|
|
|
|
কলকাতা নিয়ে গল্প লিখতে চাই
এ শহরের জামাই! চান টলিউড ওঁর গল্প নিয়ে ছবি বানাক। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর পর,
তাঁর বই নিয়ে নতুন ছবি ‘কাই পো ছে’। উত্তেজিত চেতন ভগত! কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
রিলিজ হওয়ার আগে ‘থ্রি ইডিয়টস’ আপনাকে দেখানো হয়নি। তার থেকে শিক্ষা নিয়েই কি নতুন কাজগুলোর স্বত্ব অন্যকে দেওয়ার আগে কোনও শর্ত রাখেন?
ওটা আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমা হওয়ার সময় আমি নতুন ছিলাম। বাস্তবিকই কিছু জানতাম না। সবে কয়েক মাস হয়েছিল ছবিটা বেরিয়েছে। সময় পেরিয়ে গেলে সকলেই তার পুরোনো ভুলের থেকে শিক্ষা নেয়। আমিও নিয়েছি। এমন লোকদেরই বেছেছি যারা শুধু ভাল ফিল্মমেকারই নন, এথিক্যালও।
ঠিক বলিউড ঘরানার গল্প নয় ‘থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ’। আপনার মনে হয়নি এটা বড় পর্দায় দেখাতে অসুবিধা হবে?
আমার মনে হয় আজকাল অনেকেই আছেন যাঁরা ‘নন টিপিক্যাল’ বলিউড ছবি করতে চান। এ কথা ঠিক যে সুপারস্টারদের নিয়ে মশলাদার ছবিগুলো সব সময় ভাল হবেই। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে নতুন ধাঁচের ছবিও আজকাল ভাল করছে। সমালোচকরা পছন্দ করছেন। বক্স অফিসেও ভাল চলছে। ‘থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ’-এর উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে ‘কাই পো ছে’। এটা একটা টিপিক্যাল মশলাদার গল্প নয়। তবে এতে অনেক জনপ্রিয় উপাদান আছে। যেমন- বন্ধুত্ব, ভালবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা, রাজনীতি, ক্রিকেট আর ধর্ম। এই প্রত্যেকটি জিনিস
নিয়েই ভারতীয়রা বেশ উৎসাহী।
তাই আমার মনে হয়, ছবিটি অনেকেরই মন কাড়বে।
খুব বিতর্কিত একটা বিষয় ‘থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ’-এ উঠে এলেও, গল্পটা আপনার অনুরাগীদেরও মন কেড়েছে। বিতর্কিত বিষয় এবং এন্টারটেনমেন্টকে একসঙ্গে মেলালেন কী ভাবে?
এটা সত্যিই খুব কঠিন ছিল। কিন্তু বইটা লিখতে শুরু করে বুঝতে পারি, এটা লিখেই আমি সব থেকে বেশি খুশি হয়েছি। আমার অনুরক্ত পাঠকরা যাতে গুজরাতের একটা গল্প নিয়ে লেখা বই পড়ার সময়ও মজাটা না হারায় সেটার দিকে লক্ষ রেখেছি। তাই ‘থ্রি মিসটেকস...’ বন্ধুত্ব, ভালবাসার
এক মিশেল। আর এখন লিখছি ‘কাই পো ছে’।
এটা কি সত্যি যে পরিচালক অভিষেক কপূরের সঙ্গে ‘ঈশান’(‘থ্রি মিসটেকস’এর প্রধান চরিত্র)-এর অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন? সেটাই কি ওকে পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ?
হ্যাঁ, অভিষেক ট্যালেন্টেড। কিন্তু খুব আবেগপ্রবণ। বন্ধুদের জন্য সব কিছু করতে পারে। ও আগে জীবনে কিছু ভুল করেছে। আবার সেগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগও পেয়েছে। ও অভিনেতা ছিল। কিন্তু ততটা সাফল্য পায়নি। আমার কাছে যে পরিচালক গল্পের সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারে তাকে ছবিটা করতে দেওয়া যেতেই পারে। ওকে বেছে নেওয়ার সেটাই বড় কারণ। |
|
বলা হয়, ইংরেজি উপন্যাস আর তার বলিউডি সংস্করণের মধ্যে প্রচুর তফাত থাকে। আপনার উপন্যাস নিয়ে বলিউডে ছবি তৈরি হলে কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকেন?
ওয়েল, আমি অবশ্যই চাইব আমার উপন্যাস থেকে তৈরি ছবিতে বলিউডি মাল-মশলা থাকুক। কিন্তু আমার
গল্পটা যেন কোথাও হারিয়ে না যায়। জানি কাজটা খুবই কঠিন। তাই আমি এমন একটা টিম খুঁজি যারা ওই ব্যালেন্সটা রাখতে সক্ষম।
এটা কি সত্যি যে বিধু বিনোদ চোপড়ার সঙ্গে ঝগড়াটা মিটিয়ে নিয়েছেন? সময় না পরিণতমনস্কতা? কোনটা সাহায্য করল?
আমার মনে হয়, সময় সব কিছুকে ঠিক করে দেয়। বুদ্ধি পাকার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন ঝুঁকতে শেখে। রাগটাও অনেক কমিয়ে ফেলেছি। জীবনের লক্ষ্য বদলে গেছে। যুবসমাজের জন্য কিছু করতে চাই। তার মধ্যে একটা হল বলিউড। জীবনে আরও অনেক কিছু করার আছে। অতটা আবেগপ্রবণ নই। শুধু পুরোনো রাগ ধরে বসে থাকলে চলবে? ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর পর থেকে জীবনটাই বদলে গেছে। তাই আমার মনে হয়, ক্ষোভ পুষে রাখার
থেকে ওই ঘটনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকাই উচিত।
ফিরে দেখলে কী মনে হয় যে ভাবে বিধু বিনোদ চোপড়ার ওপর রাগারাগি করেছিলেন, সেটা একটা ভুল ছিল?
না না। মিসটেক নয়। আমি এখন অনেক বেশি পরিণত। তবে এটা ঠিক আমি সব সময় নিজের বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিই। এবং সেটা জোর গলায় বলতে ভয়
পাই না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর যুগে আমার মনে হয় না ওরকম কিছু হতে পারে।
এখন গল্পের স্বত্ব বিক্রি করার সময় কোন ভুলগুলো আর করেন না?
যেন আমি ঠিকঠাক সম্মান পাই। গল্পের উপরে যেন আমার নিয়ন্ত্রণ থাকে। আর যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক হয়।
টলিউড কি আপনার গল্পের স্বত্ব কিনতে পারবে?
অবশ্যই। অন্য ভাষায় স্বত্বের দাম আলাদা। তারা আমার প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। কারণ আমি একসঙ্গে সব ভাষার জন্যই চুক্তি করি।
চলচ্চিত্র নির্মাতারা দাবি করে চিত্রনাট্যই সব। কিন্তু এখন ভারতে বক্স অফিসে হিট ছবিগুলোয় তো তেমন কোনও চিত্রনাট্য থাকে না...
আমি বলব চিত্রনাট্য থাকে না তা নয়, তবে আরও ভাল হতে পারে। চিত্রনাট্যই রাজা। তবে তাকে খুব কম সময়ই রাজত্ব করতে দেওয়া হয়। ‘কাই পো ছে’র সাফল্য তাই খুব জরুরি। তবেই চিত্রনাট্য তার হারানো রাজত্ব ফিরে পাবে।
আপনার উপন্যাসগুলো তো প্রায় চিত্রনাট্য। উপন্যাসের প্লট ভাবার সময় কি সিনেমা আপনার মনে প্রভাব ফেলে?
সচেতনভাবে না, কিন্তু অবচেতন মনে হয়তো প্রভাব ফেলে। আমি বলিউডি ছবির সঙ্গেই বেড়ে উঠেছি। তাই বলিউডি গল্প বলার ঢঙ নিশ্চয়ই আমার উপন্যাসে এসে পড়ে।
এখন কি লেখার সময় মাথায় রাখেন আপনার উপন্যাস সিনেমা হতে পারে?
না, আমি যা চাই সেটাই লিখি। আর সেটাই ভাল। গত বছর লিখেছিলাম ‘হোয়াট ইয়াং ইন্ডিয়া ওয়ান্টস্’। ওটা ফিকশন ছিল না। তাই ওটা নিয়ে সিনেমা হওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না।
লেখকই চরিত্রের ভাগ্য নির্ধারণ করে। তাই উপন্যাস লেখার সময় নিজেকে কখনও ঈশ্বর বলে মনে হয়েছে?
না ঈশ্বর নয়, অনেকটা বাবা-মায়ের মতো। আমি চরিত্রদের নিয়ে যা খুশি করতে পারি, কিন্তু তাদের কার্যকলাপের তো একটা মানে থাকতে হবে। তাদেরও একটা জীবন আছে।
এখন তো আপনি ‘কিক’-এর চিত্রনাট্য লিখছেন। মূল গল্প থেকে কতটা পরিবর্তন করেছেন? বলিউডের অন্য চিত্রনাট্যকারদের (কিন্তু উপন্যাস লেখক নন) থেকে কতটা আলাদা চেতন ভগত?
আমি গল্পের মূল বিষয়টা রাখছি। গল্পের প্রধান চরিত্র তার ‘কিক’য়ের জন্যই বাঁচে। সিনেমার লজিক আনতে গল্পের যেটুকু পরিবর্তনের দরকার সেটুকুই শুধু করছি। আমার মনে হয় সিনেমায় যেমন চরিত্র হয়, আমি তার থেকেও বেশি স্বচ্ছ করতে পারছি আমার ছবির চরিত্রদের। |
বই-ফিল্ম |
|
নাম: কাই পো ছে
পটভূমি: গুজরাত
চিত্রনাট্য: চেতন নিজেই লিখলেন
নতুন কী: সুশান্ত রাজপুত চার
মাসের ক্রিকেট ট্রেনিং নিয়েছেন। |
নজর কাড়বেন: সুশান্ত রাজপুত। বড় পর্দায়,
অভিষেক কপূরের ছবিতে এই প্রথম অভিনয় তাঁর।
এর আগে ছোট পর্দায় কাজ করেছেন।
স্টেডিয়ামও নায়ক: গুজরাতের সবরমতী স্টেডিয়ামে
ক্রিকেট ম্যাচ। একেবারে ফিল্মি কায়দায়
তিনিও ছবিতে: ক্রিকেটার অজয়
জাডেজাও পর্দায় ফিরলেন। |
|
সলমন খানকে আপনি নতুন ভাবে কী ভাবে উপস্থাপন করবেন?
সলমন খানের জনপ্রিয়তাটাকে আমি ব্যবহার করতে চাই যুবসমাজকে একটা বার্তা দিতে।
‘চেতন ভগত’ ঘরানা তো ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তরুণদের কাছে। উঠতি লেখকদের লেখায় কী থাকা দরকার যাতে তারা ভিড় জমায় বইয়ের দোকানে?
আমার মতে সবার নিজের ‘ভয়েস’ শোনাটা জরুরি। অনেক লিখতে হবে। তার থেকেও বেশি অবজার্ভ করতে হবে।
আপনি নিজে কী ধরনের বই পড়েন? ছবি দেখার সময় পান?
আমি সব ধরনের ছবি দেখি। ‘লাইফ অব পাই’ থেকে ‘দাবাং ২’। চার্লস ডিকেন্স আমার প্রিয় লেখক।
জনপ্রিয় বই যখন পছন্দ, ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’ পড়েছেন?
জানি ওটার বাজারে কাটতি আছে। সেক্স ডাজ সেল। তবে আমি বইটা পড়িনি।
আপনার সব উপন্যাসের টাইটেলেই একটা সংখ্যা থাকে। আপনার কি সংখ্যা নিয়ে কুসংস্কার আছে?
এটা একদমই আমার ট্রেডমার্ক। কোনও সংস্কারের প্রশ্নই ওঠে না। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং আর ব্যাঙ্কিং। ওগুলো সবই তো সংখ্যা নিয়ে। উপন্যাসের নামেও তাই সংখ্যা চলে আসে।
আপনি হানি সিংহের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন। গানের কথায় ‘বলাৎকারি’ শব্দের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক কিংবা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ চতুর এর সেই ‘বলাৎকারি’ ভাষণে সারা দেশে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কী বলবেন এ ব্যাপারে?
মনে হয়, আমাদের ওভাররিঅ্যাক্ট করা উচিত নয়। দরকার আসল সমস্যায় মন দেওয়া। বাস্তব জীবনের অনেক ঘটনা নিয়ে মজা করা
হয় যেগুলো হয়ত সব সময়
সবার কাছে মজাদার লাগে না।
তবু বাস্তব সমস্যা থেকে নজর সরিয়ে নেওয়া ঠিক নয়।
ভারতের সব থেকে বড় সেলিব্রিটি হাউজ-হাসব্যান্ড হওয়ার ভাল আর খারাপ দিকগুলো কী?
(হেসে) তাই না কী! আমার তো মনে হয় ছেলেদের পক্ষে এটাই সব থেকে ভাল চাকরি। আমি সবাইকে এটাই করতে বলব। তবে খারাপ দিকটা হল, বৌয়ের পয়সায় খাচ্ছি বলে লোকে মাঝেমাঝে খোঁচায়। সেটা ছাড়া এ রকম ছোটখাটো ব্যাপার তোয়াক্কা না করলে এ রকম চিলড আউট জব আর হয় না।
আপনার তো তিনটে পরিচয়। এন্টারটেনার, লেখক আর রিফর্মার। কী ভাবে সামলান এই তিন রকম পরিচিতি?
সামলানো তো বেশ চাপের। কখনও কখনও এক দিকে একটু বেশি নজর দেওয়া হয়ে যায়। আগে আমি চেষ্টা করতাম একটা ব্যালেন্স করার। কিন্তু সেটা কখনওই সম্ভব হত না। তাই এ বছর ঠিক করেছি কোনও একটা ব্যাপারে মন দেব।
আপনি কলকাতায় বিয়ে করেছেন। সে অর্থে কলকাতার জামাই আপনি...
হ্যাঁ, তা ঠিক। আমার শ্বশুরবাড়ি সাদার্ন অ্যাভেনিউতে। কলকাতায় গেলেই পার্ক স্ট্রিটে ওঁদের নিয়ে খেতে যাই।
‘টু স্টেটস’-এ চেন্নাইকে কেন্দ্র করে সমস্ত ঘটনা লিখলেও আসলে তা ঘটেছিল কলকাতায়। কলকাতা-কেন্দ্রিক কিছু লেখার প্ল্যান আছে?
আমি ভীষণ ভাবে করতে চাই। তবে তার আগে ভাল করে কলকাতাকে জানতে হবে। আমার কলকাতা আবেগপ্রবণ মানুষের শহর। টাকা পয়সা এখানে অতটা
জরুরি নয়। যদিও ভারতের অন্যান্য শহরে সেটাই খুব প্রয়োজনের। কলকাতাও পালটাচ্ছে। আমার সেটা দেখতে ভালই লাগে।
জীবনে কোনও ভুল করেছেন যার জন্য আজও অনুশোচনায় ভোগেন?
আরও আগে লেখা শুরু করতে পারলে ভাল হত। এখন নিজের ফিটনেস নিয়ে সচেতন। এটা নিয়েও আরও আগে ভাবা উচিত ছিল।
আপনার এমন কোনও অভ্যেস আছে যা ফ্যানেরা জানে না?
আমি খুব ভুলো মনের মানুষ। ফ্যামিলি মেম্বার বা ক্লোজ ফ্রেন্ড-এর ব্যাপারেও অনেক সময় ভুলে যাই।
পরবর্তী বইটা কবে বেরোচ্ছে?
এটা সিক্রেট। আমার স্ত্রীও জানেন না কী নিয়ে লিখছি আমি। |
|
|
|
|
|