আবেগের বিস্ফোরণ বাগানে
নির্বাসনের রক্তচক্ষু সরিয়ে আই লিগ সরণিতে ফিরে আসার দিনেসবুজ-মেরুন তাঁবু জুড়ে রাজ করল আবেগ-হাসি-কান্নার টুকরো ছবি।
সকালে যখন ফেডারেশনের কার্যকরী সমিতির বৈঠকে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন টুটু-অঞ্জনদের ‘গ্যাং অফ ফোর’ তখন অনুশীলনে ব্যস্ত ওডাফা-নবিরা। উধাও টেনশন। সঙ্গে হাসাহাসি। মস্করা। অনুশীলনের শুরুতেই করিম-টোলগের মাঝে গিয়ে দু’হাত তুলে এক প্রস্থ নেচে এলেন ওডাফা।
সকাল দশটা পঁয়তাল্লিশ। অনুশীলন শেষ। তাঁবু ছাড়ছেন কোচ করিম বেঞ্চারিফা। বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির প্রশ্ন, “টেনশন হচ্ছে?” শুনে মোহন কোচের পাল্টা জিজ্ঞাসা, “কার, আপনার?” ফুটছিলেন টোলগেরাও।
বেলা একটা পঞ্চাশ। ঠিক তখনই তাঁবুতে এল খবরটা। নির্বাসন হচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে আবেগের বিস্ফোরণ। কেউ কেঁদে ফেললেন। সঙ্গে স্লোগান, “মাঠ কাঁপিয়ে মোহনবাগান, ভারত জুড়ে মোহনবাগান।” উত্তরপাড়ায় সুব্রত সিংহ রায়ও বললেন, “আকাশ জুড়ে শঙ্খনাদ, শত্রু শিবিরে আর্তনাদ, আমরা গাইছি জয়গান, আসছে ফিরে মোহনবাগান।”
বিদেশি ব্যাঙ্কের কর্মী শ্যামবাজারের অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ক্লাব লনে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছিলেন। সম্পর্কে সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি। বলছিলেন, “মন দিয়ে অফিসে কাজ করতে পারছিলাম না। আজ থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
যার গালে সমর্থকের ইঁট লেগে এই পঁয়ত্রিশ দিনের টানাপোড়েন, সেই রহিম নবি হাওড়ার বাড়িতে রাজহাঁসের সঙ্গে খেলার ফাঁকে ফোনে বললেন, “পায়ে ফুটবল রইল। এ বার আমাদের সব ম্যাচ জিততে হবে।” তাঁবুতে তখন মিষ্টি বিতরণ, অকাল হোলি চলছে পুরোদমে। আর নয় ডিসেম্বরের আর এক মুখ্য চরিত্র ওডাফা ব্যস্ত সাউথ সিটিতে স্ত্রী অ্যাঞ্জেল এবং চিমাকে নিয়ে বাজার করতে।”
তাঁবুর আবেগ ততক্ষণে হাজির নিউ আলিপুরে বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ধরা গলায় বিরাশি বছরের প্রাক্তন অলিম্পিয়ান বললেন, “মোহনবাগানের ঐতিহ্য জিতল।” বাগানের আর এক ঘরের ছেলে সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “খুন করলেই কি ফাঁসি হয়? ফেডারেশন ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

ধিক্কৃত হল ফেডারেশনের ‘খামখেয়ালি’ সিদ্ধান্ত

নির্বাসন তুলে নেওয়াটা শকিং। শাস্তি কমানোর আবেদনে আমিও সই করেছিলাম। কিন্তু শাস্তিটা যে পুরোই তুলে দেওয়া হবে, ভাবিনি। সমর্থক ও প্লেয়ারদের পক্ষে অবশ্য এটা ভালই হল। কিন্তু যেখানে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে, সেখানে আইনের তোয়াক্কা না করে শুধু ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত কী করে নেওয়া হল, বুঝতে পারছি না। এ যেন মোটা টাকা জরিমানা নিয়ে খুনী আসামির হাজতবাস একেবারে মকুব করে দেওয়া!

টাকার কী মহিমা! আমাদের সময় ভাবতেই পারতাম না। দু’কোটি টাকার লোভে ফেডারেশন নিজেদের বিক্রি করে দিল? ওরা জানে না, ওরা যা করল তার খেসারত পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে হবে। ভয় লাগছে, যে ফুটবল আমাকে হাবিব বানিয়েছে, ভারত থেকে সেই ফুটবল না উঠে যায়!

ফেডারেশন বলে আদৌ কিছু আছে নাকি? যারা আমাদের মতো ফুটবলারদের সম্মান করতে পারে না, তাদের থেকে আর কী আশা করব! এখন তো বলতেও লজ্জা লাগে যে, কোনও দিন ফুটবল খেলেছি।

শাস্তি উঠল ঠিকই, কিন্তু তাতে মোহনবাগানের গ্লানি বিশেষ কমল কী? যে কর্তাদের নির্বাসন হল, ওরাই তো আবার এক বছর পর ক্লাবটা চালাবে। আরও বারোটা বাজাবে। ওদের সমস্যা হল, এখানে বড় বড় কথা বলবে। আর দিল্লি গিয়ে ফেডারেশন কর্তাদের হাতে-পায়ে ধরবে। সেটা তো আগে করলেই পারত। এই প্রহসনের তা হলে দরকার হত না। একটা কথা জেনে রাখুন। এই কর্তারা যত দিন থাকবে, মোহনবাগানের কিছু হবে না। আর দু’কোটি টাকা জরিমানাটা কোনও ব্যাপারই নয়। কর্তাদের নয়, ওটা তো স্পনসরদের পকেট থেকে যাবে।

ফেডারশন একটা অদ্ভুত জিনিস। কখন যে মৃত্যুদণ্ড দেয়, আর কখন যে মাথায় তোলে, ঠিক-ঠিকানা নেই। হাস্যকর। মোহনবাগান কর্তারা বুঝে গিয়েছে, আমরা দুধ দিই। আর আমাদের দুধ খেয়েই ফেডারেশন বেঁচে আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ফেডারেশনের থেকে নিরপেক্ষতা আশা করব কী করে? সিদ্ধান্তটা বড় ম্যাচের পরের দিন জানিয়ে দিলেই তো হত। এত নাটকের কী মানে?

ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগান অনেককে দিশা দেখিয়েছে। এ বার অন্য একটা নতুন দিশা দেখাল। ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তে অন্য ক্লাবগুলোর সাহস বেড়ে যাবে। পকেটে টাকা থাকলেই ফেডারেশনের উপর ছড়ি ঘোরানো যাবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.