অরণ্যের গভীরে থেকে অরণ্যের সৌন্দর্য্যের স্বাদ নেওয়া ভ্রমণপিপাসুদের স্বপ্ন। আর স্বপ্নপূরণ যদি সুন্দরবনের মতো জঙ্গলে হয় তা হলে তো সব পাওয়াই হয়ে যায়। সব কিছু ঠিকমত চললে হয়তো এই শীতেই সুন্দরবনের পর্যটকদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে চলেছে।
জঙ্গলের মধ্যে আগাপাস্তলা জালে ঘেরা একটি জায়গায় তৈরি হয়েছে গেস্ট হাউস। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের ঝিঙাখালি ফরেস্ট অফিসের পাশেই এই গেস্ট হাউস। এখন শুধু সেটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু এখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। অভিযোগ, সরকারি টানাবাহানায় গেস্ট হাউসটিতে কবে পর্যটকেরা পা রাখতে পারবেন তা এখনও অনিশ্চিত।
নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। রঙের কাজও সম্পূর্ণ। ২০০৭-০৮ সালে এই গেস্ট হাউসটি তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাঘ্র প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় গেস্ট হাউসটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ২১ লক্ষ টাকা। মাটি থেকে ৮-১০ ফুট উঁচু পিলারের উপর তৈরি গেস্ট হাউসের ভিতরে রয়েছে দু’টি শোওয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, বাথরুম ও খাওয়ার জায়গা। সুসজ্জিত বিছানায় পাতা রয়েছে ঝকঝকে চাদর। দরজা ও জানলায় ঝুলছে রঙিন পর্দা। জঙ্গলকে উপভোগ করার জন্য রয়েছে ব্যালকনি। পাশেই রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। চারপাশ ঘিরে রয়েছে বাইন, সুন্দরী, কেওড়া, হোগলা প্রভৃতি গাছ। তবে এখনও ব্যবস্থা করা যায়নি বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের। |
বন বিভাগের কর্মীদের মতে, গেস্ট হাউসটি উদ্বোধন হলে ঝিঙাখালির গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে পর্যটকদের কাছে। এতে সরকারের আয় যেমন বাড়বে তেমনই এলাকার মানুষের উন্নয়নও সম্ভব হবে। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা কলকাতার বিমল রায় জানালেন, “ঝিঙাখালির গেস্ট হাউসটি দেখলাম। থাকার ইচ্ছা থাকলেও চালু না হওয়ার জন্য থাকতে পারলাম না।”
স্থানীয় কালীতলা পঞ্চায়েতের সদস্য নিতাই রায় বলেন, “সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকাই একফসলি। বেশিরভাগ মানুষই আর্থিক কষ্টে দিন কাটান। আয়লার পর দুর্দশা আরও বেড়েছে। অনেকে কাজের খোঁজে ভিন রাজ্য চলে গিয়েছেন। এই অবস্থায় যদি সুন্দরবনের ভিতর পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা যায় তা হলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। স্থানীয় মানুষ কাজ পাবে।” পাশপাশি তাঁর আপেক্ষ, “বেশ কিছুদিন হল হেস্ট হাউসটি তৈরি হয়েছে। পানীয় জলের যে সমস্যা রয়েছে, গ্রাম থেকে জল নিয়েই সেই সমস্যা মেটানো যায়। বিদ্যুতের সমস্যাও মেটানো সম্ভব যায় সোলার লাইটের মাধ্যমে। পর্যটনের কথা শুধু মুখে বললেই হবে না, কাজেও করতে হবে।”
ঝিঙাখালি ফরেস্টের ডেপুটি রেঞ্জার অয়ন চক্রবর্তী বলেন, “এটা সরকারি বিষয়। গেস্ট হাউসটির উদ্বোধন কবে হবে বলতে পারব না। তবে কাজ শেষ। আশা করা যায়, পানীয় জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়ে গেলেই পর্যটকেরা এসে থাকতে পারবেন।” আগামী তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। |