শেষ বার যখন এমন ঠান্ডা পড়েছিল, তখনও ঠান্ডাযুদ্ধ শেষ হয়নি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অটুট ছিল। ত্রিশ বছর পর ফের শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির তাপমাত্রা নামল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা কি না চলতি বছরে শীতলতম দিন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ত্রিশ বছরের মধ্যে এই সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এতটা নামেনি। সেই ১৯৮৩ সালের ৭ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমেছিল।
এক সপ্তাহ ধরেই দার্জিলিঙের তাপমাত্রা কম থাকায় পর্যটকদের ঢল নেমেছে। শৈলশহরের হোটেল, অতিথি নিবাসেও পর্যটক ঠাসা। ট্যুর অপারেটার ভাস্কর দাস বলেন, “দার্জিলিঙে বরফ পড়তে পারে এই আশায় ভিড় করেছেন অনেকে।” কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিম শাখা জানিয়েছে, পাহাড়ে তুষারপাতের অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। তবে ঘন কুয়াশায় ট্রেন, বাস ও বিমান যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। বাগডোগরায় কোনও বিমান ওঠানামা করতে পারেনি। |
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ২০০৩ সালে সমতলের তাপমাত্রা অনেকটা কমে। তবে তা ছিল ৫ ডিগ্রির থেকে সামান্য বেশি। গত ১০০ বছরে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি এলাকায় ১৯০৫ সালে মাত্র একবারই তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির থেকে কমে ২ ডিগ্রি হয়েছিল। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, পারদে সর্বনিম্ন যে তাপমাত্রা ধরা পড়েছে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল তার থেকেও কম। সেই সঙ্গে ছিল কুয়াশা।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “রেকর্ড খুঁজে দেখা দিয়েছে ১৯৮৩ সালের পরে তাপমাত্রা এক ধাক্কায় এতটা নেমে যায়নি। দু’দিন এই পরিস্থিতি চলবে। পরে কুয়াশা কমলেও তাপমাত্রা কমই থাকবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মতোই সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমবে।” গোপীনাথবাবু বলেন, “উত্তরের হাওয়া বইতে থাকায় পারদে যা তাপমাত্রা ছিল তার থেকেও কম ঠান্ডা ছিল উত্তরবঙ্গের সর্বত্র। পরিভাষায় একে অনুভূত তাপমাত্রা বলা হয়।”
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই দিনে ঝলমলে আকাশ এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল। সোমবার এক ধাক্কায় তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার কারণ কী? আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, গত বুধবার থেকেই উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের আকাশে জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকতে শুরু করে। গত শনিবার থেকে সেটি অসমের দিকে সরতে শুরু করে। ঝঞ্ঝাটি পুরোপুরি সরে গেলেও উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের দিকে উত্তরের হাওয়াকে টেনে এনেছে। হিমালয় থেকে আসা হাওয়ার কারণেই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। একই কারণে দিল্লিতেও রেকর্ড পরিমাণ মেনেছে তাপমাত্রার পারদ। উত্তর ভারত তথা দিল্লি হয়ে সেই হাওয়া ঢুকেছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতেও। সেই সঙ্গে আকাশে মেঘ না থাকায় রাতের তাপমাত্রা পাল্লা দিয়ে কমেছে এবং কুয়াশার চাদরে ঢেকেছে উত্তরবঙ্গ। বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিক বলেন, “কুয়াশা ঢাকা থাকায় স্বাভাবিক দৃশ্যমানতা ছিল না। সব ক’টি বিমানই বাতিল করা হয়।”
জলপাইগুড়ির প্রাণকেন্দ্র কদমতলা কিংবা শিলিগুড়ির হিলকাটর্র্ রোড সোমবার সকাল থেকেই ছিল সুনসান। কুয়াশায় ঢাকা রাস্তা দিয়ে সকাল ১০টাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গিয়েছে অনেক গাড়িকে। দুপুরেও রাস্তার পাশে কাগজ, পিচবোর্ড বা টায়ার জড়ো করে আগুন পোহাতে দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরে। এদিন স্কুল শুরুর পরেই বেশ কয়েকটি স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় জলপাইগুড়িতে। আগামী এক দু’দিন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সকালের পরিবর্তে দুপুর থেকে স্কুল শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মালদহ, বালুরঘাট, রায়গঞ্জে এ দিন সরকারি দফতরেও হাজিরা ছিল কম। দুপুরের পরে রোদ উঠলেও কনকনে হাওয়া ছিল সারাক্ষণই।
এদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সমতলের শহরগুলির রাস্তা, বাজারে অন্য দিনের তুলনায় মানুষ জন কম থাকলেও বিপরীত ছবি দেখা গিয়েছে দার্জিলিঙে। কুয়াশায় ঢাকা ম্যালের রাস্তায় ঢল নেমেছিল পর্যটকের। টুপি, মাফলারে ঢেকে, পুলওভার পরে দেশবিদেশের পর্যটকদের ঠান্ডা উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে। |