বিনোদন
পরপর মৃত্যু,
বড় একা হয়ে যাচ্ছি

হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় অনেক দিন থেকেই দেখছি। যখন আমরা স্কুল-কলেজের ছাত্র, তখন থেকেই। তাঁর একটি ছবির অভিনয় কখনওই ভুলতে পারি না, সেটি হল ‘বরযাত্রী’। লেখক ছিলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। যত দূর মনে পড়ে, ছবির নির্দেশক ছিলেন সত্যেন বোস। এখনও অবধি বাংলায় যত হাসির ছবি হয়েছে, তার মধ্যে এটি একটি মাইলস্টোন।
হারাধনদার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ১৯৫৭ সালে আকাশবাণীতে, গার্স্টিন প্লেসের বাড়িতে। তিনিও ঘোষক ছিলেন। আমিও সে কাজে যুক্ত হই। অচিরেই একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তার একটা সূত্র ছিল দু’জনের আদি বাড়ি। হারাধনদার ছিল কুষ্ঠিয়া, আমাদেরও কুষ্ঠিয়াতেই গরুই নদীর ও পারে কয়া গ্রামে। সেই সুবাদে আমার কিছু আত্মীয়, যেমন জ্যাঠতুতো ভাইয়েদের হারাধনদা চিনতেন। যাই হোক, এ ভাবে গার্স্টিন প্লেসে একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় একটি ভূতের গল্প চালু ছিল সেখানে। গার্স্টিন প্লেসের বাড়ির পিছনেই ছিল জব চার্নকের সমাধিস্থল। ওই বাড়িতে না কি সাহেব ভূতেদের আনাগোনা ছিল। সেখানে এক রাত্রে ঘোষণার কাজ করতে গিয়ে আমি সে রকম এক সাহেবকে দেখেছিলাম। কিন্তু ব্যস্ত থাকায় খোঁজ নিতে পারিনি, সাহেব অশরীরী কি না। তার পর থেকেই আমি বলি, ওখানে রাতে ডিউটি করতে গেলে সঙ্গে প্রহরী লাগবে। হারাধনদাও দাবি তোলেন, ওখানে তিনিও একা ডিউটি করতে পারবেন না। তা নিয়ে বেশ শোরগোল হয়।
হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
হারাধনদা কিছু দিনের জন্য রেডিও থেকে সরে যান। তবে, আমাদের বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ ছিল। হারাধনদা জেনারেল ইনসিওরেন্সে বড় চাকরি করতেন। অতি সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত আমার গাড়ির সমস্ত ইনসিওরেন্স তিনিই করে দিতেন। হারাধনদার সঙ্গে বন্ধুত্বের এই সংযোগের নানা কারণ ছিল। তার মধ্যে একটি তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রীতি। প্রতি সন্ধ্যায় কাজের শেষে অবসর কাটত রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে। কত ছবিতে যে একসঙ্গে অভিনয় করেছি তা এখন আলাদা করে বলা মুশকিল। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে প্রথম এক সঙ্গে দু’জনে কাজ করি ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’-এ। তার পরে বহু ছবিতে এক সঙ্গে কাজ করেছি। শেষের দিকে ‘শাখাপ্রশাখা’য় আবার দু’জনের এক সঙ্গে কাজ।
সত্যজিৎ রায়ের বাইরেও বহু মেনস্ট্রিম ছবিতে দু’জনে একত্রে কাজ করেছি। যোগাযোগও মাঝেমধ্যেই হত। মাসখানেক আগেই ওঁর নাতির বিয়েতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু সে দিন কলকাতার বাইরে ছিলাম। ফিরতে পারিনি। সে সব দিক থেকে দেখতে গেলে সম্পর্কটা প্রায় পারিবারিক। মৃত্যু সব সময়েই শোকাবহ। দুঃখ তৈরি করে। কিন্তু আমার কাছে যেটা আরও ভারবহ, সেটা হল সমসাময়িকরা সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন। আমার একাকীত্ব বেড়েই চলেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.