বিখ্যাত ক্রিকেটার নন, তিনি আজ নিছকই রক্তমাংসের মানুষ। এক গর্বিত বাবা।
ছেলে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ডাক পেয়েছে, আর তিনি যেন ডুব দিয়েছেন উচ্ছ্বাসের মহাসমুদ্রে। আর পাঁচ জন পিতার যেমন হয় সন্তানের সাফল্য দেখলে।
তিনি চান না, তাঁর এভারেস্ট-সদৃশ ক্রিকেটব্যক্তিত্বের কোনও ছায়া পড়ুক ছেলের কেরিয়ারে। চান না তাঁর প্রসঙ্গ টেনে এনে মিডিয়ার অহরহ তুলনা।
তিনি সচিন রমেশ তেন্ডুলকর চান ছেলে অর্জুন খেলুক খোলা মনে। নিজের যোগ্যতায়। টিমে থাকুক এক সাধারণ সদস্য হয়ে। |
অর্জুন মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ পাওয়ার পরপরই এমন ইচ্ছের কথা আনন্দবাজারকে পাঠানো বিশেষ এক বার্তায় জানিয়ে রেখেছেন লিটল মাস্টার। যেখানে সচিন বলেছেন, “আশা করি সবাই অর্জুনকে একা ছেড়ে দেবে যাতে ও টিমের একজন সাধারণ সদস্যের মতো এই সুন্দর খেলাটা উপভোগ করতে পারে।” এবং ছেলের সাফল্যে যে তিনি কতটা উচ্ছ্বসিত, সেটাও লুকোচ্ছেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শততম সেঞ্চুরি মালিক। বলেছেন, “অর্জুন মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ১৪ দলে ডাক পাওয়ায় আমারও আজ আর পাঁচ জন বাবার মতো প্রচণ্ড আনন্দ হচ্ছে, গর্ব হচ্ছে। এটা ওর কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার।”
ভারতীয় ক্রিকেটে পিতা-পুত্রের পরম্পরা নতুন নয়। সিনিয়র পটৌডি-জুনিয়র পটৌডি, লালা অমরনাথ-মোহিন্দর অমরনাথ, বিজয় মঞ্জরেকর-সঞ্জয় মঞ্জরেকররা আছেন উদাহরণ হিসেবে। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে আসবেন সুনীল গাওস্কর ও রোহন গাওস্কর। এই একই সরণিতে সচিন-অর্জুন ঢুকবেন কি না, সময় বলবে। তবে বিখ্যাত বাবার চাপ সামলে যিনি জাতীয় দলের জার্সি পরেছেন, সেই রোহন গাওস্কর মনে করছেন অর্জুন মুম্বই অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ঢুকেছে নিজের যোগ্যতায়। সচিন তেন্ডুলকরের ছেলে বলে নয়। |
অর্জুনের খেলা দেখেননি রোহন। কিন্তু সচিন-পুত্রের রানের খবর রাখেন নিয়মিত। “কাগজে, টিভিতে দেখি। ও তো খুব ভাল করছে,” মুম্বইয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলছিলেন রোহন। একটু থেমে ফের বলে দিলেন, “সোজাসুজি বলি, অর্জুন টিমে থাকার যোগ্য। ও তো এমসিএ-র সমস্ত বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেই রান পেয়েছে। খুবই ভাল করছে ও। কতটা প্রতিভা ওর আছে সেটা কিন্তু অর্জুন বুঝিয়ে দিয়েছে।”
কিন্তু তাঁর আর অর্জুনের ভাগ্য তো পাকেচক্রে একই রকম। পিতার বিশাল ব্যক্তিত্বের চাপ থাকে ঘাড়ের উপর সব সময়। কী ভাবে সামলানো উচিত এই চাপ? “বাকি সব ভুলে খেলাটায় মন দিলেই এ সব সমস্যা এড়ানো যায়। আমি তাই করতাম। সব সময় আমার নজর থাকত মিডিয়ার এ সব তুলনা ভুলে কী ভাবে নিজের খেলাটাকে আরও উন্নত করা যায়। কী করলে, টিমকে নিজের সেরাটা আমি দিতে পারি,” বলে দিচ্ছেন রোহন। আর অর্জুনের জন্য তাঁর কী প্রেসক্রিপশন হবে? কী বার্তা দিতে চান অর্জুনকে? এ বার রোহনের স্ট্রেট ড্রাইভ, “অর্জুনকে যদি আমার কোনও মেসেজ পাঠাতে হয়, তা হলে ওকে সোজা ফোন করব। মিডিয়ার মাধ্যমে আমি যাব কেন?” |
আনন্দবাজারকে পাঠানো বিশেষ বার্তায় সচিন তেন্ডুলকর |
অর্জুন অনূর্ধ্ব ১৪ মুম্বই দলে সুযোগ পাওয়ার পর আর পাঁচ জন বাবার মতো আমারও প্রচণ্ড আনন্দ হচ্ছে, গর্ব হচ্ছে। এটা ওর কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার। আমি আশা করব, সবাই ওকে একা ছেড়ে দেবে যাতে এই সুন্দর খেলাটা ও টিমের এক জন সাধারণ সদস্যের মতো উপভোগ করতে পারে। |
রোহন গাওস্কর |
আমার নজর থাকত মিডিয়ার তুলনা ভুলে কী ভাবে সব সময় উন্নতি করব। সব ভুলে খেলায় মন দিলে সমস্যা এড়ানো যায়। আমি তাই করতাম। |
|