ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জোট করে কাটোয়া চন্দ্রপুর কলেজে ছাত্র সংসদের দখল নিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। উল্টো দিকে, কাটোয়া কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে নেমে সবক’টি আসনে হারল টিএমসিপি। বৃহস্পতিবার ওই দু’টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল। এর আগে কাটোয়া কলেজে ৪২টি আসনের মধ্যে ছাত্র পরিষদ ১৪টি ও চন্দ্রপুর কলেজে ১৮টি আসনের মধ্যে সিপিএম-টিএমসিপি জোট চারটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে। চন্দ্রপুর কলেজে এসএফআই প্রার্থী দিলেও, ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগ’ তুলে কাটোয়া কলেজে এসএফআই কোনও প্রার্থী দেয়নি। কেতুগ্রামের কান্দরা রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়েও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিএমসিপি জয়লাভ করে। |
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে কাটোয়া ও চন্দ্রপুর কলেজে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হয়। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার কাটোয়া কলেজ নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। চন্দ্রপুর কলেজের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন এসডিপিও (কাটোয়া) ঋক দাস। ওই দুই কলেজেই একাধিক ওসি ও র্যাফ নামানো হয়েছিল। দু’টি কলেজেই মহকুমা প্রশাসন ১০০ মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, নির্বাচনের জেতার পরে টিএমসিপির সমর্থকেরা কলেজের বাইরে বিজয় মিছিল করছিল। তখন কিছু সমর্থক এসএফআইয়ের ফেস্টুন ছিঁড়ে দেয়। এতেই গোলমাল বাধে। তবে টিএমসিপির অভিযোগ, চন্দ্রপুর মোড়ে একটি কাঠের মিল থেকে রড-লাঠি হামলা সমর্থকদের উপর হামলা চালানো হয়। তিন জন জখম হয়েছেন। সাত জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসএফআই পাল্টা অভিযোগ, বাইরে থেকে লোক এনে ওরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ নিস্ক্রিয় ছিল। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও ঘটনাস্থলে যান। আর শহরের ডাকবাংলো মোড়ে রয়েছে কাটোয়া কলেজ। সকাল থেকেই কেডিআই মোড় থেকে বাঁশের ব্যারিকেড করে দিয়েছিল পুলিশ। এই ব্যারিকেড দিয়েই ভোটারদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে কলেজে ঢুকতে হচ্ছিল। এ ছাড়াও নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত ডাকবাংলো রোডে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল ভোটে কাটোয়া শহরের ৫টি স্কুলে তৃণমূল কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। এ নিয়ে কালীঘাটে বর্ধমান জেলা নেতাদের বৈঠকও হয়। তখন দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়েছিলেন, কাটোয়ার মানুষ তৃণমূলকে পছন্দ করে। তাই নেতাদের মধ্যে ঝগড়া বন্ধ করতে হবে। দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কথায় কাটোয়ার তৃণমূল নেতারা দ্বন্দ্ব ভুলে কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ৪২টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে প্রার্থী দেন তারা। ১৪টি আসনে প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসেবে তারা কংগ্রেসের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিলেন। কাটোয়া কলেজের নির্বাচকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “বিএ তৃতীয় বর্ষের এক প্রার্থী ৪৫টি ভোট পেয়েছেন। ওটাই টিএমসিপির সর্বোচ্চ ভোট। সবমিলিয়ে টিএমসিপি ২ শতাংশ ভোট পেয়েছে।” নির্বাচনে হরে যাওয়ার পরে তৃণমূল নেতারা অবশ্য আর সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেননি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল ও কলেজ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে আমরা সমস্ত পড়ুয়ার কাছে পৌঁছতে পারিনি। আগামী বছর নতুন উদ্যোমে ঝাঁপাব।” ছাত্র পরিষদের নেতা শেখ সোলেমান বলেন, “তৃণমূল নেতারাই কার্যত স্বীকার করে নিলেন সন্ত্রাসের অভিযোগ মিথ্যা। আমরা সারা বছর পড়ুয়াদের পাশে থাকি। তাই টানা তিরিশ বছর পড়ুয়ারা ছাত্র সংসদ মাদের হাতি তুলে দিল।” |