গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • গুড়াপ |
পুলিশের কাছে বারবার বলা সত্ত্বেও কী ভাবে সিপিএমের হাতে ‘আক্রান্ত’ হতে হচ্ছে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীকে হাতের সামনে পেয়ে সেই ক্ষোভ উজাড় করে দিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। হুগলির ধনেখালি এবং গুড়াপের কয়েকটি গ্রামে দিন দু’য়েক আগে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে সিপিএমের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। প্রহৃত হয়ে কয়েক জন হাসপাতালেও ভর্তি। সোমবার ওই সমস্ত গ্রামের আক্রান্ত দলীয় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অত্যাচারের কথা বলতে গিয়ে কেউ কেউ কেঁদেও ফেলেন মন্ত্রীর সামনে। দলের লোকজনের মুখে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পেয়ে পার্থবাবু সাফ বলেন, “কেন ডায়েরি করা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।”
গত শনিবার ধনেখালি এবং গুড়াপের খাঁপুর, বড় খাঁপুর, মাজিনান-সহ কয়েকটি গ্রামে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে সিপিএমের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বড় খাঁপুড়ের তৃণমূল সমর্থক অনির্বাণ ঘোষ এবং তাঁর দাদা অরিন্দমকে মারধর করা হয়। এ দিন ওই বাড়িতে যান পার্থবাবু। অনির্বাণের স্ত্রী সোমা বলেন, “বেশ কয়েক দিন ধরেই আমাদের হুমকি দিচ্ছিল সিপিএমের লোকেরা। পুলিশকে ডায়েরি করে তা জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কিছুই করল না। ওরা আমাদের বাড়িতে হামলা করল। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভয়ে ওকে স্কুলে পাঠাতে পারছি না।” মহসিন মল্লিকের মা জাহানারা বেগমের অভিযোগ, “কান থেকে দুল ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।” |
আবদুল্লা মল্লিকের বাড়িতেও ভাঙচুর, লুঠপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। পার্থবাবু বলেন, “আবার ক্ষমতা দখলের নামে সংখ্যালঘু মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে সিপিএম। ধনেখালিতে গত ৩৫ বছর ওরা সন্ত্রাস করলেও গত দেড় বছরে এই এলাকা একেবারেই শান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবার ওরা অশান্তি করছে।” ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি দলের সহকর্মীরাই চাঁদা তুলে সারিয়ে দেবেন।” এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধায়ক তথা দলের নেতা তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্র, দিলীপ যাদবদের নির্দেশও দেন পার্থবাবু।
বছর দু’য়েক আগে ক্ষুদিরাম হেমব্রম নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। শনিবার তাঁর স্ত্রী মালতীদেবীর উপরেও সিপিএমের লোকজন হামলা করে বলে অভিযোগ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তৃণমূল নেতা হেমাকর ঘোষের হাতে অস্ত্রের কোপ পড়ে। ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। ওই হাসপাতালেও যান শিল্পমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ক্ষুদিরামের খুনের অভিযোগে ২২ জন সিপিএম সমর্থক গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিছু দিন আগে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেই তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন দলের রাজ্যনেতা তথাগত রায়ের নেতৃত্বে।
নাম না করে তথাগতকে একহাত নিয়ে পার্থ বলেন, “যাঁরা টিভিতে প্রতিদিন শান্তির বার্তা দিচ্ছেন, তাঁরাই হানাদার, খুনিদের দলে যোগ দেওয়ান।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানান, ‘সিপিএমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’র প্রতিবাদে এবং রাজ্যে ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে’ আগামী ২০ জানুয়ারি পোলবার আলিনগরে জনসভা করবেন পার্থবাবু। উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর আলিনগরেই সভা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। |