বাম সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিতর্কে তৃণমূলের পুরপ্রধান |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
সৌজন্যের রাজনীতি দেখালেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান। বামপন্থী সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেন। বক্তৃতা দিলেন মঞ্চে। তবে, বিষয়টিকে আদৌ ভাল চোখে দেখছেন না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কেন তিনি ওই কর্মসূচিতে গেলেন, তা নিয়ে পুরপ্রধানের কৈফিয়ত তলব করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের যুক্ত কমিটির পঞ্চদশ রাজ্য সম্মেলন বুধবার থেকে শুরু হয়েছে শ্রীরামপুরের রবীন্দ্রভবনে। চলবে আগামী ২৯ তারিখ পযর্ন্ত। সংগঠনটি মূলত সিপিআই নিয়ন্ত্রিত। এ দিন দুপুরে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা, দলের হুগলি জেলা সভাপতি প্রিয়রঞ্জন পাল, দলের নেতা ধীরেন দাশগুপ্ত-সহ অন্যান্য নেতারা। বিভিন্ন জেলা থেকেও সিপিআইয়ের বেশ কিছু নেতা এসেছেন।
সংগঠকেরা জানিয়েছেন, রীতি অনুযায়ী যে শহরে সম্মেলন হয়, সেখানকার ‘প্রথম নাগরিক’কে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই বুধবার শ্রীরামপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। লাল পতাকায় মোড়া শহিদ বেদিতে মাল্যদানও করেন তিনি। সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তের হাজির থাকার কথা থাকলেও এ দিন আসেননি তিনি। আজ, বৃহস্পতিবার সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের আসার কথা। |
বক্তৃতা করছেন অমিয়বাবু। —নিজস্ব চিত্র। |
এর পরে মঞ্চে প্রিয়রঞ্জনবাবুর পাশের আসনে তিনি বসেন। তৃণমূল নেতাকে পাশে বসিয়ে সেই দলেরই সমালোচনা করেন প্রবোধবাবু। বলেন, “ক্ষমতায় আসার সময়ে বলা হয়েছিল দলতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের সরকারকে ফেলা হয়েছিল। আর দেড় বছর পেরোতে না পেরোতে এখন কংগ্রেস কী বলছে দেখুন।” এ রাজ্যে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাংসদ। ভাবলেশহীন মুখে সে সব কথা মঞ্চে বসে শুনতে হয়েছে অমিয়বাবুকে। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ওঁর (প্রবোধ) বক্তব্য উনি বলেছেন। আমি আমার কথা বলেছি।” অমিয়বাবু মঞ্চ থেকে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেন। বলেন, “যখন গণতন্ত্রের উপর আঘাত আসে, তখন আমরা দিশীহান হয়ে পড়ি। আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত আসছে।” তার পরেই তিনি বলেন, “এই সম্মেলন থেকে হয়তো এমন কিছু উঠে আসবে, যা সবাইকে দিশা দেখাবে। পশ্চিমবঙ্গের উপকার হবে। দেশের লাভ হবে।” সমস্যা সমাধানে দলমত নির্বিশেষে মানুষের পাশে থাকার কথাও বলেন তিনি।
এ দিকে, তৃণমূল পুরপ্রধানের বামপন্থী সংগঠনের মঞ্চে থাকা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে হুগলি জেলা রাজনীতিতে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, “দলকে না জানিয়ে ওখানে গিয়ে উনি ঠিক করেননি। বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দলের রাজ্য নেতা সুব্রত বক্সি ও মুকুল রায়কে জানাব। ওঁরা যা নির্দেশ দেবেন, সেই মতো কাজ করব।” অমিয়বাবুর অবশ্য দাবি, শহরের প্রধান নাগরিক হিসেবেই তিনি ওই সম্মেলনে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য, “দল এ ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আমিও জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ করিনি। দল যদি বারণ করে, দেখব।”
সিপিআই অমিয়বাবুর ভূমিকাকে ‘ইতিবাচক’ বলেই ব্যাখ্যা করেছে। প্রিয়রঞ্জনবাবু বলেন, “এটা রাজনৈতিক সৌজন্যের পরিচয়। এ ব্যাপারে আমাদের কোনও ছোঁয়াচ নেই।” প্রসঙ্গত, বছর দু’য়েক আগে শহরের গাঁধী ময়দানে সিপিএমের একটি কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন অমিয়বাবু। |