ভারতের বিজ্ঞান গবেষণায় ‘লম্বা লাফ’ আসন্ন। কারণ ইউরোপের যে গবেষণাগারে ঈশ্বর কণা আবিষ্কৃত হয়েছে, সেই সার্ন-এর সহযোগী সদস্য পদ পেতে ভারতের আবেদন এখন সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায়। তুমুল করতালির মধ্যে শনিবার বিজ্ঞান কংগ্রেসে এ কথা জানালেন সার্ন-এর ডিরেক্টর-জেনারেল রল্ফা হয়্যার।
হয়্যার বক্তৃতা করছিলেন ‘মেগা সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ শীর্ষক আলোচনাচক্রে। বর্ণনা করছিলেন ঈশ্বর কণা বা হিগস বোসন খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যন্ত্রের দীর্ঘ প্রয়াস। গত বছর ৪ জুলাই ওই যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেন অভীষ্ট কণা খুঁজে পাওয়ার খবর। ঠিক পরের সপ্তাহেই ‘দ্য ইকনমিস্ট’ পত্রিকা প্রচ্ছদ নিবন্ধ ছাপে ওই সাফল্যের বিষয়ে। মলাটে বড় বড় হরফে হেডলাইন ‘আ জায়ান্ট লিপ ইন সায়েন্স’। পত্রিকাটির প্রচ্ছদের ছবি দেখিয়ে হয়্যারের মন্তব্য, “সার্নের সহযোগী সদস্য মনোনীত হলে ভারতও বিজ্ঞান গবেষণায় এক লম্বা লাফ দেবে।”
লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার-এ কণা শনাক্তকরণ যন্ত্র নির্মাণে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই কাজ করেছেন। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন বহু ভারতীয় গবেষক। এত কিছুর পরেও ভারত কিন্তু এখনও সার্ন-এর সহযোগী সদস্য পদ পায়নি। তার আবেদন বিবেচনাধীন। হয়্যার যা বলতে চাইলেন তার মর্মার্থ হল, সহযোগী সদস্য পদ পেলে সার্ন-এর গবেষণায় ভারতের অংশগ্রহণ এক লাফে অনেক গুণ বেড়ে যাবে। এ দেশের বিজ্ঞানীরা তখন ওখানে কাজের অনেক বেশি সুযোগ পাবেন। |
মঙ্গলের কক্ষপথে একটি বিশেষ উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর।
বিজ্ঞান কংগ্রেসে তারই মডেল দেখছে খুদে দর্শক। —নিজস্ব চিত্র |
হয়্যার জানালেন, ঈশ্বর কণার সন্ধান পাওয়াতেই শেষ হয়নি সার্ন-এর কাজকর্ম। বাকি আছে অনেক গবেষণা। যেমন, বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত খোঁজ পেয়েছেন ব্রহ্মাণ্ডের মাত্র ৪ শতাংশ। বাকি ৯৬ শতাংশ এখনও অজানা। এ রকম আরও অজানার সন্ধানে সার্ন-এ গবেষণা চলবে আরও দু’দশক। ভারত সার্নের সহযোগী সদস্য মনোনীত হলে এ দেশের গবেষকেরা ওখানে আরও অনেক বড় কাজে যোগ দেবেন।
ভারতে বড় বিজ্ঞান প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের হোমি ভাবা অধ্যাপক বিকাশ সিংহ এ দিন দাবি জানালেন, “ইউরোপের দেশগুলি ১৯৫০-এর দশকে যেমন হাতে হাত মিলিয়ে তৈরি করেছিল সার্ন, তেমনই ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি সার্ক-সদস্য দেশগুলি মিলে ভারতে বানাক বিশাল ক্ষমতার এক একসিলারেটর। শুধু সার্ক নয়, এশিয়াও নয়, ওই একসিলারেটরে কাজ করুন সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা।” সার্ক-সদস্য দেশগুলির মধ্যে যদি মতভেদ থাকে, তা হলে তা যেন ভুলে গিয়েও এ কাজে এগিয়ে আসে। বিকাশবাবুর মন্তব্য, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি তো হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকার কাছে। কিন্তু সার্ন গঠনের সময় গবেষণার স্বার্থে জার্মানি কি এগিয়ে এসে সবার সঙ্গে হাত মেলায়নি?” আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন প্রধান অনিল কাকোদকার বলেন, “ভারত ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে বড় বড় বিজ্ঞান প্রকল্পে। এ দেশের তরুণ গবেষকদের কথা ভেবে আরও বেশি করে বড় প্রকল্পে নামা উচিত।” |