|
|
|
|
ফের রাষ্ট্রপতি শাসনের ছায়া ঝাড়খণ্ডে |
ধীরে চলতে চাইছে সব পক্ষই |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
ঝাড়খণ্ডে ফের রাষ্ট্রপতি শাসন অনিবার্য হয়ে উঠছে।
এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে বিজেপি যদি শেষ মুহূর্তে ‘গুরুজি’ শিবু সোরেনের সাহায্য নিয়ে তাঁর পুত্র তথা সদ্যপ্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে পারে, তবে সরকার আপাতত বেঁচে যেতে পারে। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী দলের ভারপ্রাপ্ত নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানকে এ জন্য রাঁচি পাঠিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু লালকৃষ্ণ আডবাণী, যশবন্ত সিন্হার মতো শীর্ষ নেতারা হেমন্তের কাছে আত্মসমর্পণ করতে একেবারেই নারাজ। আঠাশ মাস আগে যখন ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার গড়ার জন্য জেএমএমের সঙ্গে আঁতাঁত করেছিল, তখনও আপত্তি ছিল আডবাণী-যশবন্তদের। কিন্তু গডকড়ী সে সময় সঙ্ঘের সমর্থন নিয়ে জেএমএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন।
এই অবস্থায় ধীরে চলতে চান মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকেও তিনি সেটাই বুঝিয়েছেন। অর্জুনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু হয়ে পড়লেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে নারাজ। সে ক্ষেত্রে তাঁকে রাজ্যপাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলবেন। সূত্রের খবর, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সেই পরীক্ষায় ‘পাশ’ করার ব্যাপারে নিশ্চিত অর্জুন।
কিন্তু তা যদি না হয়?
সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকেই এগিয়ে যাবে ঝাড়খণ্ড।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কোনও রকম তাড়াহুড়ো করতে নারাজ। তারা ঝাড়খণ্ডে বিজেপি-জেএমএম সরকারকে ফেলতে উৎসাহী হলেও ১৩ জন বিধায়ক নিয়ে এখনই সরকার গড়ার কৌশল নিচ্ছে না। কংগ্রেস চাইছে, রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হোক। তার কিছু দিন পরে ধীরেসুস্থে সরকার গড়ার চেষ্টা শুরু করা যেতে পারে। |
ঝাড়খণ্ড অঙ্ক |
মোট আসন |
৮২ |
সরকার গড়তে প্রয়োজন |
৪২ |
বিজেপি |
১৮ |
জেএমএম |
১৮ |
কংগ্রেস |
১৩ |
ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা |
১১ |
এজেএসইউ |
৬ |
আরজেডি |
৫ |
সংযুক্ত জনতা দল |
২ |
সিপিআইএমএল |
১ |
নির্দল ও অন্যান্য |
৭ |
মনোনীত |
১ |
|
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ বালমুচু আজ সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রদীপ এবং কংগ্রেস নেতা রাজেন্দ্র সিংহ দু’জনেই বলেন, “সরকার গড়ার চেয়ে বেশি জরুরি বিজেপির অপশাসন থেকে রাজ্যকে মুক্ত করা।” কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য নেতারা হেমন্তের অধীনে থাকতে নারাজ। তার বদলে শিবু সোরেনকে ফের মুখ্যমন্ত্রী করা হলে তবু সেটা মানতে পারেন তাঁরা। কিন্তু হাইকম্যান্ড আবার শিবুর মতো অভিযুক্ত নেতাকে মানতে নারাজ।
এই পরিস্থিতিতে ৮১ সদস্যের বিধানসভায় (এক জন মনোনীত) রাজ্য কংগ্রেস নেতারা যদি হেমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেন, তা হলে তারা দু’টি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ পেতে পারে। সরকারে আসতে পারেন লালুপ্রসাদের আরজেডি-র ৫ বিধায়কও। সমর্থন পাওয়া যেতে পারে ৭ নির্দল বিধায়কের। সে ক্ষেত্রে নতুন জোট সরকার হবে ঝাড়খণ্ডে। বাবুলাল মরান্ডির হাতে ১১ জন বিধায়ক থাকলেও তিনি বিজেপি এবং কংগ্রেস দু’পক্ষের থেকেই সমদূরত্ব রেখে রাজ্যে নুতন বিকল্প হিসাবে উঠে আসতে চান।
তবে সোমবার বেশি রাতে একটি প্রস্তাব নিয়ে বিজেপি ও জেএমএমের মধ্যে আলোচনা চলছে। তা হল, অর্জুন মুন্ডাকে সরিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ বরকুঁয়র গগরাই বা নীলকন্ঠ সিংহ মুন্ডাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। তবে এই প্রস্তাব হেমন্ত বা শিবু মানছেন কি না, তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। তবে বিজেপি হাইকম্যান্ড এখনও অর্জুনকে সরাতে রাজি নয়।
বিজেপি এবং জেএমএমের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল গত ক’মাস ধরেই। বিজেপি-জেএমএম-আজসু জোট সরকারে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দু’জন। ৩৯ বছর বয়সী হেমন্ত এবং ৩৮ বছর বয়সী আজসু নেতা সুদেশ মাহাতো। ছ’জন বিধায়ক নিয়েও একাধিক দফতর ছিল সুদেশের হাতে।
অন্য দিকে ১৮ জন বিধায়ক সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও হেমন্তকে সে রকম ক্ষমতা দেননি মুখ্যমন্ত্রী। হাতে খনি দফতর থাকলেও আইন অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর সায় ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না হেমন্ত। জেএমএম বুঝতে পারছিল, বিজেপির সঙ্গে থাকায় ১৪ শতাংশ মুসলিম ভোট চলে যাচ্ছে কংগ্রেস এবং বাবুলাল মরান্ডির দিকে। সুদেশ মাহাতো ১৬ শতাংশ মাহাতো ভোটকে কব্জা করছেন। শতকরা ২৭ ভাগ উপজাতি
ভোটে কংগ্রেস প্রভাব বিস্তার
করতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় বিজেপিকে না ছাড়লে সবই হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা।
রাজ্যে পরবর্তী বিধানসভা ভোট ২০১৪ সালে। দল মনে করছিল, পরবর্তী দু’বছর বিজেপি জেএমএম-কে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। কিন্তু অর্জুন গদি ছাড়তে নারাজ। উল্টে চম্পাই সোরেন, মথুরা মাহাতো, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেমলাল মাহাতো-সহ আট জন বিধায়ককে জেএমএম থেকে ভাঙিয়ে আনতে শুরু করেছিলেন তিনি। হেমন্ত এ নিয়ে শিবু ও গডকড়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গডকড়ীকে শিবু জানান, অর্জুন যে হেতু তাঁদের দল ভাঙার চেষ্টা করছেন, তাই সমর্থন তোলা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই। |
|
|
|
|
|