সকাল আটটা হবে। দিনের শুরুতে ব্রিটেনের রাজধানী তখন পুরোদমে ব্যস্ত। আট বছরের মেয়ে টিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন শ্যারন মুর। অমন একটা দৃশ্য দেখে আর এক মুহূর্ত নষ্ট করেননি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন পুলিশকে। পরে তাঁর মুখেই শোনা গেল গোটা ঘটনাটা “আওয়াজটা হতেই ওপরের দিকে তাকালাম। তখনই প্রথম হেলিকপ্টারের পাখার শব্দ কানে এল। এক মিনিট ঠিকঠাক ওড়ার পরেই কেমন যেন থরথর করে কাঁপতে শুরু করল হেলিকপ্টারটা। একটা নির্মীয়মাণ ৫১ তলা আবাসনের ছাদে রাখা ক্রেনটায় গিয়ে সোজা ধাক্কা মারল।”
এর পরের দৃশ্য কিন্তু আরও ভয়াবহ। তেমনই বক্তব্য শ্যারনের। বললেন, “পাক খেতে খেতে প্রায় সাতশো ফুট নীচে শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় আছড়ে পড়ল হেলিকপ্টারটা। ভক্সহলের দিকে যাচ্ছিল একটা গাড়ি। দু’য়ের সংঘর্ষ, আর তার পরেই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর বিস্ফোরণ।” কয়েক হাত দূরে ভক্সহল টিউব স্টেশন তখন গমগম করছে। দোকান-হাট, পাশেই ফুলের বাজারে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। বিস্ফোরণের শব্দে থমকে গেল সে সব। |
মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ল আশপাশের গাড়িগুলোতে। পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত পাইলট-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। জ্বলন্ত গাড়ি থেকে এক জনকে উদ্ধার করে দমকল। আহতের সংখ্যা ১৩। এর মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এক এগ্জিকিউটিভকে আনতে রেডহিল থেকে হার্টফোর্ডশায়ারের এলসট্রিতে যাচ্ছিল হেলিকপ্টারটা। কপ্টারে শুধু পাইলটই ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এ দিন বেশ খারাপ ছিল আবহাওয়া। একেবারে নীচ দিয়ে মেঘ ভেসে যাচ্ছিল। রাস্তা থেকেও বাড়িটার মাথায় ক্রেন নজরে পড়েনি, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরাই বললেন, “পাইলটও বোধহয় দেখতে পাননি।” আর তাতেই বিপত্তি।
ব্যাটারসি-র লন্ডন হেলিপোর্টের মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, খারাপ আবহাওয়ার জন্য তিনি বিমানচালককে আগেই ওই পথটা এড়াতে বলেছিলেন। স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের বক্তব্য, নীচ দিয়ে মেঘ ভেসে গেলেও কুয়াশা বেশি ছিল না। একই দাবি লন্ডন বিমানবন্দরেরও। তাদের বক্তব্য, ৭০০ মিটার পর্যন্ত দূরের জিনিস দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল এ দিন। হেলিকপ্টারটাকে সাহায্য-ও করা হয়েছিল, কিন্তু দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, জানায় ব্রিটেনের ট্রাফিক কন্ট্রোল ‘ন্যাটস’। এর পরেই নিরুদ্দেশ কপ্টারের খোঁজে টেমসে বোট নামায় লন্ডন হেলিপোর্ট। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনার খবর পৌঁছে যায় তাদের কাছে।
ভক্সহল সেতুর কাছে গোটা রাস্তাটা তখন দাউদাউ করে জ্বলছে। ধোঁয়া আর আগুনের আঁচে পাশের আবাসনটাও যেন ঝলসে গিয়েছে। “হাঁটতে হাঁটতে রাস্তাটা প্রায় পেরিয়ে এসেছি”, বললেন ক্রেগ ডান। “হঠাৎই বিস্ফোরণ। টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল একটা ক্রেন। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটে গাড়ি জ্বলছে। প্রাণ বাঁচাতে লোকজন পাগলের মতো চিৎকার করছে।” একই অভিজ্ঞতা মার্ক করেল-এরও। বিস্ফোরণের আওয়াজ আর তার পরেই চারদিকে তাকিয়ে দেখেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙাচোরা অংশ, পুড়ে যাওয়া এটা ওটা। বললেন, “ভাঙা টুকরোগুলো টপকে টপকে সাইকেলটা চালাতে শুরু করি। ভেবেছিলাম, পাশের বাড়িটা বোধহয় এ বার মাথার উপর ভেঙে পড়বে। মৃত্যু আসন্ন।”
তবে এ দিনের ঘটনা যে কোনও ভাবেই সন্ত্রাসহানা নয়, সে বিষয়ে নিশ্চিত ব্রিটিশ পুলিশ। সহমত সন্ত্রাসদমন শাখাও। |