অনেকটা যেন সেই ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কায়দা! মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়ে শহরের একাধিক জায়গায় জমায়েত। রাজপথে বাইকে চড়ে এক জমায়েত থেকে আর এক সমাবেশে ছুটে গেলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। পুলিশ তাঁর বাইক-সওয়ারে বাধা দেওয়ায় এক বার ঈষৎ উত্তেজনাও হল। ক্ষুব্ধ দীপা বৌবাজার ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় ঘাম ছুটে গেল পুলিশের।
রায়গঞ্জে এইম্স ধাঁচের হাসপাতাল গড়ার দাবিতে বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এনে বৃহস্পতিবার প্রকৃত পক্ষে পঞ্চায়েত ভোটের আগে শক্তি প্রদর্শন সেরে নিল কংগ্রেস। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, ফিয়ার্স লেন এবং ব্র্যাবোর্ন রোড তিনটি জমায়েত-স্থলেই ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। যা দেখে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব উচ্ছ্বসিত। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “এই বিশাল ভিড়ই প্রমাণ করে তৃণমূলের বিকল্প কংগ্রেসই!” আর দীপার ঘোষণা, “পুলিশ কত দিন আটকাবে? রায়গঞ্জের ইচ্ছুক চাষিরা এক দিন মহাকরণে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রীকে বলবেই, গরিব মানুষকে নিয়ে এই রাজনীতি আপনি বন্ধ করুন!” |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ দিনের জন-জমায়েত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করবে বলেই কংগ্রেস নেতাদের একাংশের ধারণা। পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত কর্মীদের মনোবল তুঙ্গে রাখার জন্যই এ দিন রানি রাসমণিতে প্রদীপবাবু ঘোষণা করেন, তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা এবং বিরোধীদের উপরে শাসক দলের হামলার প্রতিবাদে ২৮ জানুয়ারি ব্লকে ব্লকে ধিক্কার মিছিল করবে কংগ্রেস। এর পরে জেলায় জেলায় আইন অমান্যের কর্মসূচিও হবে।
ফিয়ার্স লেনে বিরাট পুলিশি আয়োজনের মাঝে ম্যাটাডোর-মঞ্চে মূল বক্তা ছিলেন দীপাই। তাঁর বক্তব্য, “সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকদের কথা বলে আন্দোলন করেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। রায়গঞ্জে কৃষকেরা জমি দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু অনিচ্ছুক মুখ্যমন্ত্রী! রায়গঞ্জে হাসপাতাল হলে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, দীপা দাশমুন্সির নাম হবে! তৃণমূলের নাম হবে না! তাই!”
রায়গঞ্জের সাংসদ ফিয়ার্স লেন থেকে এক দলীয় কর্মীর বাইকে চেপে রানি রাসমণিতে আসেন। সভা শেষ হয়ে গেলেও সেই মঞ্চেই বক্তৃতা করে ফিয়ার্স লেনে ফিরে যাওয়ার পথে রাজভবনের সামনে পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়। দীপার অভিযোগ, “পুলিশ আমাকে এমন ভাবে ঘিরে ধরেছিল যে, বাইক থেকে নামতে বাধ্য হই। ওখানে এক জনও মহিলা পুলিশ ছিল না। এক জন পুলিশ বাইকের সামনে দিক ধরে আমার গায়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন। আমি পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, আমি মহাকরণের দিকে যাচ্ছি না। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে আমি মহাকরণে যেতেই পারি।” |
এর পরেই বাইক থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন দীপা। পুলিশ-কর্তারা তাঁকে জানান, জনা পঞ্চাশেক দলীয় সমর্থক তাঁর মোটরবাইকের পিছনে দৌড়চ্ছে। মহাকরণের সামনে সব সময়ে ১৪৪ ধারা জারি। ওই রাস্তা এড়িয়ে তিনি সিধু-কানহু ডহর, ধর্মতলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। পুলিশের অনুরোধ মেনে তাদের দেখানো পথেই দীপা ফিরে যান ফিয়ার্স লেনে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মোটরবাইকে চেপে রাজভবনের দিকে এগোতেই কার্জন পার্ক, মেয়ো রোড, সিধু-কানহু ডহরে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীপা চলে যাওয়ার পরে ওই সব রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রদীপবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “পুলিশকে দীপার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে কংগ্রেস পথে নেমে প্রতিবাদ জানাবে।”
ব্র্যাবোর্ন রোডে নেতৃত্বে ছিলেন মানস ভুঁইয়া। তাঁর বক্তব্য, “রায়গঞ্জে এইম্সের দাবি দাবি ছুড়ে ফেলে দিয়ে আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) কেবল প্রিয়দাকে নন, বাংলার মানুষকেও অসম্মান করলেন!” রানি রাসমণিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী দাবি করেন, রায়গঞ্জেই আগে এইম্সের ধাঁচে হাসপাতাল হবে। পাশাপাশিই, কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ব্র্যাবোর্ন রোডে মন্তব্য করেন, “কংগ্রেসের এত মানুষ দেখে অনেকে শঙ্কিত হচ্ছেন! যাঁরা এসেছেন, তাঁরা নিজের নিজের এলাকায় ফিরে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ুন।” তিনটি জায়গাতেই পুলিশ-কর্তারা উপস্থিত সব কংগ্রেস সমর্থকদের গ্রেফতার ও সঙ্গে সঙ্গে জামিনে মুক্তির ঘোষণা করেন। তবে ব্র্যাবোর্ন রোডে সমাবেশ শেষে দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ ছাড়াই পাপিয়া পাল চতুর্বেদী নামে এক মহিলা-কর্মী মহাকরণের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে তাঁর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।
রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কংগ্রেসের আন্দোলনকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “রায়গঞ্জে না শিলিগুড়িতে এইম্স হবে, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। রায়গঞ্জে হলে কোচবিহারের অসুবিধা হবে।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্যে এইম্সের মতো হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দিয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখেছিলেন তৃণমূলেরই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থবাবুর বক্তব্য, “এইম্স ওদের জায়গাতেই করতে হবে, এই নিয়ে ওরা (কংগ্রেস) জেদ ধরে বসে আছে!”
|