অভিনব কায়দায় মঙ্গলের মাটিতে কিউরিওসিটি রোভার নামিয়ে গত বছর বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল নাসা। এ বার তেমন ধাঁচেই চাঁদে যান নামাতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। শনিবার ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের এক মঞ্চে সেই প্রযুক্তিই বিশদে ব্যাখ্যা করলেন ইসরোর বিজ্ঞানী নীলেশ দেশাই।
২০০৮ সালে চাঁদের কক্ষপথে প্রথম উপগ্রহ পাঠায় ইসরো। যার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল চন্দ্রযান-১। ওই বছরের অক্টোবর মাসে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে একটি পিএসএলভি রকেটের মাধ্যমে সেটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চন্দ্রযান-১ এর সাফল্যই আগামী অভিযানকে উৎসাহিত করেছে। ইসরো সূত্রের খবর, ২০১৪-এর মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ চন্দ্রযান-২ এর উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও নানা প্রযুক্তিগত কারণে তা পিছিয়ে যেতে পারে।
কী এই চন্দ্রযান-২?
ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই অভিযানে একটি কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে একটি বিশেষ ‘চাঁদের গাড়ি’ও থাকবে। ওই গাড়িটিকে ঘিরে রাখবে একটি ‘ল্যান্ডার’। আর ল্যান্ডার-সহ গোটা যানটিই থাকবে একটি খোলসের ভিতরে। নীলেশ জানান, চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছনোর পর খোলসটি আলাদা হয়ে যাবে। এর পর চাঁদের মাটির কাছাকাছি গিয়ে খোলস থেকে ধীরে ধীরে ‘ল্যান্ডার’টি মাটিতে নেমে আসবে। খোলসটি ভেসে চলে যাবে মহাকাশে।
বিজ্ঞানীরা দেখালেন, ল্যান্ডারটি মাটিতে ছোঁয়ার পর সেটি থেকে একটি ঢালু পাত বেরিয়ে আসবে। তার পর সেই ঢালু পাত দিয়েই ল্যান্ডারের ভিতর থেকে গড়িয়ে চাঁদের মাটি ছোঁবে রোভার।
গোটা অভিযানে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও নতুনত্ব রয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। নীলেশ এ দিন বলেন, “গবেষণা কেন্দ্র থেকে কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে যেমন যোগাযোগ থাকবে, তেমনই চাঁদে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যান্ডারও আমাদের নির্দেশ মানবে।”
কী ভাবে?
ওই বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ইসরোর গবেষণা কেন্দ্র থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ ও চাঁদে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যান্ডার, দু’টির সঙ্গেই যোগাযোগ রাখবেন বিজ্ঞানীরা। ল্যান্ডারে নির্দেশ পাঠিয়েই রোভারকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তাঁরা। ল্যান্ডারটি সরাসরি গবেষণা কেন্দ্রকে তথ্য জোগানোর পাশাপাশি কৃত্রিম উপগ্রহেও তা পাঠাবে। নীলেশের কথায়, “ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হলে উপগ্রহ মারফৎ রোভারের তথ্য মিলবে।”
এই দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযানের উদ্দেশ্য কী?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথম অভিযান থেকে চাঁদের মাটি সম্পর্কে নানা তথ্য মিলেছিল। সেগুলিই আরও বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। চাঁদে ভূকম্পন সংক্রান্ত বিষয়ও সন্ধান করাও তাঁদের অন্যতম উদ্দেশ্য। কিউরিওসিটির মতো ভিন্ গ্রহের মাটিতে ধীরে অবতরণের কৌশলটিও ঝালিয়ে নিতে চান ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ১৯৬৯ সালে চাঁদে মানুষ পৌঁছনোর পর ২০১২ সালে চাঁদে গাড়ি পাঠানোটা কতটা আধুনিক?
ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশ কিছু প্রযুক্তিগত খামতি থাকা সত্ত্বেও চলতি দশকেই ইসরো চাঁদে মানুষ পাঠানোর কথা ভাবছে। তার আগে নিজেরা চাঁদে গাড়ি পাঠিয়ে আরও কিছু তথ্য জোগাড় করতে চাইছে। পাশাপাশি, এক লাফে সরাসরি চাঁদে মানুষ না পাঠিয়ে ধাপে ধাপে সেই পর্যায়ে পৌঁছতে চান ইসরোর বিজ্ঞানীরাও।
চাঁদে পৌঁছতে এখনও বছর দেড়েক বাকি। তবে চলতি বছরেই মঙ্গলের কক্ষপথে একটি বিশেষ উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই অভিযানের কথা ঘোষণা করেছিলেন।
এ দিন ইসরোর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবরে সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ওই কৃত্রিম উপগ্রহকে উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইসরো সূত্রের খবর, মার্চ মাসের মধ্যেই অভিযানের সরঞ্জাম ইসরোর হাতে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী ২৬ নভেম্বর ওই রকেট পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়ে যাবে।
পৃথিবী থেকে রওনা হওয়ার পর মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছতে অন্তত তিনশো দিন সময় লাগবে তার। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ মঙ্গলের কক্ষপথে উপগ্রহটি পৌঁছবে।
ইসরোর মঙ্গল অভিযানের অন্যতম সদস্য ক্যুরিয়েন ম্যাথু এ দিন জানান, ওই উপগ্রহ মঙ্গলপৃষ্ঠের নানা ধরনের ছবি তুলে পাঠাবে। তথ্য দেবে বায়ুমণ্ডলেরও। ভারতের এক মহাকাশবিজ্ঞানী বলেন, “এর আগের অভিযানে লাল গ্রহে জলের অস্ত্বিত্বের খোঁজ মিলেছে। এখন জল উবে গেল কেন, তা খোঁজা জরুরি।”
|