টানাটানির ভাঁড়ারেই
প্রতি মহকুমায় কৃষি মেলা
শূন্য রাজকোষ নিয়ে প্রতিদিনই উষ্মা প্রকাশ করছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তারই মধ্যে চলছে একের পর এক অনুষ্ঠান। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিবেক ছাত্র-যুব উৎসবের আয়োজন নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলার আগেই রাজ্য জুড়ে শুরু হতে চলেছে কৃষি মেলা। আগামী ১৫ এবং ১৬ জানুয়ারি তিনটি (দার্জিলিং-কার্শিয়াং-কালিম্পঙ) বাদে রাজ্যের বাকি সব মহকুমায় এই মেলা আয়োজনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মহকুমায় বরাদ্দ হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। এই ৩টি মহকুমা বাদে রাজ্যের বাকি সব মহকুমায় ওই দু’দিন ধরে মেলার আয়োজন করার নির্দেশ এসেছে। ইতিমধ্যে মেলার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের যেমন ৪টি মহকুমায় মেলা করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নিমাইচন্দ্র রায় বলেন, “কৃষি মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।”
এই মেলা নিয়েও রাজ্য সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধী-শিবির। সিপিএম পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “সর্বত্র শুধু মেলাই চলছে।” তাঁর কথায়, “কাদের জন্য কৃষি মেলা? কৃষকেরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। অভাবি বিক্রি শুরু হয়েছে। কৃষি ও কৃষকদের জীবনে এত বড় দুর্যোগ কখনও আসেনি।” জবাবে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “সবেতেই ওদের সমালোচনা করতে হবে। আসলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বুঝেই ওদের এমন অপপ্রচার।” বিধায়কের মতে, “কৃষি মেলার ফলে কৃষকেরাই উপকৃত হবেন। মেলায় এসে তাঁরা নানা বিষয় জানতে পারবেন।”
কী ভাবে, কতটা জায়গায় মেলার আয়োজন করতে হবে, মেলা কমিটিতে কে কে থাকবেন, সরকারি নির্দেশিকায় সে সব জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, পরে ব্লক স্তরেও এমন মেলা হতে পারে। আপাতত, কৃষি মেলার জন্য জেলা এবং মহকুমাস্তরে কমিটি গড়ার নির্দেশ এসেছে। সেই মতো কমিটি গড়াও হয়েছে। জেলাস্তরে ৫ সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকই। মহকুমাস্তরে সাত সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক। কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতরের যৌথ উদ্যোগে এই কৃষি মেলার আয়োজন। মেলার জন্য মহকুমাস্তরে যে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে, তার মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন দফতর দেবে দু’লক্ষ টাকা। কৃষি দফতর দেবে দু’লক্ষ টাকা। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মেলা চত্বরে সবমিলিয়ে ১২টি স্টল থাকবে। এরমধ্যে কৃষি দফতরের একটি স্টল ৮০০ বর্গফুটের, খাদ্য প্রক্রিয়াকরন এবং উদ্যানপালন দফতরের একটি স্টল ৭০০ বর্গফুটের। মৎস্য, কৃষি বিপণন, স্বসহায়ক দল-সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দফতরের জন্য ৫টি স্টল ১ হাজার বর্গফুটের। অর্থাৎ, এক- একটি স্টল হবে ২০০ বর্গফুট জায়গার উপর। বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রাংশ প্রভৃতির কোম্পানির ৫টি স্টল ৫০০ বর্গফুটের। অর্থাৎ, এক-একটি স্টল হবে ১০০ বর্গফুটের। মূল অনুষ্ঠান মঞ্চ হবে ৫০০ বর্গফুট জায়গার উপর। অর্থাৎ, সমস্ত স্টল এবং মঞ্চ মিলিয়ে জায়গা প্রয়োজন ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট। পাশাপাশি, মেলা চত্বরে ৬ হাজার ৫০০ বর্গফুট ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। অর্থাৎ, ১০ হাজার বর্গফুট জায়গার উপর মেলার আয়োজন করতে হবে।
চার লক্ষ টাকার মধ্যে কী ভাবে এই মেলা সুষ্ঠু ভাবে হবে, তার পরিকল্পনা করতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এতোগুলো স্টল এবং মঞ্চ তৈরি করতেই তো একটা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে। তার সঙ্গে বেশ কিছু কর্মসূচি করতে হবে। এখন সব কিছু ভালয় ভালয় মিটলে হয়।” মেলা উপলক্ষে প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবেরই আয়োজন থাকবে। প্রশাসনের দাবি, এর ফলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “আলোচনাসভা সভা থেকে চাষের নানা বিষয় জানার সুযোগ থাকছে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হবে। জৈব সারে চাষ করলে একদিকে যেমন চাষের খরচ কমে, অন্য দিকে তেমন পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।” যদিও জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষের বক্তব্য, “আলোচনাসভার জন্য এত টাকা খরচ করে মেলা করার প্রয়োজন ছিল না। বরং, কৃষকেরা যাতে সহামূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে, সেই দিকে নজর দিলে ভাল হত।”

মেলা আয়োজন
তারিখ ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি
উদ্যোক্তা কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতর
বরাদ্দ প্রতি মহকুমায় ৪ লক্ষ
জায়গা ১০ হাজার বর্গফুট
স্টল ৩ হাজার বর্গফুট
অনুষ্ঠান মঞ্চ পাঁচটি মঞ্চের প্রতিটি ৫০০ বর্গফুট করে
ফাঁকা জায়গা মোট ৬ হাজার ৫০০ বর্গফুট
মেলা উপলক্ষে থাকছে প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা,
আলোচনাসভা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.