নবগ্রামের কংগ্রেস কর্মী শফিকুল শেখের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠল। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে গত ৭ জানুয়ারি বহরমপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যান ওই কংগ্রেস কর্মী। ওই ঘটনার দু’দিন পরেই পরিবারের তরফে জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক দ্বিতীয় আদালত অসিত দে’র এজলাসে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়। আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “জেলা জজ আদালতে ওই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে। পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই শফিকুলের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথাও ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। বিচারক অসিত দে ওই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। মামলার পরবর্তী দিন রয়েছে আগামী ১৮ জানুয়ারি।”
নবগ্রাম থানার বিলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শফিকুলকে তাঁর বাড়ি থেকেই পুলিশ গত ৭ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে। সেই সঙ্গে জার্মান শেখ ও ইসমাইল শেখ নামে আরও দুই কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে হেরোইন পাচারের পাশাপাশি খুনের মামলাও দায়ের করে পুলিশ।” শফিকুলের বড় মেয়ে নার্গিস তাঞ্জিমা বলেন, “গ্রামবাসীদের সামনে পুলিশ মারতে মারতে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। পরের দিন ৮ ডিসেম্বর নবগ্রাম থানায় গেলে বাবার খোঁজ পাইনি। জানতে পারি ভগবানগোলা থানায় নিয়ে গিয়ে রেখেছে। পরে পুলিশ লালবাগ আদালতে বাবাকে হাজির করে।” লালবাগ এসিজেএম ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কিন্তু গ্রেফতারের পরে নবগ্রামে থানায় না রেখে ভগবানগোলা থানায় শফিকুলকে যাওয়া হল কেন? প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। নার্গিসের অভিযোগ, “পুলিশ হেফাজতে রেখে তাঁকে এমন মারধর করা হয় যে তাঁর স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতেও অসুবিধে হচ্ছিল। তিনি ঠিক মতো দাঁড়িয়েও থাকতে পারছিলেন না। পুলিশ সুপার ও অন্য পুলিশ অফিসাররা ভগবানগোলা থানায় ৫ ঘন্টা ধরে তাঁর উপরে শারীরিক অত্যাচার চালায়। পুলিশের মারে সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে রয়েছে বলেও বাবা আমাদের জানিয়েছিলেন।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই নতুন করে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস কর্মীরা পুলিশের সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। তার সাম্প্রতিক প্রমাণ কংগ্রেস কর্মী শফিকুল। বিনা কারণে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে মুর্শিদাবাদের ৫টি থানায় নিয়ে গিয়ে তার উপরে বীভৎস অত্যাচার চালানো হয়। পরে আদালত বহরমপুরের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও পুলিশের অত্যাচারের ধকল সহ্য করতে না পেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যান তিনি।”
অধীরবাবুর দাবি, “তৃণমূলের আমলে গত এক বছরে মুর্শিদাবাদে ১৭১ জন খুন হয়েছেন। পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে কলকাতায় আমিরুল আত্মহত্যা করছে, বহরমপুরে শফিকুলের মৃত্যু হচ্ছে।” তিনি বলেন, “পুলিশ সুপারের নির্দেশে বেছে বেছে কংগ্রেস কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি জমায়েত করে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “মৃতদেহ শুইয়ে রাখা হলে পিঠে অনেক সময়ে কালশিটের দাগ দেখা যায়। আমি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কী রয়েছে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে আমার প্রশ্ন, গ্রেফতারের পরে ওই ব্যক্তিকে তিন বার আদালতে পাঠানো হলে তখন তিনি বা তাঁর আইনজীবী বিচারকের সামনে পুলিশের নির্যাতনের কোনও কথা বলেননি কেন? এছাড়াও শুনেছি ওই ব্যক্তি হৃদরোগ-সহ বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন।” |