শান্তির খোঁজে
স্নিগ্ধ মায়াবতীতে
বার পুজোয় কুমায়ুনের কোলে স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নবীথি ‘মায়াবতী’ ঘুরে এলাম। ১৭ অক্টোবর শুরু হল যাত্রা। নৈনিতাল পৌঁছে সেখান থেকে রওনা দিলাম মায়াবতীর উদ্দেশে। দূরত্ব একশো কিলোমিটারের কিছু বেশি। সময় লাগে ঘণ্টা পাঁচেক। রাস্তা বেশ সরু আর আঁকাবাঁকা। জিপের ঝাঁকুনি আর পাহাড়ি পথের বাঁক সকলকেই ক্লান্ত করে দিল। যখন লোহার ঘাটে পৌঁছলাম, আবহাওয়া বেশ খারাপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি নামল। তখনও আমরা মায়াবতী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।
ঘন বনের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসছিল বৃষ্টি-ভেজা মাটির গন্ধ। শীতল হাওয়ায় ঠান্ডায় জড়সড় হয়ে বসেছিলাম সকলেই। গাড়ি যখন আশ্রমে পৌঁছল, দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। সেখানে একটি অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা হল। আমাদের জন্য গরম চা ও কিছু আহারের ব্যবস্থা ছিল। ততক্ষণে মেঘ সরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। হাল্কা আলোয় আশ্রমের সাজানো বাগান দেখতে গেলাম। এখানে প্রবেশ পথও পাহাড়ি ফুলের গাছে সাজানো। এখানকার সন্ন্যাসীরা জানালেন মায়াবতী নামের অর্থ। ক্যাপ্টেন সেভিয়্যার এবং মিসেস সেভিয়্যার নামে স্বামী বিবেকানন্দের এক ব্রিটিশ শিষ্য দম্পতি তাঁর নির্দেশে এমন একটা জায়গা খুঁজছিলেন, যা হবে লোকালয় থেকে দূরে বেশ কিছুটা গভীর পার্বত্য অরণ্যের মাঝখানে। তাঁদের মায়ার দানে অপূর্ব সুন্দর এই জায়গায় বিবেকানন্দ তাঁর আশ্রম নির্মাণ করেন। নাম দেন ‘মায়াবতী’। দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিষ্যদের উত্তর ভারতের প্রখর উত্তাপ থেকে বাঁচাতে হিমালয়ের কোলেই আশ্রম নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
ছবিটি লেখকের পাঠানো
আশ্রমে বেশ কয়েক জন বিদেশি শিষ্যের দেখা মিলল। মঠের পশ্চিমে পাহাড়ের ওপরে আছে আশ্রম পালিত বিরাট ‘গো-শালা’, যার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আশ্রমিকরাই। তাঁদেরই এক জন আমাদের আশ্রমের চারপাশটা ঘুরে দেখালেন। গো-শালার পিছনে শষ্যক্ষেত্র। সেখানকার সবুজ লহরি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে একটা বাঁধানো জায়গা দেখিয়ে ওই আশ্রমিক জানালেন, আগে এখানে একটা জলাশয় ছিল। স্বামীজি এখানে নৌকা বিহার করতেন। পরে আশ্রমের জনৈক সাধুর মুখে শুনেছি, নৌকা বিহাররত বেশ কিছু ছবি আশ্রমে সংরক্ষিত রয়েছে।
এর পরে আমরা গেলাম মায়াবতী আশ্রমের প্রথম প্রধান অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দের সমাধিস্থলে। এক দিন নাকি ধ্যানস্থ অবস্থায় এখানে একটি বাঘের সামনে পড়েন তিনি। বাঘটি তাঁর কোনও ক্ষতি না করে চলে যায়। পরে স্বামীজি ঘটানাটি সেভিয়্যারকে জানালে তিনি আরও উঁচুতে নিবিড় অরণ্যে ধ্যান করার জায়গার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ বহু দিন ধ্যান করেছেন।
আশ্রমের সামনের দিকে ডাকবাংলো আকৃতির একটি সুন্দর পুস্তকালয় আছে। গ্রন্থাগারে রয়েছে বেশ পুরনো মডেলের ‘ছাপার যন্ত্র’। স্বামী বিবেকানন্দ নিজে এটি ব্যবহার করেছেন। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। আশ্রমের দক্ষিণে নীচের পাহাড়ে রয়েছে আশ্রম পরিচালিত একটি হাসপাতাল। সেখানে দুর্গম পরিবেশের মধ্যেও আর্তজনের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন চিকিৎসকেরা। অতিথিশালায় সামনের দিকটা খোলা, পিছনের দিকে বড় পাথরের পাঁচিল। সামনের দিকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাথর আর অরণ্য। আশ্রম বালকটি জানায়, শীত বাড়লে কখনও কখনও বাঘ, শেয়াল, বুনো হরিণ এখানে নেমে আসে। তাদের গর্জন প্রায়ই শোনা যায়। দেখলাম, উপাসনাগৃহে এক ইংরেজ সাধু কথামৃত থেকে অদ্বৈতবাদের ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। সকালে কুমায়ুনের অরণ্য-পর্বত ছাড়িয়ে সুউচ্চ হিমাদ্রি হিমালয়, ভোরের আলোয় দেখা সেই অপূর্ব দৃশ্য ভোলার নয়। সেখান থেকে আমরা রওনা দিলাম শৈলশহর আলমোড়ার উদ্দেশে।
৩০ অক্টোবর ফিরে এলাম পুরনো ঠিকানায়। ঝুলি ভরে নিয়ে এলাম বহু সুন্দর স্মৃতি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.