এক শ্রেণীর বনকর্মীদের মদতেই ডুয়ার্সে রমরমিয়ে চোরাই করাত কল চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযান হলেও ধরা পড়ছে না কাঠ মাফিয়ারা। অভিযোগ, কোথাও চা বাগানের মাঝে, কোথাও গ্রামে বাঁশঝাড়ের পাশে মাটি গর্ত করে নিচে রমরমিয়ে চলছে করাত কলগুলি। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, “কাঠ মাফিয়ারা জঙ্গল থেকে চোরাই কাঠ এনে ওই করাত কলগুলিতে হাত করাতের মাধ্যমে গোপনে চেরাই করে তা বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছে। বন দফতরে একাংশ কর্মী এতে জড়িত থাকায় খবর দিয়েই লাভ হয় না। অভিযানেপর আগেই সরে পড়ে কাঠ মাফিয়ারা। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর তা ফের চালু হয়ে যায়।” পরিবেশ প্রেমীদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। তিনি বলেন, “কাঠ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সবসময় রক্ষা হচ্ছে না। এতে বিভিন্ন জায়গায় এখনও মাটির নীচে করাত কলে জঙ্গল থেকে আনা কাঠ কাটার কাজ চলছে।”
তিনি জানিয়েছেন, কাঠ পাচার রুখতে বনকর্মী ও পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে আসা গোপন খবর যাতে ফাঁস না হয় তা রুখতে ফের বৈঠক করা হবে। তাতে পরিবেশ প্রেমীদের থেকেও পরামর্শ নেওয়া হবে।” রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সম্পৎ সিংহ বিস্তও কাঠ চুরি রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “অধিকাংশ বনকর্মী কাঠ চুরি রুখতে পদক্ষেপ নিলেও একশ্রেণীর কর্মী অভিযানের খবর ফাঁস করে দেন। এতেই সমস্যা বাড়ছে।” বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্রে অধিকর্তা রবিন্দ্র পাল সাইনি বলেন, “আধিকারিকদের ২-৩ বছর অন্তর বদলি হলেও বকর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে একই এলাকায় থাকায় এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে।” ডুয়ার্সের কুমারগ্রাম, হাতিপোতা, নারারথলি, বাইরাগুড়ি, পাটকাপাড়া, ভাটপাড়া, গাঙ্গুটিয়া, সেন্ট্রাল ডুয়ার্স, ফালাকাটা, মাদারিহাট-সহ ডুয়ার্সের বিস্তীর্ন অঞ্চলে ওই ধরণের করাত কল রয়েছে বলে অভিযোগ পরিবেশ প্রেমীদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাটির নিচে কয়েকফুট গর্ত খুঁড়ে তাতে নেমে হাত করাতগুলি চালানো হয়। এতে শব্দ বাইরে খুব একটা যায় না। এক জায়গায় কাজ করার পর কিছুদিনের মধ্যে আরেক জায়গায় সরে যান ওই দল। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “কাঠমাফিয়ার নিয়মিত টাকা দেন এক শ্রেনীর বন কর্মীদের। তারাই বনদফতরের বিভিন্ন অভিযানের বিষয় ফাঁস করে দেন। কখন জঙ্গলে নজরদারি চলবে তাও জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে জঙ্গলের নিরাপদ এলাকায় গিয়ে কাঠ কাটেন মাফিয়ারা।” ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজফেডারেশনের উত্তরবঙ্গ কমিটির চেয়ারম্যান নবেন্দু কর এবং ফরেস্ট ওয়াচারস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিহির রায় চৌধুরীও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। |