কৃষি দফতরের পরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি। ফের বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই সরকারি দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের অভিযোগ উঠল।
বর্ধমান কেন্দ্রীয় সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের দফতরের আধিকারিকেরাও জানাতে পারেননি, যে ৮৮ জনকে নিয়োগ করা হচ্ছে, তাঁদের ঠিক কী ভাবে নির্বাচন করা হল। এই নিয়োগ বে-আইনি দাবি করে মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে স্মারকলিপিও দিয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা যুব কংগ্রেস।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ওই রকম বেশ কিছু লোককে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে চাকরি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এঁদের নিয়োগের জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই কমিটিই এঁদের ইন্টারভিউ নিয়েছে।”
৮৮ জনের নামের যে তালিকা তৈরি হয়েছে তা থেকে পরিষ্কার, বর্ধমানের বাইরে থেকে বহু জনকে নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা শহরের নানা জায়গার লোক রয়েছে। যুব কংগ্রেসের অভিযোগ, বর্ধমানের মাত্র ৪-৫ জন ছাড়া বাদ বাকি সমস্ত নিয়োগ হয়েছে বাইরে থেকে। কী করে এই ধরনের বেআইনি কাজ হল, তার কৈফিয়ত দাবি করেছে তারা।
প্রার্থিতালিকায় রয়েছেন বেশি বা কম বয়সের লোকেরাও। ১৯৬৮ বা ১৯৭০ সালে জন্ম, এমন অনেকের নাম তালিকায় আছে। অনেকের জন্ম-তারিখ দেওয়া থাকলেও, সাল উল্লেখ করা নেই। যুব কংগ্রেসের অভিযোগ, এমন বেশ কিছু প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে, যাঁদের বয়েস সরকারি চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট বয়েসের চেয়ে বেশি কারও বা তার চেয়ে অনেক কম। যে প্রার্থীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট বয়সে নেই, তাঁদেরই জন্মসাল চেপে যাওয়া হয়েছে।
সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “প্রার্থীরা কমিটির সামনে যে কাগজপত্র পেশ করেছেন, তার ভিত্তিতেই নিয়োগ তালিকায় নাম তোলা হয়েছে। তবে যদি দেখা যায় তাতে গোলমাল আছে, প্রার্থীর বয়েস ২১ বছরের কম বা ৪০ বছরের বেশি, তা হলে নাম বাতিল করা হবে।” ‘গোলমাল’ যে আছে, তা অবশ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীরাই ঠারেঠোরে বলছেন। তবে শাসকদলের বিষনজরে পড়ার ভয়ে তাঁদের কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন। যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ ভট্টাচার্যর প্রশ্ন, “কী ভাবে ৮৮ জনকে চতুর্থ শ্রেণিত নিয়োগ করা হল, যেখানে নিয়োগের আগে কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি? নেওয়া হয়নি কোনও লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষাও?”
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার পাহাড়ি চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ তালিকা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি জানান, দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্ল্যানিং) তাঁদের ৮৮ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। নামগুলি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ওই দফতর থেকেই। তাঁর বক্তব্য, “নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ব্যাপারে আমার কিছু করা বা বলা সম্ভব নয়।”
তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের কি কোনও লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা হয়েছিল? পাহাড়িবাবুর জবাব, “বললাম তো, এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়। যা হয়েছে, উপর মহলের নির্দেশেই।” আইএনটিটিইউসি নেতা তথা জেলার অন্যতম মন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, “এর আগে এমন কিছু লোককে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আসানসোল শাখায় নিয়োগ করার সময়েও কিছু বিতর্ক হয়েছিল। পরে ঠিক হয়ে যায়। তালিকাভুক্তেরা নিয়োগপত্রও পেয়ে গিয়েছেন।”
এ বারও তারই পুনরাবৃত্তি হবে, ধরেই নেওয়া যায়। |