ক্ষতি রাজ্যেরই, হুঁশিয়ারি প্রণব বর্ধনের
রাজ্যে জমি-জটের প্রসঙ্গেই ফের তুলনা গুজরাত
রাস্তা, পরিকাঠামো, শিল্প রাজ্যে জমি জটে ফিকে উন্নয়নের তিন মুখ। সে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণই হোক, কিংবা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো বা ইনফোসিসের প্রকল্প জমির সমস্যায় সবই মাঝপথে আটকে গিয়েছে। সোমবার কলকাতার এক অনুষ্ঠানে সেই অচলবস্থার দিকে আঙুল তুলে রাজ্যকে সতর্ক করলেন অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন। আর সেই প্রসঙ্গে গুজরাতের সঙ্গে আরও এক বার পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টানলেন শিল্প-বণিকমহলের একাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারে বারে ঘোষণা করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও অবস্থায় বেসরকারি, এমনকী যৌথ উদ্যোগের শিল্পের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করবে না। কিন্তু এতে আখেরে রাজ্যেরই শিল্প-সম্ভাবনা ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করেন প্রণববাবু। এ দিন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর দ্বিতীয় ‘ওয়ার্কশপ অন ইকনমিক গ্রোথ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “সরকার যদি কোনও ভাবেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সম্মত না হয়, তবে এ রাজ্যে কার্যত বড় শিল্প আর আসবে না।” শিল্পের জমি সংস্থানে সরকারি ভূমিকার পক্ষে সওয়াল করে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের মন্তব্য, “জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া ভুল। পশ্চিমবঙ্গের শাসকেরা সেই ভুলটাই করছেন। এতে শিল্পপতিদের সমস্যা তো বটেই, জমি-মালিক ও জমির উপরে নির্ভরশীল মানুষদেরও সমস্যা।” সিঙ্গুরের টাটা-প্রকল্পের দৃষ্টান্ত তুলে তাঁর প্রশ্ন, “ওখানে প্রয়োজনীয় হাজার একর কিনতে হলে মোট ১৩ হাজার মালিকের সঙ্গে আলোচনা করতে হতো! সেটা কি আদৌ সম্ভব?”
তবে সাম্প্রতিক জমি-সমস্যার জেরে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে শিল্পশূন্য হয়ে যাবে, এমনও মনে করছেন না প্রণববাবু। তাঁর মতে, কয়েকটি বিশেষ ধরনের শিল্প এখানে হতেই পারে, যদিও বড় শিল্পায়ন মার খাবে। “বিশেষত যেখানে অন্য রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়, সেখানে সরকারের এ হেন অবস্থান রাজ্যেরই ক্ষতি করবে।” বলেন তিনি।
শিল্প-বণিকমহলের একাংশের অভিমত, অধ্যাপক বর্ধনের এই মন্তব্যেই শিল্প-জমির প্রশ্নে গুজরাতের মতো রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থানের ফারাকটাই প্রকট হয়ে উঠেছে। এক বণিকসভার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের দাবি: বিনিয়োগ হাতছাড়া করে সরকারি ‘অবস্থানের’ খেসারত দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, শিল্পের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়। তাঁর অভিযোগ, “জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলনের জেরে বাম জমানা লগ্নি খুইয়েছে। আর বর্তমান সরকারের জমি-নীতির কারণে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত তেমন বড় কোনও লগ্নি-প্রস্তাব আসছে না।”
জমির সংস্থান করার ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসনের ‘উদাসীন’ মনোভাবের সমালোচনাতেও উঠে এসেছে গুজরাতের ‘বিপরীত’ ছবির প্রসঙ্গ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতির আক্ষেপ, “গুজরাতের সরকার জমির ব্যবস্থা তো করে দেয়ই, আরও যত সুবিধা দেওয়া সম্ভব, সবই জোগায়। অথচ পশ্চিমবঙ্গে জমি কোথায় মিলবে, সেটুকুও সরকার জানিয়ে উঠতে পারে না! বড় শিল্প আসবে না, তাতে আশ্চর্য কী?”
শুধু বড় শিল্প নয়। হস্তশিল্প মেলা থেকে শুরু করে বেঙ্গল বিল্ডস-এর মতো শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ছোট-মাঝারি শিল্পের বিকাশে জোর দিয়ে আসছেন, জমির জটিলতায় সেখানেও সম্ভাব্য লগ্নি পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে।
উদাহরণ: এ রাজ্যের এক কারখানা-মালিক। প্রকল্প সম্প্রসারণে যাঁর দরকার ছিল সামান্য দেড়-দু’একর, কিন্তু সরকারি দফতরে বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ করেও যিনি তা জোগাড় করতে পারেননি বলে অভিযোগ। শেষমেশ তাঁরও গন্তব্য হয়েছে সেই গুজরাত। ওই রাজ্যে তিনি সম্প্রসারণ খাতে ছ’কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ওই রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপন করতে গিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্থানীয় আর এক শিল্পপতি জানিয়েছেন, গুজরাতে কোন শিল্পের জন্য কোথায় কত জমি আছে, সব তথ্য ইন্টারনেটে মজুত! এমনকী, কোন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, তারও দিশা থাকে। ফলে ছোট ও মাঝারি মাপের জমি জোগাড়ের প্রক্রিয়া অনলাইনেই অনেকটা সেরে ফেলা যায়, দফায় দফায় যাতায়াতের দরকার পড়ে না। এমন সুবিধা পশ্চিমবঙ্গে ভাবা যায় না বলে তাঁর দাবি।
পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস রাজারহাটে জমি কিনলেও তাদের প্রকল্পকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)-এর মর্যাদা দিতে মুখ্যমন্ত্রীর ‘আপত্তি’ নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক বর্ধন। তাঁর কথায় “এসইজেডে শিল্পকে অনেক কর-ছাড় দেওয়া হয়। বেশিটাই দেয় কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যের তরফে তেমন ছাড় দিতে হয় না। তা হলে আপত্তি কেন?”
তবে কি সরকার ভোটের স্বার্থে শিল্প-বিরোধী রাজনীতি করছে?
প্রণববাবু জবাব, “এই সরকার শিল্প চায় না, এমন নয়। কিন্তু যা প্রয়োজন, তা করা হচ্ছে না।” তাঁর বক্তব্য, “প্রশ্ন শুধু জমির নয়। শিল্পে যে দক্ষ শ্রমিক দরকার, তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মানের শিক্ষা-ব্যবস্থা থাকতে হবে। সে উদ্যোগই বা কোথায়?”
সার্বিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক প্রণব বর্ধন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.