রাজ্যে চার্জশিটই হয়নি চার হাজার ধর্ষণের মামলার
রাজ্যে ধর্ষণের যত মামলা চলছে, তার এক-তৃতীয়াংশে চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। ফলে ক্ষীণ হচ্ছে চার হাজারেরও বেশি অভিযোগকারিণীর সুবিচার পাওয়ার আশা। পুলিশ সূত্রে খবর, এই পরিসংখ্যান পেয়ে ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় জেলার পুলিশ সুপারদের বলেছেন, ধর্ষণ-মামলায় দ্রুত চার্জশিট দাখিল না করলে তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্টেট ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ২০০৭-২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজ্যের আদালতগুলিতে ১৩,০৩২টি ধর্ষণের মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৪০৫২টির চার্জশিটই দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। চলতি বছরে কত ধর্ষণের মামলা হয়েছে, কতগুলির চার্জশিট হয়েছে, তার হিসেব এখনও তৈরি হয়নি।
কেন চার্জশিট দিতে ব্যর্থ পুলিশ? এ প্রশ্নে পুলিশের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। এক পক্ষের যুক্তি, এক এক জন তদন্তকারী অফিসারের হাতে মামলার সংখ্যা ১০০-১৫০। দূরে বদলি হলে তিনি নিয়মিত সাক্ষ্য দিতে যেতে পারেন না। ধর্ষণ-মামলার জন্য পৃথক ‘সেল’ নেই। দেরি হচ্ছে এই সব কারণেই। পুলিশেরই অন্য পক্ষ সরকারি আইনজীবীদের আন্তরিকতা, দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জেলা জজ, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখলে এই ধরনের অনেক মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে, তা অতীতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু তার জন্য যে সমন্বয়ের প্রয়োজন, আজ তাতে সরকারি কর্তারা কতটা উদ্যোগী, প্রশ্ন করছেন তাঁরা।
দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।
যদি পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ কিংবা ইভ টিজিংয়ের
ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রেও আমি নিন্দাই করব।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ধর্ষণের মামলা লড়ার সাহস যে মেয়েরা দেখান, পাল্লা ভারী যে তাঁদের বিপরীতেই, তা বলে দিচ্ছে পুলিশের পরিসংখ্যান। এক দিকে চার্জশিট দিতে দেরি হওয়ার ফলে অভিযুক্তরা সুবিধা পাচ্ছে। অন্য দিকে, বিচার হলেও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ অভিযুক্ত। পুলিশের তথ্য অনুসারে, ২০০৭ সাল থেকে পরের পাঁচ বছরে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার। সাজা হয়েছে ৫৩৮ জনের। ছাড়া পেয়েছেন তিন হাজারের কিছু বেশি।
রাজ্যের ডিরেক্টর অফ প্রসিকিউশন আশিস চক্রবর্তী বলেন, “চার্জশিট পেশ না হলে মামলা এগোবে না। আশা করব, পুলিশ সব ক’টি ধর্ষণ মামলার দ্রুত চার্জশিট দেবে।” রাজ্য বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি জেলার সরকারি আইনজীবী গৌতম দাস বলেন, “এ ধরনের মামলায় যাতে তাড়াতাড়ি চার্জশিট হয়, সে জন্য সরকারি আইনজীবীদের তরফেও পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা জরুরি।”
কিন্তু যে সব মামলার চার্জশিট হয়ে গিয়েছে, সেগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না কেন? আশিসবাবু বলেন, “ডায়মন্ড হারবার থেকে দার্জিলিং, সর্বত্রই ধীরে ধীরে জমে মামলার স্তূপ বেড়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বাড়ানো-সহ অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে রাতারাতি তো সমাধান হবে না। চেষ্টা চলছে।”
মামলার পাহাড়ের তলায় চাপা পড়েও সুবিচারের আশা ছাড়েননি প্রায় ১৫ হাজার নির্যাতিতা মহিলা। এক অভিযোগকারিণীর আত্মীয়ের বক্তব্য, “পুলিশ যথাযথ তদন্ত করে চার্জশিট পেশ করায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছিল। তা হলে আমরা কেন বিচার পাব না?”
পুলিশি গাফিলতি, আইনজীবীদের উদাসীনতা, প্রশাসনে সমন্বয়ে অনীহা, এ সবই দুস্তর বাধা তৈরি করছে ধর্ষিতা মেয়েদের বিচার পাওয়ার পথে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.