কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, কাকদ্বীপ-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অন্যতম সংযোগকারী পথ ডায়মন্ড হারবার রোড। এমনিতেই হাজার হাজার গাড়ির চাপে প্রায়ই যানজট হয় এখানে। তার উপরে বেহালা বাজারের কাছে একটি ভ্যাটের কারণে ডায়মন্ড হারবার রোড হঠাৎই সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। যার জেরে প্রায়ই স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে গাড়ির গতি। দিনের ব্যস্ত সময়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে বাস, লরি, অটো-সহ সব ধরনের গাড়ি। ভোগান্তি হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। পুরসভাকে এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘ দিন ধরেই অনুরোধ করছে পুলিশ। কিন্তু এখনও কিছুই হয়ে ওঠেনি। এ দিকে, সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা। সেখানে যাওয়ার মূল রাস্তা এটিই। আর মাত্র কয়েক দিনে হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তা ধরেই গঙ্গাসাগর যাবেন। তার মধ্যে রাস্তার এই হাল থাকায় রীতিমতো কপালে ভাঁজ পুলিশ-কর্তাদের।
পুর-প্রশাসনের বক্তব্য, ভ্যাট তো আর কারও বাড়ির সামনে হতে পারে না। রাস্তার পাশেই থাকে। এখানেও ছিল। কিন্তু জনা পাঁচেক হকারের জন্য ওই ভ্যাটটি ফুটপাথের কাছ থেকে সরে রাস্তার উপরে এসে পড়েছে। হকার না সরলে তাদের কিছু করার নেই। এ ভাবেই চলতে হবে। |
জঞ্জালে ভরেছে পথ। বেহালা বাজারের সামনে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
বেহালার বাসিন্দা সিন্ধুনীল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “ওই পথেই কলেজ যেতে হয় প্রতিদিন। বাসে উঠলেই গায়ে যেন জ্বর আসে। এক-এক দিন ওইটুকু পথ পেরোতে প্রায় ৪৫ মিনিট লেগে যায়।” মহাকরণে কর্মরত এক পদস্থ অফিসার থাকেন বেহালা চৌরাস্তার কাছে। তিনি বলেন, “সকাল ১০টায় মহাকরণে পৌঁছতে হলে সাড়ে ৮টায় বাড়ি থেকে বেরোতে হয়। পুরসভা ও পুলিশকে এ ব্যাপারে একাধিক বার বলা হয়েছে। তবুও দুর্ভোগ কাটছে না।” তিনি জানান, রাস্তার উপরে ওই ভ্যাটের জন্য কোনও কোনও দিন বেহালা বাজার থেকে দু-তিন কিলোমিটার গাড়ির লাইন পড়ে যায়।
কী বলছে ট্রাফিক পুলিশ? কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “ভ্যাটের ময়লা বেশি জমে গেলে সমস্যা আরও বাড়ে। রাস্তা প্রস্থ কমে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।” তাঁর মতে, ভ্যাটটা আরও একটু ফুটপাথের দিকে পিছিয়ে দিলে সমস্যা মেটে। এ নিয়ে পুরসভাকে একাধিক বার চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন দিলীপবাবু। বেহালায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ভ্যাট তো আছেই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ। এতে যানজট বাড়ছে।”
কেন সরানো হচ্ছে না ওই ভ্যাট? “কোথায় সরানো হবে?” পাল্টা প্রশ্ন পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার অসীম মণ্ডলের। তাঁর বক্তব্য, “ভ্যাটটা তো চালু আছে। প্রতি দিনই সেখানে ময়লা পড়ছে। রাস্তার যানজট এড়াতে ভ্যাটটা তিন-চার ফুট সরালে ভাল হত। কিন্তু তা করার উপায় নেই।”
কেন?
পুরসভার এক অফিসার বলেন, “তা হলে তো ওই ভ্যাটের পিছনে থাকা চার-পাঁচ জন হকারকে সরাতে হবে। সরকারের ঘোষিত নীতি কোনও হকারকে সরানো যাবে না। তাই উপায় নেই। এ ভাবেই চালাতে হচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। প্রায় তিন মাস আগে পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ ওই এলাকায় গিয়ে সব কিছু দেখেও এসেছেন। তবুও কিছু করা যায়নি। এ ব্যাপারে মেয়রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সবটাই জানি। ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কয়েক জন হকারকে একটু সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। দেখা যাক, কী হয়।” |