নির্যাতিত শিশুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে হোমে নিয়ে গেল জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি। শুক্রবার দুপুরে সমিতির সদস্যেরা বছর তিনের মেয়েটিকে বর্ধমান শহরের রাধানগরে একটি মেয়েদের হোমে নিয়ে যান। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি। খোঁজ মেলেনি তার অভিভাবকদের। অপরাধীর সন্ধানও পায়নি পুলিশ।
গত ২৪ ডিসেম্বর কাটোয়া শহর লাগোয়া গোয়াই লেভেলক্রসিংয়ের কাছে ঈশানীপুকুর পাড়ে কাঁটাঝোপ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় কুলডাঙা গ্রামের সোহাগি দাস। তিনিই তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক শুশ্রূষা করে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষার পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির জামাকাপড় ও শীতের পোশাক উদ্ধার করে। সোহাগিদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে কাটোয়া থানা ধর্ষণের মামলা রুজু করে।
কিন্তু এর পরে দু’সপ্তাহ কাটতে চললেও পুলিশ শিশুটির পরিচয় বা দুষ্কৃতীদের পরিচয় বার করতে পারেনি। শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা চিকিৎসক শ্রীকান্ত বসু বলেন, “আমরা চাই, পুলিশ শিশুটির পরিচয় খুঁজে বের করুক। কাউন্সেলিং করে ওর কাছ থেকে কিছু জানা যায় কি না, তা-ও আমরা দেখছি।” ঘটনার কিনারা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারাও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা মানবাধিকার কর্মী সুব্রত চৌধুরীর বক্তব্য, “১২ দিন তদন্ত করে এক চুলও এগোতে পারেনি পুলিশ। এটা আমাদের লজ্জা।”
গত ২৭ ডিসেম্বর জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার নির্দেশে কাটোয়ায় এসেছিল জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির দুই সদস্যের একটি দল। তারা বর্ধমানে ফিরে গিয়ে সরকার অনুমোদিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে চিঠি দিয়ে শিশুটির দায়িত্ব নিতে বলে। সেই মতো এ দিন শিশুকল্যাণ সমিতির সদস্য মহুয়া গুঁইয়ের নেতৃত্বে চার জন শিশুটিকে কাটোয়া থেকে বর্ধমানে নিয়ে যান। শ্রীকান্তবাবু বলেন, “আমরা চাই শিশুটি অভিভাবকের কাছে ফিরে যাক।” শিশুটির পরিচয় জানতে ইতিমধ্যেই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায় “অভিভাবকের সন্ধান চাই” মর্মে প্রচারপত্রও ছড়িয়েছে। তাতে কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস এবং এসআই জুলফিকার আলির মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শিশুটিকে নিয়ে কলকাতার তিলজলা, তপসিয়া, পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর ও মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলেও খোঁজ চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার বলেন, “শিশুটির পরিচয় জানা গেলে অপরাধীকে খুঁজে পেতে সমস্যা হত না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” |