দেহপট সনে নট যে সকলই হারায় না সেটাই যেন প্রমাণ করে গেলেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। নইলে ৮৭ বছর বয়সে টলিউডের প্রবীণতম এক অভিনেতার মৃত্যুতে প্রবীণ থেকে নবীন প্রায় গোটা টলিউড, প্রসেনজিৎ-দেব থেকে ‘ভাষা’র কিশোরী জয়িতা গোস্বামীও কেন হাজির? শুধু তাই নয়, মেদিনীপুরের জনসভা থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সটান চলে এলেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওয়, হাঁটলেন প্রয়াত অভিনেতার মরদেহের পিছনে পিছনে।
কারণ একটাই, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে পেরেছিলেন হারাধন, হারিয়ে যাননি। বয়সটা যে কোনও বাধা নয়, বরং চরিত্রাভিনেতার পক্ষে তার সঙ্গে মানানসই থাকাটাই শ্রেয় সেটা বুঝতেন তিনি। তাই গত বছর অনুরাগ বসুর ‘বরফি’তে দাদুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেও অভিনয় করে চলেছিলেন ‘ভাষা’ সিরিয়ালে।
১৯২৬-এর ৬ নভেম্বর অধুনা বাংলাদেশের দর্শনায় জন্ম হারাধনের। উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় আসা। তার পরে শহরের ব্রিটিশ এক বিমা কোম্পানিতে চাকরি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় ভালবাসতেন। মঞ্চে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন অহীন্দ্র চৌধুরী, নরেশ মিত্র, সরযূবালা প্রমুখের সঙ্গে। কিন্তু নাটকের চেয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যই তিনি বেশি পরিচিত। ১৯৪৮-এ অতনু বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দেবদূত’ ছবিতে প্রথম অভিনয়। |
ছোট-বড় মিলিয়ে সারা জীবনে তাঁর অভিনীত চরিত্রের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। চরিত্র সম্পর্কে নাক-উঁচু ছিলেন না। তাই একই সিরিজের ছবিতে পরিচালক পাল্টেছে, হারাধনের চরিত্রও পাল্টেছে, কিন্তু কখনও হারিয়ে যাননি তিনি। যেমন, সত্যজিতের ফেলুদা-সিরিজে ‘সোনার কেল্লা’য় অভিনয় করেছেন তপেশের বাবার ভূমিকায়, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ ফেলুদার মক্কেল-পুত্রের ভূমিকায়। পরে সন্দীপ রায়ের ফেলুদা-ছবি ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ ও ‘গোরস্থানে সাবধান’-এ তাঁর ভূমিকা ছিল সিধু জ্যাঠার।
নিজেকে বদলাতে পেরেছিলেন তিনি। তাই মৃত্যুর পরেও থেকে গেলেন কেবল ইতিহাস হয়ে নয়, সজীব স্মৃতি হয়ে। |