| বাড়তি ভাড়ার প্রশ্নেই আটকে কর্পোরেট বাস |
একটু বেশি ভাড়া দাও। বাড়তি পরিষেবা নাও। অর্থনীতির এই সহজ অঙ্কেই রাস্তায় নামতে যাচ্ছিল কর্পোরেট বাস। কিন্তু রাজ্য সরকার হঠাৎ জানিয়ে দিল, বাড়তি পরিষেবাটুকু দিতেই হবে। অথচ বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না। সরকারের এই নির্দেশে বেঁকে বসেছে কর্পোরেট বাস চালাতে আগ্রহী সংস্থাগুলি। ‘ভাড়া এক রাখা’র ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মানতে গিয়ে কর্পোরেট বাস চালানোর গোটা প্রক্রিয়াই পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে।
অথচ লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষে কর্পোরেট বাসের ভাড়া সাধারণ বাসের চেয়ে বেশি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল পরিবহণ দফতর। যাত্রীদের নানান পরিষেবা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশি ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল আপত্তি। মুখ্যমন্ত্রী নারাজ বলেই সাধারণ বাসের তুলনায় কর্পোরেট বাসে বেশি ভাড়ার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রিগোষ্ঠী। এই অবস্থায় কর্পোরেট সংস্থাগুলি জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি নীতি মেনে লোকসানে বাস চালানোর কোনও দায় তাদের নেই।
কর্পোরেট বাসের ভাড়া কত হবে, তা ঠিক করতে গত এক মাসে দফায় দফায় বৈঠকে বসেছে পরিবহণ দফতরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া মন্ত্রিগোষ্ঠী। কিন্তু এখনও তারা কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং পরিবহণসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা সোমবার মহাকরণে ফের বৈঠকে বসেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৈঠকের পরে তাঁদের ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানেও নানা জনের নানা মতে বাসভাড়া নিয়ে কোনও সমাধানসূত্র বার করা যায়নি। ভাড়া ঠিক করতে কাল, বুধবার ফের বৈঠকে বসবে মন্ত্রিগোষ্ঠী। সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি কেন? এই প্রশ্নের অবশ্য সরাসরি জবাব দেননি পরিবহণমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, “এটা মন্ত্রিগোষ্ঠীর রুটিন-বৈঠক। সব কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে।”
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে সরকার ঠিক করেছিল, সাধারণ বাসের ভাড়াতেই চলবে কর্পোরেট বাস। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাতে রাজি নয়। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “কর্পোরেট সংস্থাগুলি অন্তত ৫০টি বাস একসঙ্গে রাস্তায় চালাবে। তাদের নিজস্ব ওয়ার্কশপও রাখতে হবে। এই সব খরচের কারণে কর্পোরেট বাসের ভাড়া একটু বেশি রাখতেই হবে।” ভাড়া বেশি দিয়ে যাত্রীরা ওই বাসে পানীয় জল, খবরের কাগজ, বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা পাবেন। তাই তাঁদের ক্ষোভের কোনও কারণ থাকতে পারে না বলেই মনে করেন ওই কর্তা।
চলতি বছরের শুরুতে কর্পোরেট বাস চালাতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল সরকার। সাড়া দিয়েছিল মাত্র তিনটি সংস্থা। প্রথম ধাপে বিফল হয়ে অগস্টে ফের বিজ্ঞাপন দেয় পরিবহণ দফতর। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওই তারিখের মধ্যে সরকারি নিয়ম মেনে আর্জি জানিয়েছিল পাঁচটি সংস্থা। পরপর দু’বার বিজ্ঞাপন দিয়েও কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছ থেকে তেমন সাড়া না-পেয়ে ভাড়ার ব্যাপারে মনোভাব খানিকটা নরম করে সরকার। ঠিক হয়, সাধারণ বাসের তুলনায় কর্পোরেট বাসের ভাড়া বেশি হবে। সেই অনুযায়ী ইচ্ছুক কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছ থেকে সম্ভাব্য ভাড়ার তালিকাও চেয়ে পাঠায় সরকার। কিন্তু মন্ত্রিগোষ্ঠী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এই অবস্থায় ইচ্ছুক কর্পোরেট সংস্থাগুলিও আর এগোতে চাইছে না। আগ্রহী একটি কর্পোরেট সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, “সরকার তো বেশি ভাড়ার দাবি মেনে নিয়েছিল। আমরা সেই কারণেই এগিয়ে গিয়েছিলাম। ভাড়া কিছুটা বেশি না-হলে আমাদের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব নয়।”
|
