নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
দিনদুপুরে বাবার সামনে এক যুবতীর শ্লীলতাহানির অভিযোগকে ঘিরে সোমবার তেতে উঠল বীরভূমের জেলা সদর শহর, সিউড়ি। অভিযুক্তদের এক জনকে এলাকাবাসী ধরে ফেললেও, অন্য অভিযুক্তেরা ধৃতকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হামলা করে বলে অভিযোগ। তবে লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত হামলাকারীরা রণে ভঙ্গ দেয়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিউড়িবাসী শ্লীলতাহানি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবিতে থানায় বিক্ষোভ দেখান। অবরোধও করা হয়।
|
অভিযুক্ত ইন্দ্র হাজরা |
বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। খুব তাড়াতাড়িই তাদের ধরা হবে।”
ঘটনাস্থল সিউড়ির রাধাবল্লভ মন্দির এলাকা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা এক যুবতী তাঁর বাবার সঙ্গে রাধাবল্লভ মন্দিরের পাশে একটি গলি দিয়ে এক পরিচিতের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
লিখিত অভিযোগে যুবতীর বাবা দাবি করেছেন, ওই গলিতে পিছন থেকে দু’টি সাইকেলে চেপে এসে তাঁর মেয়ের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে চার যুবক। তিনি বলেন, “একটা ছেলে মেয়ের হাত ধরে টানছিল। আমরা চিৎকার করে ওঠায় ওরা হাত ছেড়ে হুমকি দিতে থাকে।”
বাবা-মেয়ের পাশে দাঁড়ান স্থানীয় বাসিন্দারাই। তাঁরা ইন্দ্র হাজরা নামে এক যুবককে ধরে ফেলেন। অন্যেরা পালায়। এলাকার মানুষের অভিযোগ, ইন্দ্রকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে তার সঙ্গীরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেশ কিছু যুবককে জুটিয়ে এনে ফেরত আসে। যাঁরা ইন্দ্রকে ধরেছিলেন, তাঁদের কয়েকজন এবং মেয়েটির বাবার উপরে তারা চড়াও হয়। মারধর শুরু করে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা
দলে ভারী হয়ে যাওয়ায় তারা শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যায়। ইন্দ্রকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। পুলিশ সূত্রের খবর, বছর বাইশের ইন্দ্র তাদের কাছে দাবি করেছে, সে বা তার সঙ্গীরা মেয়েটির শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেনি। গলির মধ্যে সাইকেল নিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে মেয়েটির গায়ে কোনও ভাবে হাত লেগে গিয়েছিল। তাকে ‘অন্যায় ভাবে’ আটকে রাখার প্রতিবাদ করে বন্ধুরা। কাউকে মারধর করা হয়নি। এ দিন রুটিপাড়ায় ইন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে কারও দেখা পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুই যুবক সিউড়ির রাস্তায় এক বধূকে নিগ্রহ করেছিল। বাধা দিতে গিয়ে মার খেয়েছিলেন বধূটির স্বামী। এ দিনের ঘটনা জানাজানি হতে সিউড়িবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ঘণ্টা আড়াই অবরোধ করা হয় সিউড়ি মেন রোড। টায়ার পুড়িয়ে আগুন জ্বালানো হয় রাস্তায়। বিক্ষোভ হয় সিউড়ি থানায়। তবে অবরোধ বা বিক্ষোভে রাজনীতির রং লাগেনি। সিউড়ির বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী বলেন, “এই শহরের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। এখানে একের পরে এক এ ধরনের ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করি।”
|