আশ্রমে বেশ কয়েক জন বিদেশি শিষ্যের দেখা মিলল। মঠের পশ্চিমে পাহাড়ের ওপরে আছে আশ্রম পালিত বিরাট ‘গো-শালা’, যার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আশ্রমিকরাই। তাঁদেরই এক জন আমাদের আশ্রমের চারপাশটা ঘুরে দেখালেন। গো-শালার পিছনে শষ্যক্ষেত্র। সেখানকার সবুজ লহরি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে একটা বাঁধানো জায়গা দেখিয়ে ওই আশ্রমিক জানালেন, আগে এখানে একটা জলাশয় ছিল। স্বামীজি এখানে নৌকা বিহার করতেন। পরে আশ্রমের জনৈক সাধুর মুখে শুনেছি, নৌকা বিহাররত বেশ কিছু ছবি আশ্রমে সংরক্ষিত রয়েছে।
এর পরে আমরা গেলাম মায়াবতী আশ্রমের প্রথম প্রধান অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দের সমাধিস্থলে। এক দিন নাকি ধ্যানস্থ অবস্থায় এখানে একটি বাঘের সামনে পড়েন তিনি। বাঘটি তাঁর কোনও ক্ষতি না করে চলে যায়। পরে স্বামীজি ঘটানাটি সেভিয়্যারকে জানালে তিনি আরও উঁচুতে নিবিড় অরণ্যে ধ্যান করার জায়গার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ বহু দিন ধ্যান করেছেন।
আশ্রমের সামনের দিকে ডাকবাংলো আকৃতির একটি সুন্দর পুস্তকালয় আছে। গ্রন্থাগারে রয়েছে বেশ পুরনো মডেলের ‘ছাপার যন্ত্র’। স্বামী বিবেকানন্দ নিজে এটি ব্যবহার করেছেন। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। আশ্রমের দক্ষিণে নীচের পাহাড়ে রয়েছে আশ্রম পরিচালিত একটি হাসপাতাল। সেখানে দুর্গম পরিবেশের মধ্যেও আর্তজনের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন চিকিৎসকেরা। অতিথিশালায় সামনের দিকটা খোলা, পিছনের দিকে বড় পাথরের পাঁচিল। সামনের দিকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাথর আর অরণ্য। আশ্রম বালকটি জানায়, শীত বাড়লে কখনও কখনও বাঘ, শেয়াল, বুনো হরিণ এখানে নেমে আসে। তাদের গর্জন প্রায়ই শোনা যায়। দেখলাম, উপাসনাগৃহে এক ইংরেজ সাধু কথামৃত থেকে অদ্বৈতবাদের ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। সকালে কুমায়ুনের অরণ্য-পর্বত ছাড়িয়ে সুউচ্চ হিমাদ্রি হিমালয়, ভোরের আলোয় দেখা সেই অপূর্ব দৃশ্য ভোলার নয়। সেখান থেকে আমরা রওনা দিলাম শৈলশহর আলমোড়ার উদ্দেশে।
৩০ অক্টোবর ফিরে এলাম পুরনো ঠিকানায়। ঝুলি ভরে নিয়ে এলাম বহু সুন্দর স্মৃতি। |