পূর্বস্থলীর পাখিরালয়
চোরাশিকারির দাপট, দুই দফতরে চাপানউতোর
হাজার হাজার মাইল দূর থেকে ডানা ঝাপটে উড়ে আসে ওরা। আর ওদের দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন পর্যটকেরা। এই পরিযায়ী পাখিদের দৌলতেই নাম-ডাক হয়েছে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পাখিরালয়ের। অথচ সেখানেই রমরমিয়ে চলছে পাখি শিকার। প্রতি বছর অন্তত ৫০-৭০টি দেশি-বিদেশি পাখিকে বঁড়শি দিয়ে গেঁথে বা খাবারে বিষ দিয়ে মারা হয়, অভিযোগ পাখি দেখভালে নিযুক্ত স্থানীয় একটি সংস্থার। পুলিশ ও বনবিভাগকে বারবার জানানো হলেও ফল হয় না, অভিযোগ সংস্থাটির।
নদিয়া সীমানা লাগোয়া পূর্বস্থলীতে ভাগীরথীর মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয়েছে একটি হ্রদ। ছাড়িগঙ্গা নামের এই জলাশয়ে জমে থাকে প্রচুর শৈবাল। রয়েছে প্রচুর মাছও। শীতকালে সাইবেরিয়া, ইউক্রেন-সহ নানা দেশ থেকে এসে হাজির হয় প্রচুর পাখি। হ্রদে পাখিদের পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মী সঞ্জয় সিংহের দাবি, “১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলাশয়ে প্রায় ৭৭টি প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এখনও পর্যন্ত। তার মধ্যে পাঁচ রকম প্রজাতির পাখির এখানেই প্রথম দেখা মিলেছে। সেগুলি হল, গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিপ, কমন সেল ডাক, ইউরেশিয়ান উইজিয়ান, গ্রেট থিকানি এবং হোয়াইট উইং ডাক।”

পাখিরালয়ের জলাশয়ে পরিযায়ীরা। —নিজস্ব চিত্র।
সঞ্জয়বাবু বা তাঁদের পক্ষীরক্ষা সমিতির সদস্যদের মনে সুখ নেই। কারণ, ১০-১২ জনের একটি চোরাশিকারি দলের উৎপাত। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, নবদ্বীপের প্রচীন মায়াপুর এলাকা থেকে আসা ওই দলটি দেদার পাখি শিকার করছে। সঞ্জয়বাবুর কথায়, “এ বছর ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বার বঁড়শিবিদ্ধ এক পরিযায়ীকে দেখি। সেটি ছিল ‘ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন’। পর দিন ফের দেখি, একটি ‘লেসার হুইসলিং টেল’ বঁড়শি গলায় নিয়ে ছটফট করছে। তার পর দিন আবার একই অবস্থায় একটি ইন্ডিয়ান পন্ড হেরনের দেখা মেলে। বঁড়শিতে মাছ গেঁথে টোপ দিয়ে শিকার করা হয়েছে পাখিটিকে। সেটি পড়ে রয়েছে পানার ঝোপে।” তাঁর অভিযোগ, “সেই অবস্থায় পাখিটি নিয়ে আমি পূর্বস্থলী থানায় যাই। পুলিশকে সমস্ত ঘটনার কথা জানাই। কিন্তু পুলিশ বলে, চোরাশিকারিরা নবদ্বীপ থানা এলাকায় থাকে। তাই তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।” এ বারই প্রথম নয়, আগেও আহত পাখি নিয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বলে দাবি সঞ্জয়বাবুর।
পাখি চোরাশিকার রোখা কার দায়িত্ব, তা নিয়ে পুলিশ ও বন বিভাগের মধ্যে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার বক্তব্য, “পাখি শিকার নিয়ে পূর্বস্থলী থানা কোনও অভিযোগ পেয়েছে কি না, জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। তবে পাখি শিকার বন্ধের দায়িত্ব বন বিভাগের।” বর্ধমান বনবিভাগের আধিকারিক গোপালচন্দ্র কাজুরীর আবার দাবি, “এলাকাটি বিশাল। প্রতি দিন পুরো এলাকায় নজর রাখা সম্ভব নয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। তবে চোরাশিকারি ধরার দায়িত্ব পুলিশের।”
কে রক্ষা করবে, তা নিয়ে কাজিয়া চলছেই। ছাড়িগঙ্গার চরে তাই পরিযায়ীরা এখন বিপন্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.