|
|
|
|
সাফল্যের বছর |
আমাদের কাহানি
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বছর ছিল নাকি। কিন্তু চাটুজ্জ্যেদের কাছে এটাই তো
জীবন বদলে দেওয়ার মধুর-বছর! পরম আর শাশ্বত। কথা বললেন ইন্দ্রনীল রায় |
১০ মার্চ ২০১২
ফেম, সাউথ সিটি-র স্মোকিং রুম।
ইন্টারভ্যালে ঘনঘন সিগারেট খাচ্ছেন ইন্সপেক্টর রানা আর বব বিশ্বাস।
“সেকেন্ড হাফটা ভালয় ভালয় উতরে গেলে বাঁচি। বড্ড চাপ লাগছে,” হাফ টাইমে ‘রানা’কে বললেন ‘বব’।
তার আগের দিন ছবি রিলিজ হয়েছে। পরের দিন শনিবার বিকেলে কাস্ট আর ক্রু-র জন্য স্পেশাল শো রেখেছেন পরিচালক সুজয় ঘোষ আর ‘রানা’।
শো শেষ । হলে তুমুল হাততালি । তিন সপ্তাহ ছবি হাউজফুল দেশের সর্বত্র। জীবনটা বদলে গেল স্মোকিং রুমের দু’জনের।
শাশ্বত আর পরম। দু’জনেই চট্টোপাধ্যায়। |
 |
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
আজকে নিজের নামটা শুনতে পাই
“জীবনটা একেবারে বদলে গিয়েছে, জানেন,” বৃহস্পতিবার এক ডাবিং স্টুডিওতে বলছিলেন পরম।
কী রকম ?
“আরে, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স থেকে পরিচিতি পুরোটাই বদলে গেল। আগে রিকশাওয়ালা, পাড়ার লোক দেখলে বলত, ‘দাদা, ঠিক তো?’ আজকে ফাইভ স্টার হোটেলের লবিতে দেখলে ‘হাই পরম’ বলে ডাকে।”
একদম সমান অভিজ্ঞতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের। নিজেই বললেন, “আমার সময়টা সত্যিই ভাল যাচ্ছে। শুধু পা-টা মাটিতে রাখতে হবে। এই সময় মাথা ঘুরে যাওয়ার এত সম্ভাবনা থাকে। আমাকেও আগে রাস্তাঘাটে দেখলে বলত, ‘ওই দেখ শুভেন্দুর ছেলে।’ আজকে অন্তত নিজের নামটা শুনতে পাই।”
তাঁদের দু’জনেরই জীবনযাত্রায় এই বদলটা কিন্তু শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ নয়।
আরবাজ খান বলল ‘কহানি টু’ প্রোডিউস করবে
“এই তো গোয়ায় গিয়েছিলাম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ক্লোজিং সেরিমনিতে। মিনিস্ট্রি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং থেকে চিঠি এল। ওখানে আরবাজ খান এগিয়ে এসে বলল, “হাই বব, ‘কহানি টু’ শুরু করো। সুজয়কে বলো আমি প্রোডিউস করব,” হাসতে হাসতে বলছিলেন শুভেন্দু-পুত্র।
এই সময় ডাবিং স্টুডিওতে ঢুকলেন পরমের বান্ধবী ইকা। জানালেন নেদারল্যান্ডসে একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল ‘কহানি’, খুব ভাল চলেছিল ছবিটা।
“ইট ওয়াজ আ গ্রেট ফিল্ম। অ্যান্ড আই লাইকড্ বব অ্যান্ড রানা,” বলছিলেন ইকা।
দিনে পাঁচ-ছ’টা অফার পাই
তাঁদের এই বদলে যাওয়া ভাগ্যের অনেকটা জুড়ে রয়েছে বলিউড থেকে মুহুর্মুহু অফার।
“কহানি’র পর পরই মধুর ভান্ডারকরের অফিস থেকে ‘হিরোইন’ ছবিটা করার জন্য ফোন এসেছিল। কিন্তু করতে পারলাম না সময় নেই বলে,” বাঙালিসুলভ লজ্জিত হয়ে বলছিলেন শাশ্বত।
পরমব্রত-রও একই অভিজ্ঞতা। “মুম্বই থেকে এন্ডেমোল আমাকে ‘ট্রাফিক’ বলে একটা ফিল্মের অফার দিয়েছিল। নিখিল আডবাণীর অফিস থেকে কল এসেছিল। কিন্তু এই সময় কলকাতায় এত ভাল কাজ হচ্ছে যে হিন্দি ছবিগুলো করার ডেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না আমার কী অপুদার,” বলছিলেন পরম।
মুম্বই থেকেই যদি এত অফার আসে, তবে কলকাতায় যে কী অবস্থা হবে তা বলাই বাহুল্য। “কলকাতায় তো সপ্তাহে পাঁচটা থেকে ছ’টা ছবির অফার পাই। তার মধ্যে কয়েকটা শুনে
হাসব না কাঁদব বুঝতে পারি না। তবে কয়েকটা সত্যি ভাল অফার থাকে,” বলছিলেন পরম। |
কে? কোথায়? |

শাশ্বত |

পরমব্রত |
বয়স: ৪১
স্ট্যাটাস: বিবাহিত। স্ত্রী মহুয়া। মেয়ে হিয়া
৩১ ডিসেম্বর ২০১১-য় হাতে ছবি: ৩
৩১ ডিসেম্বর ২০১২-য় হাতে ছবি: ৮
প্রত্যেক সপ্তাহে ছবির অফার: ৫-৬
‘কহানি’ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কাজ: ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’, ‘যেখানে ভূতের ভয়’ |
বয়স: ৩১
স্ট্যাটাস: কমিটেড রিলেশনশিপ। বান্ধবী ইকা-র সঙ্গে
৩১ ডিসেম্বর ২০১১-য় হাতে ছবি: ২
৩১ ডিসেম্বর ২০১২-য় হাতে ছবি: ৮
প্রত্যেক সপ্তাহে ছবির অফার: ৫-৬
‘কহানি’ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কাজ:‘ভূতের ভবিষ্যৎ’, ‘হেমলক সোসাইটি’ |
|
অবলিগেশনে কোনও ছবি করব না
শুধু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, সর্বভারতীয় পরিচিতি, অসংখ্য অফারের সংখ্যাই কিন্তু বাড়েনি রানা আর বব-য়ের।
“এগুলো তো বেড়েইছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কনফিডেন্স। আজকে বুঝতে পারি কোন ছবিটা করা ঠিক হবে, আজ কারও মন জুগিয়ে ছবি করতে ইচ্ছে হয় না,” গম্ভীর মুখে জানান পরম।
তা ইদানীং মন জুগিয়ে ছবি করেছেন নাকি আপনি?
“অবশ্যই,” বলেন পরম, “একলা আকাশ’, ‘বালুকাবেলা ডট কম’ এগুলো সব আমি অবলিগেশনের জন্য করেছিলাম। রিগ্রেট করি ছবিগুলো করেছিলাম বলে।”
বৌ এ বার মোবাইল ছুড়ে মারবে
শাশ্বতর অসুবিধা অবশ্য অন্য জায়গায়। কাজ এত বেশি হয়ে গিয়েছে যে মোবাইল না রাখার ধনুক ভাঙা পণ আর কত দিন রাখতে পারবেন নিজেই জানেন না।
“আমার স্ত্রী মহুয়া আমার সেক্রেটারি। যে পরিমাণ কাজ ওকে করতে হয়, তা বলার নয়। ও-ই তো মিডিয়া, পরিচালক, প্রযোজকদের সঙ্গে আমার লিঙ্ক। কিন্তু যে হারে কাজ বাড়ছে এবার না ও আমায় ওর মোবাইলটা ছুড়ে মারে। মারলে, ওটা কুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার শুরু করব,” মজার ছলে হাসতে হাসতে বললেন শাশ্বত।
পরের বছর নতুন গাড়ি
এখানেই থামছে না দু’জনের জয়যাত্রা। পরম এর মধ্যেই শিফ্ট করে ফেলেছেন এক বড় বাড়িতে।
“এই বাড়িটাও ভাড়ার। তবে ইচ্ছে আছে পরের বছর নিজের ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার। গাড়িটাও চেঞ্জ করব ভাবছি। আর কী জানেন, ইকার সঙ্গে ইউরোপে দেখা করতে যাওয়ার সময় আগে ভাবতে হত। আজ ২০১২তে আর সেটা ভাবতে হচ্ছে না,” বলছিলেন তিনি।
“আমি এমনিতেই গাড়ির ভীষণ ভক্ত নই। কিন্তু ইচ্ছা আছে একটা গাড়ি কেনার,” জানাচ্ছেন শাশ্বত।
বাড়ি, গাড়ি, প্রায় প্রত্যেক দিন ছবির অফার, পরিচিতি, প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ২০১২ সত্যি বদলে দিয়েছে ওদের ‘কহানি’।
হাসির ছলে তাই শাশ্বত বলছিলেন, “উত্তম জেঠু থেকে বুম্বাদা। চট্টোপাধ্যায়রা কিন্তু সব সময় রুল করেছে। ২০১২ তেও তাই হল।”
বব-য়ের কথা শুনে তখন মিটিমিটি হাসছেন পরম।
সত্যি, ২০১২তে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় ‘কহানি’ এই ‘চট্ট-রাজ’। |
|
|
 |
|
|