা হল বাচোয়াতের সঙ্গে?” তাঁর জবাব, “না হয়নি। আশা করছি, কালকের মধ্যে হয়ে যাবে। ঠিক হয়ে যাবে।” তাঁর দোভাষী সঙ্গী তাঁকে আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা করে
যাচ্ছেন, “বাচোয়াত বড় ব্যাপার। কথা ঠিক হবে।”
দর্শকাসনে এঁরাই। শিল্প সম্মেলন চলছে। —নিজস্ব চিত্র
এ বারের আসরে বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা সে ভাবে অংশ নেননি। আমেরিকা, ব্রিটেন আর জাপানের দূতাবাস স্রেফ প্রতিনিধি পাঠিয়েই দায় সেরেছে। চিন আর জার্মানির কনসাল জেনারেল অবশ্য ছিলেন। চিনের কনসাল জেনারেল ঝাং লিঝং মঙ্গলবারই বলেছিলেন, “গত এক বছরে কলকাতার সৌন্দর্যায়ন ছাড়া আর নতুন কিছু চোখে পড়ছে না। চিনা বিনিয়োগকারীদের এখানে আসতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, লগ্নি আসে নির্দিষ্ট নীতির উপর ভর করে। সেটা স্পষ্ট হতে হবে।”
শিল্পমেলায় কী স্পষ্ট হল? বোধনেই বিসর্জনের বাজনা। শুরুর দিনে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তাই মন্ত্রী-আমলাদের ভিড় ছিল। এ দিন সে সব নেই। রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, বেঙ্গল লিডস উপলক্ষে হলদিয়ার সমস্ত বড় হোটেলের সব ঘর ভর্তি। মঙ্গলবার ৩৬১টি ঘর ভর্তি ছিলও বটে। বুধবার কিন্তু তার ৫০-৬০ শতাংশই খালি। যে ভিড়টা আছে, সেটা সব সময়ই থাকে। আজ বেলদার জনসভায় বেরনোর আগে পর্যন্ত মমতা অবশ্য হলদিয়া ভবনে ছিলেন।
শিল্প সম্মেলনের নতুন অতিথি। —নিজস্ব চিত্র
মেলায় একা কুম্ভ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্টি-হপারদের মতো করে সেমিনার হপিং করেছেন। স্টলে স্টলেও তিনি (৭২টি স্টলের মধ্যে ৩৩টিই বিভিন্ন সরকারি দফতরের)। মেলার সহযোগী আয়োজক হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীর দেখা মেলেনি সারা দিনে। বেলদার সভা সেরে রাত সাড়ে আটটার পরে মেলা-মাঠে এক বার এলেন। তখন ভাঙা হাট। এ সব নিয়ে অবশ্য মন্তব্যে নারাজ শিল্পমন্ত্রী। তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, “আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি।”
আমলারাও নিয়ম মেনে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন। সেমিনারে মোট ৫৬ জন বক্তার মধ্যে ২১ জনই আমলা। তাঁরা নিয়ম করে সেমিনারের ঠিক আগে এসেছেন, বক্তৃতা শেষ করেই কলকাতায় ফেরত গিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করছেন, সব ক’টি সেমিনারেই উপচে পড়েছিল ভিড়। কোথাও কোথাও বাড়তি চেয়ারও আনতে হয়েছে। প্রশাসনের একাংশই বলছেন, এ বার দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতির দিকটায় আলাদা করে জোর দেওয়া হয়েছিল। গত বার মিলনমেলায় শ্রোতার অভাবে সভা শুরু করতে না-পারায় চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে। যেখানে মূল বক্তা ছিলেন, জেনারেল মোটরস-এর কর্তা ক্রিস্টোফার বার্ড। সেই দশা যাতে আর না হয়, তার জন্যই এ বার রয়েছে বাড়তি সতর্কতা!
ফলাফল? আসন ভরাতে ডাকা হয়েছিল আশপাশের স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের। আর যে সব বণিকসভার উপর সভার দায়িত্ব বর্তেছিল, তাদের প্রতিনিধিরা ছিলেন ভিড় করে। আগরবাতি কারখানার মালিক শিবশঙ্কর পাল কিন্তু দমবার নন। পার্থবাবুকে ধরে তাঁর আর্জি, “স্যার, আগরবাতির দিকে একটু তাকান।”
শিল্পমন্ত্রী আশ্বাস দিলেন, “আপনি কাল মুখ্যমন্ত্রীকেই তো বললেন!”
জানতে চাই, “পালবাবু আপনার কারখানাটা কোথায়?” জবাব আসে, “সিঙ্গুরের গোবিন্দনগর চেনেন?”
সিঙ্গুরের শিল্প মানে এখন তবে আগরবাতিই। আশ্চর্য কী যে, টাটা স্টিলের স্টলে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী লিখে এসেছেন, “স্মল ইজ বিউটিফুল!” ন্যানো-র বিজ্ঞাপনী স্লোগানও ওটাই ছিল যদিও!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.