মোহন-অপেরা
চিমার ভলি এ বার মোহন-কর্তাদের
বুজ-মেরুনের ঘরশত্রু বিভীষণ নাকি ‘মোহন অপেরা’-র ‘বিবেক’!
কলকাতা ময়দানে আশি ও নব্বই দশকের ‘ক্রাউড পুলার’ চিমা ওকোরিকে কী নামে এ বার ডাকা হবে? বুধবার বিকেলের পর তা নিয়েই তীব্র বিতর্ক পাড়ায় পাড়ায়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও।
চিমার হাত ধরেই মোহনবাগান তাঁবুতে প্রথম বার জাতীয় লিগ। তাঁর হাত ধরেই ‘কিং কোবরা’ ওকোলি ওডাফার মাণ্ডবী নদীর তীর থেকে গঙ্গাপারের তাঁবুতে পা রাখা। যা ট্রফিহীন বাজারে বুক ফুলিয়ে ঢোকার পাসপোর্ট দিয়েছিল মোহনবাগান কর্তাদের। সেই চিমা ঘরশত্রু বিভীষণ বা ‘মোহন অপেরা’-র বিবেক হওয়ার মতো জায়গায় গেলেন কী ভাবে?
কারণটা সেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। যেখানে চিমার ওয়ালে বুধবার বিকেলের পর থেকেই জ্বলজ্বল করল মোহনবাগানের দুই শীর্ষ কর্তার নাম। কী নেই সেখানে! দুই কর্তার অপসারণ চেয়ে অনশনে বসার হুমকি থেকে শুরু করে ওডাফাকে আইনি সাহায্য না দিয়ে কর্তাদের অমানবিক মনোভাব প্রদর্শনের অভিযোগ। সঙ্গে গালাগাল। সত্তর দশকের মারকাটারি ছবিতে ধর্মেন্দ্র দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালনে যেমন হুঙ্কার ছাড়তেন ‘ম্যায় আ রহা হুঁ’, ঠিক সে ভাবেই মোহন সচিব এবং অর্থসচিবকে চিমার হুঙ্কার, “অঞ্জন মিত্র, দেবাশিস দত্ত কালকেই আমার প্রাপ্য অর্থ চাই। আমি দলবল নিয়ে আসছি।”
রাতে আনন্দবাজারের তরফে চিমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার যা বক্তব্য তা ওয়ালে পড়ে নিন। আর কিছু বলতে চাই না। ওডাফার সঙ্গে যা হচ্ছে তা কি ঠিক? প্রয়োজনে আদালতে যাব।”
তাঁর ফেসবুকের ওয়ালে এ দিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চিমা। ৯ ডিসেম্বরের ডার্বি ম্যাচে মোহনবাগানের দল তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে চিমার প্রশ্ন, “সে দিন দ্বিতীয়ার্ধে কার নির্দেশে মোহনবাগান মাঠে নামল না? তাঁর নাম জানানো হোক। ওই ব্যক্তি মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের কর্তা হিসাবে থাকার যোগ্য নন।” সঙ্গে পরামর্শ, “মোহনবাগান ক্লাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষিত এবং কমবয়সি কর্তা প্রয়োজন। দরকারে জোর খাটাতে হবে। কারণ, বর্তমান কর্তারা মোহনবাগানের মতো ক্লাবকে গাড্ডায় ফেলে দিয়েছেন। এখন ওডাফাকে বলি দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তৎপর। এরা কখনওই ক্লাবের ভবিষ্যৎ নন। ওঁরা পদত্যাগ করুন। না হলে আমরণ অনশন করতেও রাজি।”
এর পরেই ওডাফা ইস্যুতে অর্থসচিবকে চিমার বোমা, “দেবাশিস এই ঠান্ডায় ওডাফাকে আপনারা একা ছেড়ে দিয়ে দিল্লি যাতায়াত করছেন। আপনি টেলিফোনে বলেছিলেন ওডাফার জন্য আইনজীবী ঠিক করে দেবেন। কিন্তু কোথায় দেবাশিস? কোথায় অঞ্জন মিত্র? ওডাফা আর আমি এখন ক্লু-লেস। আমাদেরই এখন আইনজীবী খুঁজতে হবে। আপনারা দয়ামায়াহীন।” যা শুনে অর্থসচিব দেবাশিস দত্তর প্রতিক্রিয়া, “চিমা কী বলল তাতে যায় আসে না। আমি এখন ব্যস্ত ক্লাবের শাস্তি কী ভাবে তোলা যায় তা নিয়ে।”
জলবিহারে ওডাফা। শাস্তির মুখে দাঁড়িয়েও মোহন-অধিনায়ক
পাশে পেয়ে যাচ্ছেন চিমাকে। দুর্গাপুরে ছবি তুলেছেন বিকাশ মশান।
এক সপ্তাহ আগেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মোহন সমথর্কদের আদরের চিমা তাঁর ক্লায়েন্ট ওডাফা ওকোলির হয়ে ব্যাটন ধরেছিলেন। দাবি করেছিলেন, ওডাফা নির্দোষ। ৯ ডিসেম্বরের বিতর্কিত ডার্বিতে রেফারিকে কিছুই বলেননি বা আক্রমণ করেননি ওডাফা। রেফারির সিদ্ধান্তের সত্যতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই সেই চিমা হঠাৎ আক্রমণের মুখ ঘুরিয়ে দিলেন কেন?
ময়দানে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কে বা কারা ইতিমধ্যেই চিমার কানে তুলে দিয়েছেন মোহনবাগান কর্তারা ক্লাবকে বাঁচাতে আপাতত যতটা তৎপর, ওডাফাকে বাঁচাতে ততটা নয়। আর এতেই নিজের বাণিজ্যিক ক্ষতির আশঙ্কায় গোঁসা চিমার।
চিমার এ দিনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্রকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধছে। তবে ক্লাব ওডাফার পাশেই রয়েছে।” আর চিমার বকেয়া অর্থের প্রসঙ্গ? শুনে মোহন সচিব বলছেন, “এজেন্ট হিসাবে চিমার গত মরসুমের প্রাপ্য অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মরসুমের পঁচাত্তর শতাংশ পেমেন্ট হয়ে গেছে। বাকি পঁচিশ শতাংশও দিয়ে দেওয়া হবে।”
চিমার গোলা
“অঞ্জন মিত্র, দেবাশিস দত্ত কালকেই আমার প্রাপ্য অর্থ চাই। আমি কিন্তু দলবল নিয়ে আসছি।”
“সে দিন দ্বিতীয়ার্ধে কার নির্দেশে মোহনবাগান মাঠে নামল না? তাঁর নাম জানানো হোক।”
“শিক্ষিত এবং কমবয়সি কর্তা প্রয়োজন। দরকারে জোর খাটাতে হবে। বর্তমান কর্তারা ক্লাবকে গাড্ডায় ফেলে দিয়েছেন। এখন ওডাফাকে বলি দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তৎপর। ওঁরা পদত্যাগ করুন। না হলে আমরণ অনশন করতেও রাজি।”
“টেলিফোনে বলেছিলেন ওডাফার জন্য আইনজীবী ঠিক করে দেবেন। কিন্তু কোথায় দেবাশিস? কোথায় অঞ্জন মিত্র? ওডাফা আর আমি এখন ক্লু-লেস। আপনারা দয়ামায়াহীন।”
কর্তাদের পাল্টা
টুটু বসু: “চিমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। মন্তব্যের জন্য ও দুঃখপ্রকাশ করেছে। বলেছে ভুল হয়ে গেছে।”
অঞ্জন মিত্র: উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধছে। তবে ক্লাব ওডাফার পাশেই রয়েছে। এজেন্ট হিসাবে চিমার গত মরসুমের প্রাপ্য দেওয়া হয়েছে। এই মরসুমের পঁচাত্তর শতাংশ পেমেন্ট হয়ে গেছে। বাকি পঁচিশ শতাংশও দিয়ে দেওয়া হবে।”
দেবাশিস দত্ত: “চিমা কী বলল তাতে যায় আসে না। আমি এখন ব্যস্ত ক্লাবের শাস্তি কী ভাবে তোলা যায় তা নিয়ে।”
শুধু অঞ্জন-দেবাশিসই নন, চিমার এ দিনের বিস্ফোরক মন্তব্যে মোহনবাগান প্রেসিডেন্টও প্রবল অস্বস্তিতে। ১৯৯০ তে এই টুটুর হাত ধরেই মোহনবাগানের প্রথম বিদেশি হিসাবে চিমার আগমন। টুটু বসু রাতেই ফোনে কথা বলেন চিমার সঙ্গে। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “চিমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। মন্তব্যের জন্য ও দুঃখপ্রকাশ করেছে আমার কাছে। বলেছে ভুল হয়ে গেছে।”টুটুর দাবির পর বেশি রাতে চিমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলে দেন, “আমি এখন ঘুমোচ্ছি।” তবে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পোস্টও তুলে নেননি ফেসবুক থেকে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.