সম্পাদকীয় ১...
ধর্ষণের আমরা উহারা
রাজ্যবাসী দিনকয়েক আগেই জানিতে পারিলেন, দিল্লির ন্যায় ধর্ষণের ঘটনা এই রাজ্যে ঘটিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাহার নিন্দা করিবেন। রাজ্যবাসী তো অবাক! গোটা ২০১২ সাল জুড়িয়া তাঁহারা অভিজ্ঞতায় শিখিয়াছেন, কেহ ধর্ষিত হইলে মুখ্যমন্ত্রী তাহাকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলেন; রাজনৈতিক রঙ বিচার করেন। উৎসাহীরা পুরাতন খবরের কাগজের বান্ডিল ঘাঁটিতে আরম্ভ করিলেন— কোন ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রীকৃত নিন্দার খবরটি চোখ এড়াইয়া গেল? নাকি সংবাদমাধ্যম দুষ্টামি করিয়া সেই নিন্দার খবর চাপিয়া গিয়াছিল? অবশেষে অর্পিতা ঘোষ কুয়াশা কাটাইলেন। অর্পিতা ঘোষ এক জন নাট্যকর্মী, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে তাঁহার খ্যাতি আছে। তিনি দিল্লির ধর্ষণের প্রতিবাদ করিতে করিতেই বলিলেন, দুইটি ঘটনার মধ্যে ফারাক আছে। অবশ্যই। আমাদের ধর্ষণ এবং উহাদের ধর্ষণের মধ্যে ফারাক থাকাই বিধেয়। সেই ফারাক কী রকম? প্রথম ফারাক— অর্পিতা জানাইয়াছেন, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে যদি কাহারও দিকে আঙুল তুলিতেই হয়, তবে ধর্ষিতার দিকেই তুলিতে হইবে। তিনি গোড়ায় ভুল লোককে ধর্ষণকারী হিসাবে শনাক্ত করিয়াছিলেন। তাহাতে এমন কোন ইশ্তেহার অশুদ্ধ হইয়াছিল যে সম্পূর্ণ ঘটনাটিকেই মুখ্যমন্ত্রী ‘সাজানো’ আখ্যা দিয়াছিলেন, অর্পিতা সেই ব্যাখ্যায় যান নাই। ভালই করিয়াছেন কুযুক্তির আধিক্য স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
দ্বিতীয় ফারাকের বর্ণনায় ঝুলির পুরুষতন্ত্র প্রকাশ্যে আসিয়াছে। অর্পিতা জানাইয়াছেন, দিল্লির ধর্ষিতা তরুণী রাত সাড়ে নয়টার সময় বাসে চড়িয়াছিলেন এবং পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষিতা রাত আড়াইটার সময় এক নাইট ক্লাবের সম্মুখে এক স্বল্পপরিচিত পুরুষের গাড়িতে সওয়ার হইয়াছিলেন। গভীর রাত, নাইট ক্লাব, স্বল্পপরিচিতের গাড়ি— ত্র্যহস্পর্শ আর কাহাকে বলে! অর্পিতা বলেন নাই, কিন্তু তাঁহার বর্ণনার পথে আর কয়েক পা হাঁটিলেই বলিয়া দেওয়া যায়, এই তরুণী তো স্বেচ্ছায় ধর্ষিতা হইয়াছিলেন। অর্পিতা জানান নাই, কত রাত পর্যন্ত রাস্তায় থাকিলে ধর্ষণ করা অপরাধ, আর কত রাতে ধর্ষণ করা নরাধমগুলির অধিকারের মধ্যে পড়ে। জানাইলেই পারিতেন। তাহাতে পরের বার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া বুঝিতে সুবিধা হইত। হায় পশ্চিমবঙ্গ! যাঁহারা এখনও ধর্ষিতার ‘চরিত্র’ কাটাছেঁড়া করিয়া বুঝিবার এবং বুঝাইবার চেষ্টা করেন যে তাঁহাকে ধর্ষণ করায় তেমন দোষ নাই, এই সমাজ তাঁহাদের বিবেকের ভূমিকায় অভিনয় করিবার সুযোগ দিয়াছে? তাঁহারাই দল বাঁধিয়া মোমবাতি জ্বালিয়া দিল্লির ধর্ষণের প্রতিবাদ করেন। নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হইয়াছে বলিয়া নহে, কিছু নরাধম এক সহনাগরিকের নাগরিক অধিকার হরণ করিয়াছে বলিয়া নহে— আশঙ্কা হয়, অর্পিতাদের এই মোমবাতি মিছিলের একটিই কারণ— যেখানে ঘটনাটি ঘটিয়াছে, সেখানে তাঁহাদের স্বজনের সরকার নাই। থাকিলে, বিবেক আলজোলাম খাইয়া ঘুমাইয়া থাকিত।
তবে অর্পিতা ঘোষ স্বীকার করিয়াছেন, পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডটি সাজানো ছিল না। ধর্ষণ সত্যই হইয়াছিল। অর্পিতা যখন বলিয়াছেন, তখন অনুমান করা চলে, তিনি কথাটি মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতিক্রমেই বলিয়াছেন। অর্পিতা আরও বলিয়াছেন, ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হইবার পর মুখ্যমন্ত্রী আর কোনও কথা বলেন নাই। কেন? ঘটনাটি ঘটিবার পর যাঁহার তিলমাত্র তর সহে নাই, পুলিশ কাজে হাত দেওয়ার পূর্বেই যিনি ঘটনাটি সাজানো বলিয়া বিবৃতি দিয়াছিলেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হইবার পর তিনি অকস্মাৎ মৌন অবলম্বন করিলেন কেন? লজ্জায়? সে সম্ভাবনা নিতান্তই কম। তবে কি তিনি ভাবিয়াছিলেন, তাঁহার মৌনেই রাজ্যের মানুষ তাঁহার সম্মতি বুঝিয়া লইবেন? যাঁহার মুখে কথার বিরাম নাই, অপ্রয়োজনীয় কথা বলিতে যাঁহার ক্লান্তি নাই, তিনি নিজের ভুল স্বীকার করিবার ক্ষেত্রে মুখে কুলুপ আঁটিয়াছিলেন কেন? ধর্ষিতা তরুণীর নিকট তাঁহার ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত ছিল। রাজ্যবাসীর নিকটও। মুখ্যমন্ত্রী করেন নাই। যখন তিনি দিল্লির ঘটনার নিন্দা করিলেন এবং কলিকাতার প্রসঙ্গ টানিলেন, তখন তাঁহার নিজের খটকা লাগে নাই? মনে হয় নাই, তাঁহার প্রতিক্রিয়া দ্বিচারিতামাত্র? এবং, এই দ্বিচারিতা সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়িয়া গিয়াছে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.