কর্তারা কড়েয়ায় যেতেই সাসপেন্ড ৩ পুলিশ
ড়েয়ার প্রতিবাদী যুবক আমিনুল ইসলামের অপমৃত্যুর চার দিন পরে অভিযুক্ত তিন পুলিশকে সাসপেন্ড করে মানুষের ক্ষোভে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করল সরকার।
শনিবার বিকেলে আমিনুলের বাড়িতে গিয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। আমিনুলের (ওঁর নাম আমিরুল নয়) পরিবারের লোকজন এবং নির্যাতিতা সেই নাবালিকার সঙ্গে টানা দু’ঘণ্টা কথা বলেন তাঁরা। তার পরেই শনিবার রাতে লালবাজারের শীর্ষস্থানীয় এক কর্তা জানান, “অভিযুক্ত তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অবশেষে ন্যায়ের জয় হল।”
সাসপেন্ড হলেন কড়েয়া থানার দু’জন সাবইনস্পেক্টর বিনোদ কুমার ও রঞ্জিত যাদব এবং কনস্টেবল নাসিম খান। খবরটা শুনে আমিনুলের দিদি নাহিদ ইজহার আলি বলেন, “আমরা এতেই সন্তুষ্ট হতে পারছি না। ওদের জন্য আমার ভাইকে মরতে হয়েছে। তদন্ত করে ওদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
গত ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে নিজের গায়ে আগুন লাগানোর পরে হাসপাতালে দীর্ঘ কষ্টভোগ করে পয়লা জানুয়ারি মারা গিয়েছেন আমিনুল। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে ন্যূনতম সহানুভূতিটুকু তাঁরা পাননি বলে সরব হয়েছেন মৃতের পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী। মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা, শাসক দলের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও মেজো-সেজো নেতা কেন একটি বার শোকসন্তপ্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন না, তা নিয়ে শুক্রবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। মানুষের ক্ষোভ আন্দাজ করেই এ দিন রাতে তড়িঘড়ি সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত হল বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা আমিনুলের বাবা-মাকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আমিনুলের মা অসুস্থ থাকায় ওঁরা যেতে পারেননি। এ দিনও সকাল থেকে ওই তল্লাটে গুজব রটে যায়, পুলিশ কমিশনার আমিনুলের বাড়িতে আসছেন। যদিও লালবাজার সূত্রের খবর, এমন কোনও পরিকল্পনাও কমিশনারের ছিল না। তবে শনিবার বিকেলে যুগ্ম কমিশনার (সংগঠন) ত্রিপুরারির নেতৃত্বে লালবাজারের কর্তারা আমিনুলের বাড়িতে যান। স্থানীয় ডিসি (সাউথ-ইস্ট) দেবব্রত দাস এবং পঞ্চম ব্যাটেলিয়নের ইমরান ওয়াহাবও সেই দলে ছিলেন।
কড়েয়া থানার সামনে আমিনুলের প্রতিবেশীদের মোমবাতি মিছিল। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
আমিনুলের অভিযোগের ভিত্তিতেই কড়েয়া থানার দুই সাবইনস্পেক্টর-সহ চার পুলিশ-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন যুগ্ম কমিশনার (সংগঠন) ত্রিপুরারি। সেই সূত্রেই এ দিন ওঁরা আমিনুলের বাড়িতে যান। আমিনুলের পরিবার এবং নির্যাতিতা নাবালিকার সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা বলেন তাঁরা। রবিবারই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ত্রিপুরারির। তবে সরকার তথা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পারদ চড়ছে বুঝতে পেরে শনিবার রাতেই সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত হয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রশ্ন উঠছে, পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে প্রাথমিক ভাবে আমিনুলের অভিযোগ সত্য বলে ধরে নিয়েই যখন অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করা হল, তা হলে সেটা গোড়াতেই করা হয়নি কেন? আমিনুলের বাবা ইজহারুল ইসলাম শুক্রবারই বলেছিলেন, “ও গায়ে আগুন দেওয়ার পরেই অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে আমার ছেলে শান্তি পেত।”
এত কিছুর পরেও তাঁরা যে আদৌ নিরাপদ বোধ করছেন না, সেটাও এ দিন খোলাখুলি লালবাজারের কর্তাদের জানিয়েছেন আমিনুলের মা-বাবা। আমিনুলের বাবা বলেন, “ছেলের শেষকৃত্য সেরে ফেরার পথেও শাহজাদা বক্সের লোকজন আমাদের বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিয়েছে।” কামরু, আরশাদ, ল্যাংড়া সেলিম এবং আমির নামে চার যুবকের কথা পুলিশকে বলেন ইজহারুলরা। পুলিশ-কর্তারা বিষয়টি দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ এবং আবেগের পরিধি আঁচ করে রাজনৈতিক তৎপরতাও শুরু হয়ে গিয়েছে। বামফ্রন্টের তরফে এত দিন কেউ মুখ না খুললেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেছেন, “পরিকল্পনা মাফিক চক্রান্ত করে আত্মাহুতিতে বাধ্য করা হয়েছে আমিনুলকে।”
আমিনুলের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত এবং তাঁর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে এ দিন কড়েয়া থানায় স্মারকলিপি জমা দিয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর এআইইডিএফ। তিনি বলেন, “বাম জমানা থেকেই পুলিশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যোগসাজশ। দোষী পুলিশদের এ বার জেলে পাঠাতে হবে।” কংগ্রেস অবশ্য এ বিষয়ে খানিকটা আগে থেকেই সক্রিয় হয়েছে। ওই তল্লাটে প্রতিবাদ-মিছিল সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা ছিল। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এ দিন সকাল দশটা নাগাদ আমিনুলের বাড়িতে যান। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুরসভায় কংগ্রেসের দলনেত্রী মালা রায়। দীপাদেবী তখন অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের সাসপেন্ড করা দাবি তুলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে দীপা বলেন, “আগে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথায় কথায় সিবিআই তদন্ত চাইতেন! এখন তাঁর সরকার কী করবে?” ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরএসপি-র সুশীল শর্মা এ দিন আমিনুলের বাড়িতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন। আরএসপি-র এক কর্মী কলিম তাঁদের শাসাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন আমিনুলের পরিজনেরা। তবে যার ‘কুকীর্তি’র প্রতিবাদে আমিনুল মাঠে নেমেছিলেন, সেই শাহজাদা বক্সকে এ দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুরথেশ্বর মণ্ডল মামলাটি এ দিন জেলা ও দায়রা জজের আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৯ জানুয়ারি সেখানে শাহজাদাকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.