পাড়াতেই ঘুরছে অভিযুক্ত
গ্রেফতারে পক্ষপাত, ফের বিতর্কে কড়েয়া
থানার কর্মীদের মুখ বদলেছে। কিন্তু থানার চরিত্র-বদল হয়নি। বুধবার এলাকার এক অভিযোগকারীকে গ্রেফতার করে ফের বিতর্কে কড়েয়া থানা। যে থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, ধর্ষণে অভিযুক্তের পক্ষ নিয়ে অভিযোগকারী মির আমিনুল ইসলামকে হেনস্থা করে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার।
বুধবার কী ঘটেছে কড়েয়ায়?
এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, এক যুবকের পেটে রিভলভারের নল ঠেকিয়ে গুলি চালাতে গিয়েছিল জনাকয়েক দুষ্কৃতী। হাতের ধাক্কায় কোনওমতে অস্ত্রটি সরিয়ে দেন বছর তিরিশের ওই যুবক। তাঁর বাঁ হাতের তালুতে পড়ে চপারের কোপ। গলগলিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে মুহূর্তে। বাবাকে জখম হতে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে তখন থরথর করে কাঁপছে তাঁর বছর পাঁচেকের ছেলেটি।
কড়েয়ার শামসুল হুদা রোডে ঘটে এমনই ঘটনা। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে এক জনকে গ্রেফতার করেছে কড়েয়া থানার পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ধৃতের পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার পরে জখম ফৈয়াজ আহমেদ খানের দাদা আরমান কড়েয়া থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকেই গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য, আরমানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগ করেছেন আবিদ হোসেন নামের এক যুবক। আবিদের বিরুদ্ধেই ফৈয়াজের উপরে হামলার অভিযোগ জানাতে থানায় এসেছিলেন আরমান। এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য আবিদকে গ্রেফতার করা হয়নি।

জখম ফৈয়াজ আহমেদ খান। বুধবার পিজি-তে। — নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে কড়েয়াতেই পুলিশ-দুষ্কৃতী আঁতাতের ‘নির্যাতনে’ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে থানার সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্থানীয় বাসিন্দা মির আমিনুল ইসলাম। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরে জনতার তীব্র ক্ষোভ, সমালোচনার জেরে কড়েয়ার এসি, ওসি-কে বদলি করে লালবাজার। থানার তিন পুলিশকর্মী সাসপেন্ড হন। বিভাগীয় তদন্তও চলছে। এ দিন অভিযোগকারীকে গ্রেফতার করায় ফের ওই থানার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিব্রত লালবাজার।
অভিযোগ, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ছেলে আয়াতকে টিউশন পড়াতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফৈয়াজ আহমেদ খান। শামসুল হুদা রোডে লোহাপুলের কাছে আচমকা চার দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে। ফৈয়াজকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পেটে রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি করার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। নিজেকে বাঁচানোর জন্য রিভলভারের বাঁট চেপে ধরেন ওই যুবক। সেই সময়েই ধারালো অস্ত্রে তাঁর বাঁ হাতের তালুতে আঘাত করা হয়। আয়াতকে অপহরণের চেষ্টাও করে দুষ্কৃতীরা। ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে শিশুটি। ভিড় জমে যায় সেখানে। বেগতিক দেখে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। পরে হাসপাতালে ফৈয়াজের বাঁ হাতের চিরে যাওয়া তালুতে সেলাই করা হয়।
লালবাজার সূত্রে খবর, নিউ কাশিয়াবাগান লেন এলাকার একটি ক্লাবঘরের ছাদ সারানো ও পাঁচিল উঁচু করা নিয়ে দু’পক্ষের গোলমাল বাধে। বিষয়টি কোর্টের বিচারাধীন। পুলিশের কাছে জখম যুবকের আত্মীয় আরমান খান দাবি করেন, ওই ক্লাবঘরের নির্মাণ বা মেরামতি নিয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। দু’পক্ষকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের এই পদক্ষেপ নিয়েই। তাঁরা বলছেন, আরমানকে গ্রেফতার করা হলেও আবিদকে কেন গ্রেফতার করা হল না? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “আবিদ হুসেন নামে এক যুবকের উপরে হামলার অভিযোগে আরমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবিদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে আরমান। তাঁর অভিযোগ, আবিদ তাঁর ভাইয়ের উপরে হামলা চালিয়েছে। আবিদকেও গ্রেফতার করা হবে।” পুলিশকর্তা আবিদকে গ্রেফতারের কথা বললেও, এ দিন ওই যুবককে এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ফৈয়াজই দলবল নিয়ে আমার উপরে হামলা করতে যায়। চপারের আঘাতে আমার দু’হাতেই চোট লেগেছে। সেলাইও পড়েছে। নিজের অস্ত্রেই জখম হয়েছে ফৈয়াজ।”
আরমান খানের অভিযোগ, ওই নির্মাণ ভাঙতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মার্চ মাসে হাইকোর্টে এ বিষয়ে আবেদন দাখিল করার পর থেকেই ওই এলাকার কয়েকটি পরিবার প্রাণের ভয়ে ‘ঘরছাড়া’ রয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.