সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি, ধুঁকছে ঐতিহ্যের পাঠাগার
রকারি স্বীকৃতি নেই, নেই সবরকম সুযোগসুবিধা, তবুও পাঠকের মনের খিদে মেটাতে নিরন্তর বই জুগিয়ে চলেছে এই পাঠাগার। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যা- একের পর এক বাধা কাটিয়ে সেই ১৯২৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে কেতুগ্রামের মাসুন্দি পল্লিমঙ্গল সমিতির এই পাঠাগারের। দিন বদলের সঙ্গে প্রয়োজন বেড়েছে। বেড়েছে বইয়ের সংখ্যাও। তাই সরকারি সাহায্য মিললে কার্যত ধুঁকতে থাকা পাঠগারটি ফের চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা এলাকাবাসীর।
স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভূতিভূষণ দত্তের হাত ধরে কেতুগ্রামের মাসুন্দিতে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে পাঠাগারটির নিজস্ব কোনও জায়গা বা ঘর ছিল না। গ্রামের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি রাখালদাস সিংহ, আদিত্য পালদের বাড়ির বৈঠকখানায় চলত পাঠাগার। স্থানীয় যুবকদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হত এই পাঠাগার থেকেই। এমনকী তাঁদের ব্রিটিশ সরকার বিরোধী বিভিন্ন বইও দেওয়া হত। মাসুন্দি পল্লিমঙ্গল সমিতির বর্তমান সম্পাদক গোরাচাঁদ দত্ত বলেন, “পুলিশের অত্যাচারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাগার করা হয়নি। পুলিশ আসছে খবর পেলেই রাতের অন্ধকারে বই সরিয়ে অন্য কারওর বাড়ির বৈঠকখানায় রাখা হত।” এই পাঠাগারে ‘পথের দাবি’ বইটি রাখার জন্য মাসুন্দি পল্লিমঙ্গল সমিতির সদস্যরা ব্রিটিশ আমলে পুলিশের রোষে পড়েছিলেন বলেও জানা যায়। তখন পাঠাগারটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ফের এটি নতুন উদ্যোমে চালু হয়।
কেতুগ্রামের সেই পাঠাগার। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় ভারতী ভবন স্কুলের শিক্ষক তুষার পণ্ডিত কাটোয়া মহকুমা পাঠাগারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওই পাঠাগার অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। পাঠাগার ছাড়াও নৈশ বিদ্যালয়, ব্যায়ামাগারও চালাত মাসুন্দি পল্লিমঙ্গল সমিতি।’’ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে গ্রামের বাসিন্দা শিবপদ রায় পাঠাগার তৈরির জন্য পল্লিমঙ্গল সমিতিকে দশ কাঠা জমি দান করেছিলেন। সেখানে মাটির ঘর তৈরি করে পাঠাগার চলত। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য বইও রাখা ছিল। তবে গোরাচাঁদবাবু জানান, ১৯৭৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় পাঠাগারের মাটির ঘর ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। দুষ্প্রাপ্য বইগুলি নষ্ট হয়ে যায়।
পাঠাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন প্রায় তিন হাজার বই রয়েছে এই পাঠাগারে। রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন থেকে পাঠাগারটি দু’দফায় কয়েক হাজার টাকা পেয়েছিল। সেই টাকা থেকে পাঠকদের জন্য বই, চেয়ার, টেবিল কেনা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাঠাগারটি খোলা হয়। ২০-২৫ জন পাঠক নিয়মিত বই দেওয়া-নেওয়া করেন। পাঠাগারের দায়িত্ব সামলান রামকৃষ্ণ দাস ও শুভাশিস দত্ত। রামকৃষ্ণ দাস বলেন, “বিকেলে বয়স্করা আসেন। শিশুদের জন্যও বর্তমানে একটা বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানে শিশুদের নানারকম গল্পের বই পড়ানো হয়। যাতে তারা পাঠাগারে নিয়মিত আসে।” কিন্তু তাতে সমস্ত প্রয়োজন মেটেনা বলেই অভিযোগ। সম্পাদক গোরাচাঁদ দত্তের অভিযোগ, “পাঠাগারটি এখন কার্যত ধুঁকছে। এ বার সরকারি স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হবে। সরকারি স্বীকৃতি মিললে নানারকম বই, কর্মী কিংবা আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে। তাহলে ঐতিহ্যবাহী এই পাঠাগার চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আমাদের ধারণা।”
গ্রন্থাগার দফতরের বর্ধমান জেলার এক আধিকারিক বলেন, “গত পনেরো বছর ধরে এই জেলায় নতুন করে কোনও পাঠাগারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ওই পাঠাগার ইতিহাস-সমৃদ্ধ। ওঁরা আমাদের কাছে আবেদন করলে লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি (এলএলএ) খতিয়ে দেখে তারপর স্বীকৃতি দেবে।” গবেষক তুষারবাবুও মনে করেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামে এ ধরনের পাঠাগারগুলির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। কাটোয়া মহকুমার প্রান্তিক এলাকাতেই বেশ কয়েকটি পাঠাগার তৈরি হয়েছিল। এগুলিকে স্থানীয় মানুষজন অনেক কষ্টে বাঁচিয়ে রেখেছেন।” তাই সরকারি স্বীকৃতি পেলে এলাকা ও ঐতিহ্য দুইয়েরই উন্নয়ন হবে বলেই আশা এলাকাবীসার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.