কড়েয়া-কাণ্ডে অভিযুক্ত তিন পুলিশকর্মীকে আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। সোমবার বদলি করা হল কড়েয়া থানার দায়িত্বে থাকা এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (এসি) এবং ওসি-কে। প্রতিবাদী যুবক আমিনুল ইসলামের অপমৃত্যুর পরে পুরো বিষয়টি নিয়ে কর্তাদের ভুল বোঝানোর জন্যই ওই দুই পদস্থ অফিসারকে বদলি করা হল বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এ দিনই কড়েয়া-কাণ্ড নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে রিপোর্ট দিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার (সংগঠন) আর ত্রিপুরারি।
শনিবারেই কড়েয়া থানার দুই সাব-ইনস্পেক্টর বিনোদ কুমার, রঞ্জিত যাদব এবং কনস্টেবল নাসিম খানকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে আমিনুলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। গত সপ্তাহে কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার চম্পক ভট্টাচার্যকেও বদলি করা হয়েছে। তবে তা আমিনুলের মৃত্যুর আগেই। লালবাজার সূত্রের দাবি, কড়েয়ার ঘটনার ব্যাপারে থানা থেকে লালবাজারে ঠিক তথ্য না-পাঠানোর ব্যাপারে মূলত ওই ডিসি-কেই দায়ী করেছে কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ মহল।
ত্রিপুরারি সোমবার দুপুরে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে কড়েয়ার ঘটনার রিপোর্ট দেন। তার ভিত্তিতেই বিকেলে কড়েয়া থানার ওসি এবং এসি-কে বদলি করার কথা ঘোষণা করা হয়। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “কড়েয়া থানার ভারপ্রাপ্ত এসি দেবাশিস বৈদ্য এবং থানার ওসি প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যকে বদলি করা হয়েছে। কড়েয়ার নতুন ওসি হচ্ছেন আসিম আলি। আর ওই থানার ভারপ্রাপ্ত এসি হিসেবে যোগ দেবেন বিকাশ চট্টোপাধ্যায়।” |
কী রিপোর্ট জমা দিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার (সংগঠন)?
লালবাজার সূত্রের খবর, শাহজাদা বক্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারী অফিসারেরা থানার তরফে পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রমাণ পেয়েছেন। সব মামলার তদন্তের দেখভালের ভার যে-হেতু ওসি এবং এসি-র উপরেই বর্তায়, তাই তদন্তে গাফিলতির দায় তাঁদেরও থেকে যায় বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। থানার অভিযুক্ত তিন কর্মী তাঁদের সোর্স শাহজাদাকে নিয়ে যে-ভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তারও সমালোচনা করা হয়েছে রিপোর্টে।
পুলিশি সূত্রের খবর, কড়েয়া থানার ৯০ শতাংশ অফিসারকে বদলি করে দিতে চেয়েছিলেন লালবাজারের পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, একেবারে নতুন এবং উদ্যমী অফিসার নিয়োগ করে কড়েয়া থানার ভাবমূর্তি বদলানো দরকার। কিন্তু একসঙ্গে প্রায় সব অফিসার বদলি হয়ে গেলে থানার কাজে সমস্যা দেখা দিতে পারে ভেবে ধাপে ধাপে ওখানকার অফিসারদের সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। আর কোন কোন থানায় সোর্স নিয়ে এমন কাণ্ডকারখানা চলছে, তা-ও এ বার খতিয়ে দেখবে লালবাজার।
কড়েয়া-কাণ্ডে শাহজাদার সঙ্গী হিসেবে সেলিম নামে এক যুবকের নাম উঠে এসেছে। তাকেও অবিলম্বে গ্রেফতার করতে বলেছে লালবাজার। এত দিনেও সেলিমকে কেন গ্রেফতার করা যায়নি, কড়েয়া থানার কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ দিন লালবাজার থেকে গুন্ডা দমন শাখার চার অফিসার কড়েয়া থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। তাঁরা আমিনুলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর পঁয়ত্রিশের সেলিম পেশায় গাড়ি-মিস্ত্রি। ২৯এ/এইচ/২৫ নম্বর পাম অ্যাভিনিউয়ে তার বাড়ি। আমিনুল ৩১ অক্টোবর নির্যাতিতা কিশোরীর হয়ে যে-অভিযোগ লিখে দিয়েছিলেন, তাতে অন্য এক নাবালিকা এবং সেলিমের নাম ছিল। ওই অভিযোগে লেখা ছিল, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে ১৬ বছরের নির্যাতিতা কিশোরী এবং তার ১৩ বছর বয়সি এক বান্ধবীকে তিলজলায় একটি ফ্ল্যাটে ডেকেছিল শাহজাদা। ওই ফ্ল্যাটের একটি ঘরে প্রথমে ১৩ বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে শাহজাদা এবং তার সঙ্গী সেলিম।
আমিনুলের পরিবার জানায়, সেলিম ১৩ বছরের যে-নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছিল, তার পরিবার শাহজাদার ভয়ে থানায় অভিযোগ করেনি। কিন্তু ১৬ বছর বয়সি মেয়েটির মা আমিনুলের কাছে গিয়ে সব জানান। নভেম্বরে ফের শাহজাদার নামে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পর থেকে আমিনুলের পরিবার কিংবা ১৬ বছর বয়সি ওই কিশোরীর পরিবার সেলিমকে নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি। আমিনুলের মৃত্যু এবং শাহজাদা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সেলিম এলাকা-ছাড়া। আমিনুলের সৎকারের পরে ফেরার পথে শাহজাদার সঙ্গীরা তাঁদের হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মৃত যুবকের আত্মীয়স্বজন। শাহজাদার সেই সঙ্গীরা এখনও আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে এ দিনও অভিযোগ করে আমিনুলের পরিবার। লালবাজারের পুলিশকর্মীরা বেরিয়ে যাওয়ার আগেই এ দিন ‘শিল্পী-সংস্কৃতি-বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’-এর পক্ষ থেকে এক দল প্রতিনিধি আমিনুলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। |