মায়ের উপর ডাইন ভর করেছে, এই অপবাদ দিয়ে ছেলের মৃতদেহ দু’দিন ফেলে রাখা হয়েছিল ঘরে। দাহ করার আগে মায়ের বিচার হবে বলে নিদান দিয়েছিলেন মোড়লরা। পরে পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দেহ দাহ করা হয়। ক’দিন আগে শালবনি থানার মৌপালে ঘটেছিল এই ঘটনা। সেখানেই সোমবার কুসংস্কার বিরোধী সচেতনতা শিবির করল প্রশাসন। সামিল হল স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা। মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ চত্বরে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা কমিটি আয়োজিত শিবিরে ছিলেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত, শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস, স্থানীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। মহকুমাশাসক বলেন, “সমাজের একাংশে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। এমন শিবিরের ফলে ওই ধারণা দূর হবে।” |
দীর্ঘ রোগে ভুগছিলেন মৌপালের আদিবাসী পাড়ার যুবক ক্ষুদিরাম কিস্কু। গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিন বিকেল থেকে ১ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত মৃতদেহ দাহ করেননি পরিবারের লোকেরা। নিথর দেহ পড়েছিল ঘরে। রাত জাগছিলেন পরিবারের লোকেরা। গ্রামের মোড়লরা ক্ষুদিরামের মাকে ডাইন অপবাদ দিয়ে নিদান হেঁকেছিলেন, দেহ দাহ করার আগে জানগুরুকে ডাকতে হবে। গ্রামে বিচারসভা বসবে। জানগুরু যা নির্দেশ দেবেন, সেই ভাবেই কাজ হবে। ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে গ্রামে পৌঁছয় পুলিশ। শেষমেশ পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ১ জানুয়ারি দুপুরে ওই আদিবাসী যুবকের দেহ দাহ করা হয়।
শুধু মৌপাল নয়, সম্প্রতি জেলারই দাসপুরে ডাইন অপবাদে তিন জনকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আগে ডেবরায় ডাইন অপবাদ দিয়ে অত্যাচারের ঘটনা ঘটে। একবার ডাইন কি না প্রমাণ করতে জানগুরুর কাছে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়। প্রশাসনের বক্তব্য, সচেতনতা বাড়িয়েই এই সব ঘটনা এড়ানো সম্ভব। উপস্থিত মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়া বলেন, “কুসংস্কার দূর করতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।” |