বুদ্ধকে কটাক্ষ পার্থের |
সিপিএমকে নিষিদ্ধ করার ডাক দিলেন শুভেন্দু
|
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সিপিএমের লোকেদের ‘সামাজিক বয়কট’ করার নিদান দিয়েছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এক ধাপ এগিয়ে এ বার গোটা সিপিএমকেই ‘নিষিদ্ধ’ করার আহ্বান জানালেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার নেতাইয়ে শহিদ স্মরণের মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “মহামান্য হাইকোর্ট আগেই বলেছে, সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিস থেকে সশস্ত্র শিবির বসানো হয়েছিল। সেখান থেকে গুলি ছুড়ে মারা হয়েছিল ন’জনকে। এমন ঘটনা যারা ঘটায়, তাদের নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।” নেতাই-কাণ্ডে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ দেওয়ারও দাবি তোলেন তিনি। |
নেতাই গ্রামে শহিদ-স্মরণে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
গত শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরে যেখানে সভা করতে গিয়ে ভিড়ে গাড়ি ছেড়ে মোটরবাইকের পিছনে সওয়ার হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু, নন্দীগ্রাম লাগোয়া সেই চণ্ডীপুরেও এ দিন শহিদ স্মরণের সভা করে তৃণমূল। আসলে যে তা সিপিএমের পাল্টা সভা, তা রাজ্য যুব তৃণমূল সভাপতি শুভেন্দুর কথায় পরিষ্কার। নেতাই থেকে চণ্ডীপুরের মঞ্চে হাজির হয়েই তিনি বলেন, “সিপিএমের সভার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এত মানুষ জড়ো হয়ে বুদ্ধদেবকে জবাব দিয়েছে।” হুগলির ধনেখালিতে শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “মোটরবাইকে চাপলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হওয়া যায় না।”
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাইয়ে সিপিএমের ‘সশস্ত্র শিবির’ থেকে ছুটে আসা এলোপাথাড়ি গুলিতে চার মহিলা-সহ ন’জন নিহত হয়েছিলেন। আহত ২৮ জন। এ দিন ছিল নেতাই-গণহত্যার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। সকালে শুভেন্দুর নেতৃত্বে লালগড় থেকে নেতাই পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। দুপুরে ‘নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি’র উদ্যোগে স্মরণসভা। যদিও স্মরণের চেয়ে রাজনৈতিক আক্রমণের মাত্রাই ছিল বেশি। শুধু সিপিএম নয়, নাম না করে কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “সিবিআই চার্জশিট দিলেও এখনও আট জন অভিযুক্ত ধরা পড়েনি। যে সব পরিযায়ী নেতা-নেত্রী লালগড়ে এসে ঘুরে যাচ্ছেন, তাঁদের বলছি বিষয়টি দেখতে।” অস্ত্র সরবরাহে জড়িতদেরও গ্রেফতারের দাবি তুলে তমলুকের সাংসদ বলেন, “ওই অস্ত্র সরবরাহকারীদের নেতা সুশান্ত ঘোষ আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ওঁদের বিরুদ্ধেও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে হবে।” |
চণ্ডীপুরে তৃণমূলের জনসভায়
শিশির অধিকারী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস |
নেতাই-নন্দীগ্রামের শহিদ স্মরণে এ দিনই চণ্ডীপুরে
সভা করেছে তৃণমূল। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
|
চণ্ডীপুরে এ দিন জমায়েত ছিল প্রায় শনিবারের সিপিএমের সভার মতোই প্রায় হাজার তিরিশেক। যদিও তৃণমূল নেতারা তা মানতে নারাজ। ধনেখালিতে সিপিএমের হাতে ‘আক্রান্ত’ কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পার্থবাবু দাবি করেন, “শনিবার ওখানে এমন কিছু ভিড় ছিল না।” সরাসরি বুদ্ধবাবুর নাম না করেও তাঁর মন্তব্য, “যাদবপুরে যখন ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, ডাকাতির এক ঘটনায় যেতে গিয়ে উনি ভ্যানরিকশায় চড়ে বসেছিলেন। ডাকাতের টিঁকিও ছুঁতে পারেননি। উনি নন্দীগ্রামে যাননি। জঙ্গলমহলেও সে ভাবে যাননি। এখন দল বলেছে বলে ভিড়ের ভান করতে বাইকে চড়ে বসেছেন। ” |
নেতাই গ্রামে শহিদ স্মরণে পদযাত্রায় শুভেন্দু অধিকারী-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
রাজ্য রাজনীতিতে সৌজন্যের অভাব নিয়ে এর আগেও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন বুদ্ধবাবুর প্রতি প্রবীণ তৃণমূল নেতা শিশির অধিকারীর আক্রমণের ভাষা-ভঙ্গিও সেই প্রশ্ন ফের উস্কে দিয়েছে। প্রায় হুমকির সুরে তিনি বলেন, “সে দিন (শনিবার) সভার জন্য যানজটে আমাদের দলের বিধায়ক, সহ-সভাধিপতি আড়াই ঘণ্টা আটকে ছিলেন। ইচ্ছা করলে এক সেকেন্ডের মধ্যে সব নয়ানজুলিতে ফেলে পরিষ্কার করে দিতে
পারতাম।” ওই সভার জন্য পর্যটকদের
শ’দুয়েক গাড়ি আটকে পড়েছিল অভিযোগ করে শুভেন্দুর মন্তব্য, “সে দিন মাৎস্যন্যায় হয়েছিল।” শিশির-শুভেন্দুর ‘খাসতালুক’ পূর্ব মেদিনীপুরে এই ‘মাৎস্যন্যায়’ হাওয়া ঘোরার ইঙ্গিত কি না, সেই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। |
|