চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
ব্যক্তিগত অনুভবেই পরিস্ফুট শিল্পীর মগ্ন সৌন্দর্যবোধ
ম্প্রতি দেবশ্রী দত্ত মেহতা প্রদর্শনী করছেন ধর্মতলার কে.সি.দাস গ্যালারিতে। প্রচলিত অর্থে এটি কোনও গ্যালারি বা শিল্পপ্রদর্শন কেন্দ্র নয়। এই খাবারের দোকানটির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। ১৯৯৯ সাল থেকে তাঁরা একটি অভিনব কার্যক্রম নিয়েছেন। দোকানের অভ্যন্তরে দেয়ালে ছবি টাঙিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে আসছেন। ছবির প্রদর্শন-ব্যবস্থাকে তাঁরা একেবারে টেনে এনেছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরিকল্পনা হিসেবে এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিদেশে এ রকম ব্যবস্থা তো আধুনিকতার গোড়া থেকেই চলে আসছে। কিন্তু ব্যবসা-পরিচালন কর্তৃপক্ষ তাঁদের সদিচ্ছা সত্ত্বেও প্রদর্শন-ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু করতে পারেননি। খাবার টেবিলে লোকজন বসে খাচ্ছে। বেশ ভিড় চারপাশে। তার মধ্যে টেবিল ঘেঁষে দেয়ালে ছবি ঝোলানো। উপযুক্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। ইচ্ছে থাকলেও দর্শকের পক্ষে ভাল করে ছবি দেখা সম্ভব নয়।
দেবশ্রী ছবি আঁকছেন অনেক দিন থেকে। তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী হয়েছিল ২০০৬ সালে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত ন’টি একক প্রদর্শনী করেছেন। এটি তাঁর দশম একক। চিত্রকলায় তাঁর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এই প্রদর্শনীতে ছিল তাঁর প্রায় ২০টি ছবি। দু’টি বাদে সবই প্রাকৃতিক নানা দৃশ্য। সেই দৃশ্যের ভিতর জনমানব বা অন্য কোনও প্রাণীর উপস্থিতি খুবই কম। এর চারটি সাদা-কালো, ড্রয়িংধর্মী। কাগজের উপর পেন্সিল দিয়ে আঁকা। বাকি রঙিন ছবি কাগজের উপর অ্যাক্রিলিক রঙে আঁকা। দু’টি ছবিতে তিনি এঁকেছেন ঘোড়ার মুখ। স্বাভাবিকতায় আঁকা। রূপায়ণে দুর্বলতা আছে।
বর্ণিল নিসর্গরচনাগুলিতে তাঁর রূপায়ণ পদ্ধতি অনেকটাই প্রতিচ্ছায়াবাদ বা ইম্প্রেশনিজমকে অনুসরণ করেছে। প্রকৃতিকে অনুপুঙ্খ স্বাভাবিকতায় যথাযথ ভাবে রূপায়িত করেননি। ব্যক্তিগত অনুভব থেকে, আলো-ছায়ার মায়ার রহস্যকে মনে রেখে তিনি ছবিগুলি এঁকেছেন। এটাই ইম্প্রেশনিজমের ধর্ম।
শিল্পী: দেবশ্রী দত্ত মেহতা
ইম্প্রেশনিজমের আঙ্গিকগত আন্দোলন ফরাসি দেশে শুরু হয়েছিল ১৮৭০-এর দশক থেকে। ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের প্রথম সম্মেলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্যারিসে ১৮৭৪ সালে। স্বাভাবিকতার আঙ্গিকের প্রাবল্য ছিল প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পচর্চায় বা নিও-ক্লাসিসিজম ধারায়, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছিলেন ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীরা। আমাদের দেশে এর প্রভাব এসে পৌঁছেছে ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশক থেকে। ১৯৬০-এর দশকের শিল্পীরা এই আঙ্গিককে নানা ভাবে রূপান্তরিত করেছেন।
দেবশ্রীর বর্ণিল নিসর্গগুলির মধ্যে তিনটি ছবি ছিল ‘ওয়াটার লিলি’ শিরোনামে। নিসর্গকে প্রেক্ষাপটে রেখে জলাশয়ে রঙিন শাপলা-শালুক ফুলের ছবি এঁকেছেন তিনি। এই ছবিগুলি ক্লড মোনের (১৮৪০-১৯২৬) ১৯০০ সালে আঁকা ‘দ্য লিলিপন্ড’ ছবিটিকে মনে পড়ায়। মোনে ছিলেন ইম্প্রেশনিজমের প্রধান একজন শিল্পী। তাঁর ১৮৭২ সালে আঁকা ‘ইম্প্রেশন: সানরাইজ’ ছবিটি থেকেই ইম্প্রেশনিজম কথাটির উদ্ভব হয়। শেষোক্ত ছবিটিতে নিসর্গ যতটা বিমূর্তায়িত হয়েছিল, ‘লিলিপন্ড’-এ অবশ্য তার চেয়ে কম ছিল। কিন্তু প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি শিল্পীর যে বিনতি, সেটাই ছবিটিকে মন্ময় করেছে। দেবশ্রীর ছবি তিনটিতেও তাই। তিনি এঁকেছেন গাছ-গাছালিতে পূর্ণ জলাভূমি, তার মধ্যে লাল শালুক ফুটে আছে। আমাদের দেশে ১৯৪০-এর দশক থেকে এ ধরনের নিসর্গ অনেক আঁকা হয়েছে। এখনও আঁকা হচ্ছে। এখনকার শিল্পীরা যাঁরা ছবিতে নতুন চেতনা ও অভিমুখ আনতে চান, তাঁরা ইম্প্রেশনিজমের প্রকাশপদ্ধতিকেও নিজেদের মতো করে রূপান্তরিত করে নেন, যাতে তার মধ্যে সাম্প্রতিকের মূল্যবোধ পরিস্ফুট হতে পারে। দেবশ্রী সেটা করেননি। নিসর্গের সনাতন মূল্যবোধকেই তিনি রূপায়িত করেছেন। এইখানেই তাঁর ছবির সীমাবদ্ধতা। অন্যান্য ছবিতেও তিনি পরিচ্ছন্ন ভাবে বাংলার নিসর্গের উদাত্ততাকে রূপ দিয়েছেন। একটি ছবিতে দেখি বিস্তৃত প্রান্তরে বড় বড় গাছ। লাল মাটির পথ ধরে দূরে এক গ্রামীণ মানবী মাথায় কলসি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর একটি ছবিতে সূর্যাস্তের নীলিম পরিমণ্ডলে নদীতীরে একলা একটি নৌকা পড়ে আছে। এ সব ছবিতে মগ্ন সৌন্দর্যবোধ পরিস্ফুট হয়। কিন্তু এ রকম ছবি তো প্রচুর আঁকা হচ্ছে। তাঁকে সন্ধান করতে হবে সময়োপযোগী স্বকীয় প্রকাশরীতি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.