এক নয়, দুই নয়, একে একে চার!
আজ পর্যন্ত ফুটবলবিশ্বে যা কেউ কোনও দিন করে দেখাতে পারেনি, জুরিখে সোমবার রাতে আর্জেন্তিনীয় মহাতারকা ঠিক সেটাই করে দেখালেন। রাতারাতি জিদান-রোনাল্ডোকে ইতিহাসের নোটবুকে পাঠিয়ে নিজেই সৃষ্টি করলেন এক নতুন ইতিহাস।
ব্যালন ডি’অরের পৃথিবীতে এত দিন ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান, ব্রাজিলের রোনাল্ডোরই রমরমা ছিল। দু’জনই জিতেছিলেন তিন বার করে। কে জানত, পঁচিশ বছরেই তাঁদের পিছনে ফেলে দেবেন মেসি। পরপর চার বার ব্যালন ডি’অর জিতে জন্ম দেবেন এক অমর কীর্তির!
|
এখন যেন তাঁরই সম্পত্তি। সোমবার জুরিখে ব্যালন ডি’অরে চোখ মেসির। |
জুরিখের রাতে ঘোষণাটা হওয়ার পরপরই ফুটবলবিশ্বে গবেষণা চালু হয়ে গিয়েছে যে, সর্বকালের সেরা ফুটবলারের শিরোপা এ বার মেসির হাতেই তুলে দিতে হবে কি না। সঙ্গে চরম বিস্ময় কী ভাবে সম্ভব এই জিনিস? প্যাট্রিক ভিয়েরা টুইট করেছেন, ‘একজন অবিশ্বাস্য ফুটবলারের অবিশ্বাস্য কৃতিত্ব।’ সেস ফাব্রেগাস আবার লিখেছেন, ‘অভিনন্দন মেসি। তোমার এটা প্রাপ্য।’ প্রাক্তন ফুটবলার লুই সাহার টুইট, “ফিফা এ বার মেসির জন্য নতুন কোনও পুরস্কার আমদানি করুক!”
আর মহানায়ক নিজে কী বলছেন? নিজেও কি তিনি বিস্মিত নন? “সত্যি বলতে, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে পরপর চার বার আমি এই পুরস্কারটা জিতলাম,” বলে ফেলেছেন মেসি। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার হিসেব দিচ্ছেন, এটা অতি স্বাভাবিক। ঘটারই ছিল। এবং বক্তব্যকে আরও জোরালো করতে মেসির রেকর্ডনামাও তুলে দেওয়া হচ্ছে চটজলদি। বেয়ার লেভারকুসেনের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে গত মরসুমে একাই পাঁচ গোল করে রেকর্ড। |
চারে চার
মুঠোয় ইতিহাস। সোনার বল নিয়ে মেসি। |
গার্ড মুলারের চল্লিশ বছরের রেকর্ডকে চূর্ণ করে এক মরসুমে ৯১ গোল (আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে)! রুদ ফান নিস্তেলরুইয়ের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক মরসুমে ১২ গোলের রেকর্ডও এখন ইতিহাস। মেসির পাশে গোলসংখ্যা ১৪।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আগাম কোনও আঁচ পেয়েছিলেন কি না, কে জানে। নইলে মহাযুদ্ধের প্রাক্-লগ্নে তাঁর গলা কেন এত বিনয়ী শোনাবে? তিন নম্বর প্রতিযোগী হিসেবে আন্দ্রে ইনিয়েস্তার নাম থাকলেও যুদ্ধটা মূলত ছিল দ্বিমুখী। মেসি? না রোনাল্ডো? গ্ল্যামারের আকর্ষণেও বাকি দুইয়ের চেয়ে ইনিয়েস্তা ছিলেন আলোকবর্ষ দূরে। |
এ বারও শূন্য হাতে ফিরছেন রোনাল্ডো। সোমবার। |
রোনাল্ডোও যুদ্ধের কোনও আঁচ টের পেতে দেননি। রুশ বান্ধবী আইরিনা শেক-এর হাত ধরে ব্যালন ডি’অরের লাল গালিচায় ঢুকে রোনাল্ডো বলে ফেলেন, “পুরস্কারটা না পেলেও আমার কোনও দুঃখ হবে না। আমার জীবন আগে যা ছিল, তেমনই থাকবে। আর মেসি, ইনিয়েস্তার মতো বিরাট মাপের প্লেয়ারদের সঙ্গে একই মঞ্চে আমি ওঠার সুযোগ পাচ্ছি, এটাই তো বিরাট গর্বের!”
পুরস্কার শেষ পর্যন্ত পাননি রোনাল্ডো। চার বছর পর গত মরসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা দেওয়ার পরেও নয়। কী করা যাবে, তাঁর প্রজন্মে যে একজন লিওনেল মেসি আছে!
|
ফিফা বিশ্ব ১১ |
ইকর কাসিয়াস, দানি আলভেজ, মার্সেলো ভিয়েরা, জেরার পিকে, সের্জিও রামোস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, জাবি আলন্সো, জাভি হার্নান্দেজ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, রাদামেল ফালকাও, লিওনেল মেসি
বর্ষসেরা কোচ: দেল বস্কি |
|