আল-কায়দার সৌদি আরব শাখার জঙ্গি আবদুল্লা আল আসিরি। ২০০৯-এর ২৭ অগস্ট সে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী প্রিন্স মহম্মদ বিন নইফকে হত্যার জন্য পায়ুর মধ্যে বিস্ফোরক (আইইডি) লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এই জঙ্গি। মন্ত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও ওই জঙ্গি বাঁচেনি। কিন্তু পরে তার আইইডি লুকিয়ে রাখার কৌশল জেনে তাজ্জব হয়ে যান গোয়েন্দারা। ওই কৌশলেই সে দিব্যি টপকে গিয়েছিল নিরাপত্তার যাবতীয় পরিচিত ঘেরাটোপ।
এখন নিজেদের গোপনাঙ্গকেই আধুনিক বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করছে আত্মঘাতী জঙ্গিরা। কখনও শরীরে অস্ত্রোপচার করে ঢুকিয়ে রাখা হচ্ছে বিস্ফোরক বা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইডি)। ‘ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর’ কিংবা ‘এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানার’-এর মতো আধুনিক সব তল্লাশি যন্ত্রকে ফাঁকি দিতে এটাই সন্ত্রাসবাদীদের নতুন কৌশল বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। |
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ধ্বংসস্তূপের সামনে উদ্ধারকারীরা। শুক্রবার নেপালে। ছবি: এএফপি |
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সাম্প্রতিক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘ফুল বডি স্ক্যানার’-এর মতো গোটা শরীরে তল্লাশি চালাতে পারে, এমন যন্ত্রই আত্মঘাতী হামলা রুখতে এখন সব চেয়ে কার্যকরী। সৌদি আরবের ঘটনার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম অধিকর্তা মনোজকুমার লাল ওই বার্তায় জানিয়েছেন, ৯/১১-র পর থেকে দুনিয়া জুড়ে আত্মঘাতী হামলা বেড়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি খুঁজে বার করে নিত্যনতুন কায়দায় হানা দিচ্ছে জঙ্গিরা। মন্ত্রকের বক্তব্য, সে জন্যই ভিআইপি-দের সুরক্ষা এবং বিমানবন্দরগুলির তল্লাশিতে গোটা মানবশরীর তল্লাশি করার উপযোগী ‘ফুল বডি স্ক্যানার’ অনেক বেশি উপযোগী। শরীরের কোনও অংশে, এমনকী দেহের মধ্যে ফোকর তৈরি করে বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা মাদকদ্রব্য রাখলেও ওই যন্ত্র তা ধরে ফেলবে। তার ছবি মিলবে মনিটরে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য ৯/১১-র ঠিক পরেই এই যন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল। এটি ব্যবহারে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয় বলে সমালোচনা শুরু হওয়ায় যন্ত্রটিতে কিছু রদবদলও ঘটানো হয়। তার পরেও অবশ্য বিতর্কটি রয়েই গিয়েছে। এই অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শ, ‘ফুল বডি স্ক্যানার’ দিয়ে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত পুরুষ ও মহিলা রক্ষী নিয়োগ করা হোক।
পশ্চিমবঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাফিলতি ও উদাসীনতার অভিযোগ থাকলেও এই রাজ্যে ভিআইপি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ধরনের ‘ফুল বডি স্ক্যানার’-এর ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর। ওই দিন মেদিনীপুরে রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একটি জনসভায় জার্মানি থেকে আমদানি করা ওই যন্ত্র প্রথম ব্যবহৃত হয়। সেই সময়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সঙ্গে প্রশাসন ও সিপিএমের লড়াই চলায় বুদ্ধবাবুর নিরাপত্তার ঝুঁকি খুব বেশি বলে মনে করা হয়েছিল।
রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা তথা মুখ্যমন্ত্রীর চিফ সিকিওরিটি লিয়াজঁ অফিসার বীরেন্দ্র বলেন, “ভিআইপি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই স্ক্যানার ব্যবহার করি। ওই যন্ত্র দিয়ে যাঁদের দেহে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই স্ক্যানারের ব্যবহার হয়।”
ইউরোপ ও আমেরিকায় থাকলেও ভারতের কোনও বিমানবন্দরে এখনও পর্যন্ত ‘ফুল বডি স্ক্যানার’ নেই। এ দেশে সাধারণত ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, এক্স-রে ব্যাগেজ স্ক্যানারের মতো যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সৌদি আরবে আল-কায়দার জঙ্গি আবদুল্লা আসিরি যে কায়দায় বিস্ফোরক বহন করছিল, সেটা ধরা যে ওই সব যন্ত্রের পক্ষে নেহাতই অসম্ভব, সেটাই বলছেন গোয়েন্দারা। |