নিছক ‘আউট পোস্ট’ থেকে থানায় উন্নীত হল শক্তিপুর পুলিশ ফাঁড়ি। আর শুক্রবার, ফিতে কেটে সেই নব্য থানার উদ্বোধন করলেন যিনি, রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সেই হুমায়ুন কবীরের নামেই ওই থানায় রয়েছে অন্তত আটটি অভিযোগ। এ দিন উদ্বোধনের পরে হুমায়ুন নিজেও তা স্বীকার করেছেন। মন্ত্রী বলেন, “শক্তিপুর পুলিশ ফাঁড়ি-সহ বিভিন্ন থানায় আমার নামে নানান অভিযোগ রয়েছে। আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু মনে রাখবেন, অভিযুক্ত হওয়া মানেই কিন্তু দোষী নয়।” |
এ দিন জেলার নতুন থানার ফিতে কেটে দৃশ্যতই উৎফুল্ল হুমায়ুন বলেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি এই শক্তিপুর থানা আমি উদ্বোধন করব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই সম্ভব হল।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মাস খানেক আগেও প্রবল হুমায়ুন বিরোধী হিসেবে পরিচিত উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা।
তবে হুমায়ুন-সুব্রত বিবাদ এখন ‘অতীত’। বরং মঞ্চে এ দিনের ‘চমক’ ছিল বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিলকিস বেগম-সহ কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের উপস্থিতি। সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল ঘোর হুমায়ুন-বিরোধী বিলকিস তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। এ দিন মঞ্চে উঠে হাসি মুখে বিলকিস জানিয়ে দেন, “হুমায়ুন ভাইয়ের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। তিনি চলে যাওয়ার বেলডাঙায় কংগ্রেসের হাল ধরার কেউ নেই। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে এলাম। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর আমার কোনও ক্ষোভ নেই।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও বিলকিসের দলত্যাগ নিয়ে তোপ দাগতে নারাজ। তিনি বলেন, “সম্ভবত পরিবারের চাপে বিলকিস কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ও আমার বোনের মতো। কোনও অভিমান নেই।” তিনি জানান, সংখ্যালঘু মহিলাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতেই বেলাডাঙা-২ পঞ্চায়েতে বিলকিসকে সভাপতি কিংবা সিদ্দিকা বেগমকে জেলা সভাধিপতি করা হয়েছিল। |
প্রসঙ্গত, মাস খানেক আগেও বেলডাঙার বিকলনগরে এক জনসভায় হুমায়ুনের কংগ্রেস ত্যাগে তোপ দেগে বিলকিস বলেছিলেন,‘উনি তো গরু-ছাগলের মন্ত্রী হলেন।’ তাঁকে সেই সময়ে ‘মীরজাফর’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন বিলকিস। এ দিন সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কোনও উত্তর মেলেনি তাঁর কাছে। মাথা নীচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন বিলকিস।
এ দিন বিলকিস ছাড়াও বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ বদরুদ্দিন শেখ, মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ স্বাধীন হালদার, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বম্ভর মণ্ডল ও কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল সদস্য শ্রীমতী মাঝি ছাড়াও পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের শ্যামাপ্রসাদ চট্টরাজ তৃণমূলে যোগ দেন। ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩০ জন সদস্য। কংগ্রেস ১৭টি, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট ১৩টি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেস এবং সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতিতে বর্তমানে সিপিএমের ১২ জন, কংগ্রেসের ১১ জন এবং তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা হল ৭। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিতে আমরা কোনও অনাস্থা আনছি না।”
|