ঝাড়খণ্ড ও বিহারে উঁচিয়ে ব্যাটিং করছে শীত। দুই রাজ্যেরই আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের মুখে দু’রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা। প্রবল ঠান্ডায় জবুথবু দুই রাজ্যের রাজধানীই। বিহারে শীতলতার তালিকায় শীর্ষে গয়া। ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঝাড়খণ্ডে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। সেখানে তাপমাত্রা নেমেছে ১ ডিগ্রিতে। একেবারে জমে যাওয়ার হাল। শুধু মানুষ নয়, ঠান্ডায় অবস্থা কাহিল জীবজন্তুরাও। শিম্পাঞ্জিদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সে জন্য পটনা চিড়িয়াখানায় তাদের খাওয়ানো হচ্ছে চ্যবনপ্রাশ। বরাত খুলেছে বাঘ-সিংহদের। তাদের খাদ্য তালিকায় বাড়ানো হচ্ছে মাংসের পরিমাণ। ৮-এর জায়গায় ১১ কিলোগ্রাম। শরীর গরম রাখতে এটাই দাওয়াই।
যাঁরা চিড়িয়াখানায় থাকেন না, প্রবল শীতে সেই আম-আদমির অবস্থাও দুই রাজ্যেই কাহিল। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষজনের। সন্ধ্যার আগেই রাস্তাঘাট ফাঁকা, যে যার ঘরে ঢুকে পড়ছেন, তা পটনা-গয়া-সমস্তিপুরই হোক, কী রাঁচি-ম্যাকলাস্কিগঞ্জ-জামশেদপুর। দিন দশেক আগেও সকাল আটটার পরে রাঁচিতে গরম কাপড় কার্যত গায়ে রাখা যাচ্ছিল না। কিন্তু বড়দিন কাটতে না কাটতেই ভোল বদল। ঝাড়খণ্ডের আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আগামী ২-৩ দিন পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হবে না। বরং রাতের দিকে তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রির কাছাকাছি নামতে পারে। ধানবাদ, লাতেহার, গুমলা, বোকারো, পলামু, দেওঘর সহ নানা স্থানে আগামী দু-তিন দিন শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে বলেই হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
রাঁচিতে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৬ ডিগ্রিতে। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি প্রায় সারাদিন। জামশেদপুরে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রি। তাপমাত্রা সব থেকে বেশি নেমেছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১ ডিগ্রিতে। জামশেদপুরে ঠান্ডায় ইতিমধ্যে দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন গরিবদের জন্য কম্বল আর আগুন জ্বালাতে কাঠকুটো সরবরাহ করছে। এমনকী বড় বড় রাস্তার মোড়ে তাপ নেওয়ার জন্য আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পটনা আবহাওয়া দফতরের খবর, আগামী দু’দিন মধ্য ও পশ্চিম বিহারের বেশ কিছু জেলায় শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাতে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের মধ্যে থাকলেও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা। আগামী দু’দিন মধ্য বিহারের পটনা, সমস্তিপুর গোপালগঞ্জের মতো জেলাগুলিতে এবং পশ্চিম বিহারের গয়া, ভাবুয়া, বক্সার, সিওয়ান প্রভৃতি জেলাগুলিতে মাঝারি ধরনের শৈতপ্রবাহ বইবে। পটনার আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা আশিস কুমার সেন বলেন, “পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য আবহাওয়ার পরিস্থিতি কী হবে তা বোঝা যাবে দু’দিন পরে। এখন আকাশ পরিষ্কার থাকবে। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকলেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি নেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।”
আজকের পটনার তাপমাত্রা ৮.৯ ডিগ্রি হলেও গয়ায় জেলায় ছিল এই মরশুমের শীতলতম দিন। সেখানে তাপমাত্রা ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। এরপরেই নওয়াদার তাপমাত্রা ৫.৫ ডিগ্রি, সাসারাম ৭.১ ডিগ্রি, ভাবুয়া ৭.৮ ডিগ্রি, সিওয়ান ৮.২ এবং মাধেপুরায় আছে ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিটি জায়গায় আগামী দু’দিনে রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কুয়াশার কারণে দিল্লিগামী বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পূর্ব মধ্য কেল থেকে জানানো হয়েছে, যার মধ্যে পটনা-রাজধানী আপ এবং ডাউন, আনন্দবিহার-সীতামঢ়ী আপ এবং ডাউন, দিল্লিগামী নন্দনকানন এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও আবহাওয়ার কারণে দেরিতে ছাড়বে রাজেন্দ্রনগর-আনন্দবিহার। আজ ৪ টে ২০ ছাড়ার পরিবর্তে কাল রাত ৩ টে ৩০ মিনিটে ছেড়েছে। পটনা-আনন্দবিহার বিশেষ এক্সপ্রেস আজ রাত ৮টার পরিবর্তে রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে ছেড়েছে। এছাড়াও ইসলামপুর থেকে দিল্লিগামী ট্রেন আজ বিকেল ৪ টে ২০ মিনিটের পরিবর্তে রাত ১০ টায় ছেড়েছে। |