মুর্শিদাবাদ জুড়ে গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা অনেকটাই বিপর্যস্ত। সাধারণ জনজীবনেও পড়েছে তার প্রভাব।
বুধবার বহরমপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ ডিগ্রি কম। অন্য দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি, তাও স্বাভাবিকের তুলনায় ৪.৫ ডিগ্রি কম। এই ঠান্ডায় সন্ধ্যার পর থেকে জেলার বিভিন্ন রুট থেকে বাস উধাও হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে রেললাইনে কুয়াশার চাদর বিছিয়ে থাকায় স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারছে না। ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।
|
মুর্শিদাবাদের বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারি বলেন, “কনকনে ঠান্ডায় প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে যাত্রী সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত কমে গিয়েছে। সকাল ও রাতের দিকের জেলার বিভিন্ন রুটের বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” সাধারণত বহরমপুর থেকে ভোর ৪টে থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু নতুন করে জাঁকিয়ে শীত পড়ায় বেশ কয়েকদিন ধরেই সেই সব বাসে যাত্রী নেই বললেই চলে। একই ভাবে রাতের গভীর হলে যে রুটে সামান্য বাস চলছে, তাতেও যাত্রী হচ্ছিল না। আর্থিক ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ করে দেন বাস মালিকরা। তপনবাবুর দাবি, “সকাল ও রাতের দিকে কনকনে ঠান্ডায় চালক ও সহকারীদের বাস চালাতেও ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অন্য দিকে ঘন কুয়াশায় ফগ লাইট জ্বালিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে পথ দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে।”
কুয়াশায় কাবু রেলপরিষেবাও। পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের লালগোলা-শিয়ালদহ শাখার দীর্ঘপথে ট্রেনগুলির গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। বিপাকে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা। বহরমপুরের স্টেশন মাস্টার বলেন, “কুয়াশায় রেলের সিগন্যাল ঢাকা থাকায় স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারছে না। |
তাপমাত্রা |
• ৯ জানুয়ারি— সর্বনিম্ন ৬.২ ডিগ্রি সর্বোচ্চ: ১৮.৪ ডিগ্রি
• ১০ জানুয়ারি— সর্বনিম্ন ৫ ডিগ্রি সর্বোচ্চ: ১৭ ডিগ্রি |
|
নির্দিষ্ট সময়ের অনেক দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে বিভিন্ন ট্রেন। বিশেষ করে সকাল ও রাতের দিকে প্রতিটি ট্রেন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দেরিতে যাতায়াত করছে।”
বহরমপুর থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার প্রথম ট্রেন লালগোলা প্যাসেঞ্জার ৪টে ১৪ মিনিটে। ওই ট্রেনটি রানাঘাট পর্যন্ত যায়। কিন্তু শীতের প্রকোপে গত কয়েক দিন ধরে ওই ট্রেন একরকম ফাঁতাই যাচ্ছে। একই ভাবে কলকাতা স্টেশন থেকে সাড়ে ৮টায় ছেড়ে ধনধান্য এক্সপ্রেস ট্রেনটি বহরমপুরে এসে পৌঁছায় ১২টা ২০মিনিটে। কুয়াশার কারণে ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময়ে বহরমপুরে পৌঁছতে পারছে না। সেই সঙ্গে ঠান্ডার কারণে যাত্রীও হচ্ছে না।
কিন্তু ট্রেন স্টেশনে পৌঁছনোর পরেও ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। স্টেশন থেকে রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ, যদি বা পাওয়া যাচ্ছে, রিকশার ভাড়া অনেক বেশি দাবি করা হচ্ছে। খুব ভোরে স্ট্যান্ডেও রিকশা মিলছে না। বহরমপুর রিকশা চালক সমিতির সভাপতি শান্তিপদ দত্ত বলেন, “ঠান্ডায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রিকশাচালকেরা। কনকনে হাওয়ায় বয়স্ক চালকরা সকাল-সন্ধ্যে রিকশা টানতে পারছেন না। এ ছাড়া সর্দি-কাশি-জ্বরে লেগেই রয়েছে।” তবে বহরমপুরে শীতের নতুন ফ্যাশন ‘টেরোরিস্ট ক্যাপ’। বহরমপুরের বিভিন্ন দোকানে ১০০ টাকায় বিকোচ্ছে, যা কিশোর-যুবকদের কাছে দারুণ আকর্ষণের। |