চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
ছবিতেই ফুটে ওঠে জীবনকে দেখার অন্তর্মুখী দৃষ্টি
কটি ভিন্ন ধারার শিল্পচর্চা ও প্রদর্শন কেন্দ্র স্টুডিও ২১। শুধু চিত্র-ভাস্কর্য নয়, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, নৃত্য, লৌকিক জীবন, পরম্পরাগত দৃশ্যরূপ ও দর্শন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে এখানে প্রদর্শনী বা আলোচনা হয়। আজকের তরুণ কী ভাবে জীবন ও বিশ্বকে দেখছেন তারই নানা দিক বারবার উঠে এসেছে।
সম্প্রতি এখানে দেখানো হল একজন তরুণ চিত্রকর সুব্রত আচার্যের চলচ্চিত্র। এর আগে নিজের উদ্যোগেই একটি বা দু’টি একক চিত্রপ্রদর্শনী করেছেন স্বশিক্ষিত এই চিত্রশিল্পী। তাঁর ছবির ভিতর কবিতা আছে। আর আছে জীবনকে দেখার অন্তর্মুখী নিমগ্ন দৃষ্টি। এই দু’টি বৈশিষ্ট্য নিয়েই তিনি তৈরি করেছেন ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’ নামে ৭০ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি সাদা-কালো ফিল্ম। এটি তথ্যচিত্র কখনওই নয়। প্রচলিত ধারার কাহিনি-চিত্রের থেকেও এর অবস্থান কিছুটা দূরবর্তী। গল্পের একটি সামান্য সূত্র অবশ্য আছে। কিন্তু সেটা একটা প্রস্থানবিন্দু মাত্র। তাকে অবলম্বন করে শিল্পী ক্যামেরায় একের পর এক চিত্রপ্রতিমা তৈরি করেছেন। সেই ছবির মালার ভিতর দিয়ে এই কলকাতা শহরের দৈনন্দিনকে ধরেছেন। এই শহরের যৌবন তাঁর ছবির প্রধান বিষয়। এই শহরে সেই যৌনতা সব সময়ই অবদমিত থাকে। এ কথা ঠিক যে অবদমিত যৌনতাই মানুষের সমস্ত সৃষ্টির উৎস। আবার সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত না হলে এই অবদমিত যৌনতা যৌবনকে দিকভ্রান্তও করে। সেই দিকভ্রান্ততার ভিতর দিয়ে যেতে যেতেও কখনও কখনও হঠাৎ ফুল ফোটে। একটি চেতনার অভ্যন্তরে বসন্তের সমাগম হয়। মুহূর্তের জন্য এক ঝলক রঙিন আলো জ্বলে ওঠে। সমস্ত বিনষ্টির ভিতর থেকে সেই আলোটুকুকে বের করে এনেছেন শিল্পী।
শিল্পী: সুব্রত আচার্য
কাহিনির সুতোটি খুবই সাদামাঠা। নির্দিষ্ট করে অবশ্য কলকাতা শহরের কথা বলা হয়নি। তবু একে কলকাতা বলে চিনতে অসুবিধা হয় না। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গা। শহরের উত্তর প্রান্তে গঙ্গার তীরবর্তী একটি অঞ্চল। অপরিচ্ছন্ন। জীর্ণতার ছোঁয়া চারদিকে। এর মধ্যেই জীবনের স্তিমিত গতিভঙ্গি। এখানেই পথের ধারে একটি পুরোনো বাড়ি। সেই বাড়ির একটি অংশে থাকে এক প্রৌঢ় এবং একটি তন্বী তরুণী মেয়ে। দু’জনের সম্পর্ক সঠিক সংজ্ঞায়িত নয়। প্রৌঢ়ের চোখ দু’টি বড় বড় এবং রহস্যময়। ক্যামেরা কয়েক বার এই চোখদুটিকে ধরেছে। ওই বাড়ির সামনের পথ ও গলিতে জটলা করে কয়েকটি যুবক। তাদের মধ্যে একজনের নাম বিশু। যুবকেরা জানলা দিয়ে মেয়েটিকে দেখে। এক বিপন্ন প্রেম বা অবদমিত যৌনতার সৃষ্টি হয়। বিশু বই পড়তে ভালবাসে। একটি উপন্যাস সে পড়ছে। তার নায়িকার নাম বনবাসী। বনবাসীর এক প্রেমিক আছে। তার নাম রমেন। বিশু বনবাসীর জায়গায় ওই মেয়েটিকে এবং রমেনের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে নেয়। চলতে থাকে অদৃশ্য, অসম্পূর্ণ এক প্রেমের উপাখ্যান।
আখ্যান বলতে এটুকুই। বিশুর দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যামেরা তথা পরিচালক এই শহরকে দেখে। ট্রামলাইনের তারের উপর ঝাঁক ঝাঁক পাখি এসে বসে। উড়ে যায়। নদীর উপর দিয়ে বয়ে যায় নৌকা। ঘাটে স্নান করে লোকজন। পথের উপর ছেলেরা খেলা করে। যুবকেরা আড্ডা দেয়। চলতে থাকে শহরের জীবন। সবটাই সাদা-কালো। আর ধূসরের অন্তহীন রহস্যময়তা। প্রতিটি ফ্রেম যেন এক একটি চিত্রিত ছবি। ফ্রেমের সঙ্গে ফ্রেম গ্রথিত হয়ে জাগিয়ে তোলে অনুচ্চারিত কবিতা। চিত্র ও কবিতার ভাষায় শিল্পী রচনা করেন চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা। কোনও চরিত্রের মুখেই সংলাপ নেই কোনও। শুধু মাঝে মাঝে অন্তরালে ধারাভাষ্য চলে। পরিসর, সময়, শব্দ, নৈঃশব্দ্য, আলো, ধূসরতা এ সবের সমন্বয়ে ও টানাপোড়েনের দ্বান্দ্বিকতায় গড়ে ওঠা চলচ্চিত্রের ভাষা ছুঁতে চায় যৌবনের অভিমুখহীন নিরাশাকে। অবশেষে সেই নিরাশা বিদীর্ণ করেই জ্বলে ওঠে দীপশিখা। তাতে উদ্ভাসিত হয় মেয়েটির মুখ। সাদা-কালোর ভিতর শেষ দৃশ্যে এ রকম এক রঙের ঝলক আমরা দেখতে পাই। মাঝখানে আর মাত্র একবার রং ব্যবহৃত হয়। আত্মরতিতে নিমগ্ন ছেলেটি। তৃপ্তি বা সুখের চরম মুহূর্তে একটি লাল শাড়ি উড়ে যায় মেয়েটির ঘর আলোকিত করে। বিশুদ্ধ সিনেমা আজকাল খুব কম দেখা যায়। এই ফিল্মটি আমাদের সেই তৃষ্ণায় কিছু তৃপ্তি বয়ে আনে।
ফিল্মটি চেক রিপাবলিকের কারলোভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য মনোনীত হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.