রাজধানীতে এখন সুখের সংজ্ঞা কী?
যদি মনে করেন তিন-চার হাজার টাকা দিয়ে কেনা বহু প্রতীক্ষিত রোববারের ভারত-পাক ম্যাচের টিকিট। একশোতে জিরো পেলেন!
দিল্লি শহরে সুখের দাম এখন মাত্র আড়াইশো থেকে চারশো টাকা। যা বিনিময়ে দিচ্ছে মাঙ্কি ক্যাপ। দিল্লির হাড়কাঁপানো ঠান্ডা থেকে বাঁচার এক নম্বর হাতিয়ার। এ দিনও যে দিনের বেলা তিন ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকল।
নিজামউদ্দিনে শনিবার দুপুরে বিএসএফ মেসের প্রশস্ত লনে শামিয়ানা টাঙিয়ে পরবর্তী ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্টের সম্মানে যে পার্টি চলছিল, সেই অভিজাত ভিড়েও কিনা মাঙ্কি ক্যাপ। যাঁরা সেটা পরে নেই তাঁরাও কোনও না কোনও শিরস্ত্রাণের আশ্রয় নিয়েছেন। উপলক্ষ, অরুণ জেটলির জন্মদিনের পার্টি। জন্মদিন যদিও আগে হয়ে গিয়েছে, গত সপ্তাহের পরিস্থিতি বিচারে সেটাকে মুলতবি করে শেষমেশ আজকে এনে ফেলা হয়েছিল। |
পার্টিটা যেখানে চলছিল তার খুব কাছেই নিজামউদ্দিনে ঢুকে হুমায়ুনের সমাধি। কিন্তু জেটলিও তো ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে যখন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হিসেবে মনোনয়ন পাবেন এবং এক বছর বাদে সরকারি দায়িত্ব নেবেন, তিনি তো উত্তরাধিকার সূত্রে ক্রিকেট সমাধিস্থলই পাবেন। এখুনি কি তাঁর হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়, যেমন করেছিলেন বছর দু’য়েক আগের আইপিএলে ললিত মোদীর অন্তিম এপিসোডে?
ভেতরের খবর, জেটলি হস্তক্ষেপ শুরু করে দিয়েছেন। যদিও আনন্দবাজারকে বললেন, “কিছু করার নেই। টিমটা একটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।” অদূরে বিজেপি-র মুখপাত্র, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি কিন্তু চাঁচাছোলা, “যদিও আমাদের পার্টির অরুণ ক্রিকেট বোর্ডের উঁচু পদে, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের এমন ভাবে খেলা উচিত যা দেখে দেশবাসী অনুপ্রানিত হয়। সেটা হচ্ছে কোথায়?”
সেটা হচ্ছে কোথায়যেন কাশ্মীর থেকে ঝুমরিতলাইয়া। লেহ থেকে কোচি। সর্বত্র জনতার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। থিয়েটার উৎসব এবং ব্যবসার কাজে দিল্লি এসেছেন অভিনেতা কুলভূষণ খারবান্দা। কলকাতা ম্যাচ ইস্তক ক্রিকেটপ্রেমী কুলভূষণের মুখেও একই সেন্টিমেন্ট। কী হচ্ছে!
গত বছরের ইংল্যান্ড সফর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে যন্ত্রণার এই যে মেগা সিরিয়াল তৈরি চালু হয়েছে, শনিবারও তার একটা এপিসোড গেল। ম্যাচ ছিল না তো কী। আপাতত যা পরিবেশ, ম্যাচ থাকার দরকার পড়ছে না।
শুনলাম, দিল্লি আগত বিদেশিরা আপাতত দু’টো নতুন জায়গা অবশ্য দ্রষ্টব্য হিসেবে যোগ করেছেন। প্রথম ইন্ডিয়া গেট। যেখানে মাত্র ক’দিন আগেও দৈনিক জনরোষ আছড়ে পড়ছিল দিল্লি পুলিশ ও প্রশাসনের অকর্মণ্যতার বিরুদ্ধে। আপাতত সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরেটিরে ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা। দ্বিতীয়, মহিপালপুর ফ্লাইওভারের কাছে, র্যাডিসন হোটেলের ঠিক আগের সেই স্পটটাপ্লেয়ারদের বাসস্থান মৌর্য শেরাটন থেকে যা গাাড়িতে বড়জোর মিনিট দশেক। দিল্লি ও ভারতের জাতীয় লজ্জার লোকেশন যেখানে বাসের মধ্যে গণধর্ষণের পর নগ্ন অবস্থায় ধর্ষিতা এবং তাঁর পুরুষসঙ্গীকে নগ্ন অবস্থায় ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বাস থেকে। বারবার আর্তনাদের পরেও না পথচারী, না পুলিশ কেউ আধঘণ্টাখানেক সাহায্যে এগিয়ে আসেনি!
দু’টোর মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না। তবু রোববারের কোটলাও কি ভবিষ্যৎ ভারতীয় ক্রিকেট ঐতিহাসিকের কাছে চরমতম লজ্জার লোকেশন হিসেবে চিহ্নিত থেকে যাবে? এই ম্যাচটাও হেরে শেষ করলে নিজের দেশে গত ষাট বছরে প্রথম পাকিস্তানের কাছে ভারত সর্বাঙ্গীন চুনকাম হবে! মিসবা উল হক এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে যে ভঙ্গিতে বলেছেন, “হ্যাঁ ৩-০ হচ্ছে,” সেই ঔদ্ধত্য মৃত, জীবিত বা এখনও জন্মায়নিতিনটে ক্যাটেগরির পাক অধিনায়কের কাছেই অচিন্তনীয়। |
ভারত কোথায় ১-২ করার রোখ দেখাবে, আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলায় জেরবার। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সেই বিশৃঙ্খলার নতুন মুখ। এ দিন ধোনি হঠাৎ করে তাঁর পিঠব্যথার সমস্যার কথা জানিয়ে বলেছেন, রোববার অনিশ্চিত। বিকল্প কিপার হিসেবে দীনেশ কার্তিককে চেন্নাই থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে।
ধোনি যদি না খেলেন, ক্যাপ্টেন কে হবেন? রাতে টিম হোটেলে দেখা গেল তা নিয়ে যা বিভ্রান্তি, ভিডিও তুলে রাখার মতো। শুধু সেটা ইউটিউবে পোস্ট করে দিলেই ভারতীয় ক্রিকেটের টাটকা স্ক্যান রিপোর্টটা বোঝা যাবে।
প্লেয়ার এক: ধোনি খেলছে না, কার্তিক উড়ে আসছে? ধ্যাঃ। মজা করছেন নাকি?
প্লেয়ার দুই: ধোনি খেলবে না জানি না তো। কেউ তো কিছু বলে না। টিম মিটিংও তো হল না।
প্লেয়ার তিন: কী, কার্তিক আসছে? কেন? ধোনি তো নেটে ব্যাট করল।
প্লেয়ার চার: শুনছি ধোনি খেলছে না। তা হলে ক্যাপ্টেনটা কে? আমাকে তো কিছু বলল না। আমি হলে নিশ্চয়ই জানাত।
প্লেয়ার পাঁচ: হাওয়ায় শুনছি খেলবে না। তা হলে ক্যাপ্টেন্সি কে করবে?
দেশের মাঠে এমনিতে সহ-অধিনায়ক বাছার রেওয়াজ নেই। তবে হালকা ভাবে ঠিক রয়েছে ওয়ান ডে ভাইস ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। ধোনি না খেললে কি তা হলে জীবনে প্রথম বারের মতো সিনিয়র ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন কোহলি? রাতে তাঁর কোচ রাজকুমার শর্মা বিস্মিত ভাবে বললেন, “বিরাটের সঙ্গে একটু আগেও তো কথা হল। কই, কিছু বলল না তো?” গম্ভীরতিনিও কিছু জানেন না। সহবাগকে এই মুহূর্তে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে মনে হয় না। আর একটা খবর, ধোনির পিঠের এমআরআই স্ক্যান হবে রোববার সকালে। তার পর ঠিক হবে নতুন ক্যাপ্টেন লাগবে কি না।
সত্যি হলে এটাও চরম বিস্ময়কর। দুপুর বারোটা থেকে শুরু ম্যাচে কিনা ক্যাপ্টেন ঠিক হবে সকালে! এ তো ভারতীয় ক্রিকেটে সেই ১৯৭৪-’৭৫-এর কোটলা টেস্ট ফেরত এল। যে দিন পাঁচ সম্ভাব্য অধিনায়ক ব্লেজার নিয়ে মাঠে গেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বেছে নেওয়া হয় বেঙ্কটরাঘবনকে।
রোববার আবার ইংল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজের দল নির্বাচনও রয়েছে। শোনা যাচ্ছে সহবাগ-গম্ভীরের মধ্যে একজন কেউ বাদ যাচ্ছেন অবধারিত ভাবে। ভাজ্জিকে ফেরানো হতে পারে। রবীন্দ্র জাডেজা আর রোহিত শর্মা নিয়ে ফাটাফাটি হবে। কারও কারও আবার মনে হচ্ছে পিঠের ব্যথার অছিলায় ধোনিকে না বিশ্রাম দেওয়া হয়। দেশে আপাতত জাতীয় আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দিল্লির পুলিশ কমিশনার আর শীলা দীক্ষিতের পরেই রয়েছেন ধোনি। এই মুহূর্তে লড়াইয়ের ময়দান থেকে একটা সিরিজ সাময়িক সরিয়ে দিলে সমালোচনা স্তিমিত হয়ে আসবে। তখন সুযোগ বুঝে আবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে নেতৃত্বে ফেরানো যাবে।
হয়তো পুরোটাই গুজব। কিন্তু চেন্নাই লবি এবং শ্রীনিবাসন সম্পর্কে বোর্ডের মধ্যেও এমন এমন বিরূপ মনোভাব যে, লোকে সম্পূর্ণ আজগুবি কিছুকেও বিশ্বাস করে নিতে রাজি। এই দীনেশ কার্তিককে ডেকে আনা নিয়েও কথা হচ্ছে যে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ঋদ্ধিমান আর পার্থিব এত রান করার পরেও তামিলনাড়ুর কার্তিক ছাড়া কি কাউকে পাওয়া গেল না? বোর্ডে শ্রীনিবাসন রাজ চালাতেন তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কাশী বিশ্বনাথনকে দিয়ে। কাশী আপাতত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে। সেই দায়িত্ব অন্য কাউকে না দিয়ে বাছা হয়েছে শ্রীনিবাসনের আত্মীয় আইপিএল মহাকর্তা সুন্দর রমনকে। সুন্দর এই যে মাতব্বরি করছেন, তাতে খুব বিরক্ত বোর্ডের অনেকে। বিমান ও জাহাজের পথে যেমন অশুভ ছিল বামুর্ডা ট্র্যাঙ্গল। বলা হচ্ছে তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটকে শেষ করে দিচ্ছে চেন্নাই ট্র্যাঙ্গল।
এমন মনোভাব বোধহয় অভূতপূর্ব যেখানে ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িতরাই অনেকে চাইছেন কোটলায় সিরিজ ০-৩ হোক। এঁদের ভয়, শেষটাও না হারলে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার আটকে যাবে। জনতা সব ভুলে গিয়ে পাকিস্তানকে ওই শেষেরটা হারানো নিয়েই ডগমগ হয়ে পড়বে।
এ দিন টিম হোটেলে ক্রিকেট বিপণনের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি জানালেন, জলন্ধরে ব্যাট প্রস্তুতকারকের কাছে পাকিস্তান ওয়ান ডে সিরিজের জন্য বিশেষ ব্যাটের অর্ডার দিয়েছিলেন তেন্ডুলকর। সেই ব্যাটগুলো এখন বেকার হয়ে গেল। দিল্লি এবং ভারতে যে এসএমএস জোক ইডেন ম্যাচ-উত্তর ছড়িয়েছে, তারা বোধহয় সচিন-ট্র্যাজেডির খবর জানেন না!
দ্রাবিড়: হ্যালো।
লক্ষ্মণ: হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
দ্রাবিড়: হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
লক্ষ্মণ: কনফারেন্স লাগা না।
দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, তেন্ডুলকর, কুম্বলে, গাঙ্গুলি: হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। |