আদালতের নির্দেশ মেনে সোমবার কয়লা মাফিয়া শেখ সেলিম খুনে অভিযুক্ত পাঁচ জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। ইতিমধ্যে খুনে জড়িত সন্দেহে এক তৃণমূল নেতা-সহ সাত জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ছ’জনকে বহু চেষ্টা করেও পুলিশ ধরতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে জগন্নাথপুর থেকে পুলিশ শেখ সফিকুলকে গ্রেফতার করে। তাঁকে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, যাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তারা হল শেখ সাজাহান, শেখ জিয়াউল, শেখ ভোম্বল, শেখ লালটু ও শেখ বুবনে। ১ জানুয়ারি আদালত এঁদের এবং শেখ সফিকুলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে মাইক নিয়ে আদালতের নির্দেশ ঘোষণা করে পুলিশ। সঙ্গে প্রত্যেকের বাড়িতে পোস্টার সাঁটানো হয়। তিন দিনের সময়সীমা দিয়ে জানানো হয়, যদি অভিযুক্তরা আত্মসমর্পণ না করে তাহলে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। রবিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়। |
২৫ অক্টোবর ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার মাধাইগঞ্জে বাড়ি লাগোয়া নিজস্ব পেট্রোল পাম্পে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটার সময় শেখ সেলিমকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরের দিন সেলিমের আদি বাড়ি কৈলাসপুর গ্রাম থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জহিরুল শেখ ও নাসিমুদ্দিন শেখ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ধৃতরা পুলিশকে জানায় যে সেলিমের প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আমিনের সহযোগী বর্তমানে জামিনে ছাড়া পাওয়া শেখ সাজাহান ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। কিন্তু সাজাহানকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
কাঁকসা থানার মলানদিঘির জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে সেলিম খুনে জড়িত অভিযোগে শেখ জনিউল ও শেখ সাকিবুল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকটি নাম উঠে আসে। এদের মধ্যে কয়েকজন এখনও অধরা।
সোমবার সিআই সনৎ ভট্টাচার্য ও ওসি সন্দীপ চট্টোরাজের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী কৈলাসপুর গ্রামে যায়। সঙ্গে ছিলেন মহিলা পুলিশকর্মীরাও। অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে সমস্ত সামগ্রী নিয়ে এসে নথিভুক্ত করার পরে লরিতে তোলা হয়। কেউ কোনও বাধা দেননি। বাড়ির মহিলারা মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে পুলিশের কাজ দেখেন। খাট, আলমারি, বিছানা, ড্রেসিং টেবিল, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান থেকে শুরু করে হাড়ি, কড়াই, চালের ড্রাম, কোদাল, বেলচা-ঘরে থাকা কিছুই বাদ যায়নি। এমনকী চাষের সেচের জন্য রাখা ভাঙা ‘ডোঙা’, স্প্রে মেশিনও তোলা হয় লরিতে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগাম নোটিস পেয়ে অভিযুক্তদের পরিবারের পক্ষ থেকে মূল্যবান সামগ্রী আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আলমারি ফাঁকা ছিল। যে টিভি পাওয়া গিয়েছে তাও বেশ পুরনো। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রভাব ও প্রতিপত্তিতে শেখ সাজাহানই সবার আগে। শেখ আমিনের অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসাবে সে পরিচিত। স্বাভাবিক ভাবে তার তিনতলা বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর তালিকাই সবচেয়ে দীর্ঘ। লরিতে করে সব সামগ্রী এনে তোলা হয় ফরিদপুর (লাউদোহা) থানায়। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি এস সিলভান মুরুগান বলেন, “রবিবার রাতে জগন্নাথপুর থেকে শেখ সফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৫ জনের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির তালিকা আদালতে পেশ করা হবে।” |