পৌষ-সন্ধ্যায় দলীয় জনসভা থেকে নিজের পালার প্রচারটাও সেরে রাখলেন তিনি!
নদিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা তেহট্টে বিকেল ফুরোতেই জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। ভিড়টা ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করেছে বুঝতে পেরেই বৃহস্পতিবার বিকেলে দলীয় মঞ্চে মাইকটা প্রায় ছিনিয়ে নিলেন তিনি। রুপোলি কোটের আড়ালে বেগুনি পুলওভার, মুখের কাছে মাউথপিস ঠেকিয়ে তাঁর আকুতি, “মা-বোনেরা একটু বসে যান। জানি, আমার জন্যই সভা শুরু হতে দেরি হয়েছে। তবে আমি আবার আসছি। সঙ্গে শতাব্দীকেও আনব। সাদিপুরের মাঠে ‘মন বলছে কেউ আসবে’, আমাদের পালা। আপনি কী বলছেন, আসবেন তো?” জনতা স্তব্ধ। কর্মীরা হতবাক। দলীয় মঞ্চে নেতাদের অস্বস্তি ঢাকার মরিয়া চেষ্টা। তাঁর অবশ্য বিশেষ হেলদোল নেই। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ, তাপস পাল কর্ডলেস মাইক হাতে তাঁর বক্তব্য রাখছেন, “মা-বোনেদের কাছে উত্তরটা পেলাম না কিন্তু...আজ আমার এখানে আসতে দেরি হয়েছে, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আগামী ১৮ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) কিন্তু দেরি করব না। আপনারাও দেরি করবেন না। সামান্য কটা পয়সা খরচ করতে হবে, তবে আমার জন্য নয়। আমার যাত্রার জন্য। দেখবেন, পালাটা দারুন। শতাব্দী থাকবে। মন ভাল হয়ে যাবে। মন বলছে আপনারা আসবেন...কী আসছেন তো!” চেয়ার টেনে বসে পড়েন তাপস। |
যা শুনে, শেষ বিকেলে নাজিরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা খানিক এ-ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করেছেন। তারপরে এ-ওর গায়ে ঢলে পড়ে কেউ বলেছেন, “শতাব্দী এলে কিন্তু পালা জমে যাবে!” কেউ জানতে চেয়েছেন, “এই তারিখটা কবে বলল রে!” আর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব পড়েছেন ঘোর অস্বস্তিতে। বিষয়টি যে তাঁরা ভাল ভাবে নেননি, সভায় উপস্থিত বিব্রত এক জেলা নেতার কথায় তা স্পষ্ট, “আমরা তো ভাবতেই পারি না, দলীয় মঞ্চকে এ ভাবে ব্যক্তিগত প্রচারে কাজে লাগানো যায়। এটা উনি ঠিক করলেন না।”
আর শতাব্দী? ‘মন বলছে কেউ আসবে’র নায়িকা বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় অবশ্য মনে করেন, ব্যাপারটা ‘ঠিক নয়’। তবে তার আগে শতাব্দীর সংযোজন, “তাপস পাল কোন প্রেক্ষিতে এ কথা বলেছেন জানি না। তবে ওঁর একটা শিল্পীসত্তা রয়েছে। শিল্পী তাপস পাল এ কথা বলতেই পারেন। আমরা দলীয় কর্মসূচিতে গেলে শিল্পী হিসাবে মানুষ আমাদের কাছে অন্য আবদার করেন।”
তা বলে দলীয় মঞ্চ থেকে প্রচার? কিঞ্চিৎ দ্বিধা নিয়ে শতাব্দী বলেন, “যাত্রার প্রচারে দলীয় মঞ্চ ব্যবহার করাটা বোধহয় ঠিক নয়।”
কিছু দিন আগে নদিয়ার এই প্রান্তিক শহরে দলীয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুধু একাধিক সরকারি প্রকল্প ঘোষণাই নয়, তেহট্টে পুলিশের গুলিতে নিহতের পরিবারের হাতে সরকারি অনুদানের চেকও তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার, তাঁর দলের সাংসদ দলীয় মঞ্চকে বেছে নিলেন নিজের যাত্রা পালার-প্রচারে।
তেহট্টের তাবড় এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, “দলীয় মঞ্চ সরকারি কাজে লাগানো নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তা বলে নিজের যাত্রার প্রচার, মন বলছে দলের মুখ পুড়বে!” |