শংসাপত্রের ফাঁসে ক্যানসার চিকিৎসার যন্ত্র
ছয় কোটির বরাদ্দ আটকে
হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার ভরসা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসেন সিকিম, নেপাল, ভুটান এমনকী, বাংলাদেশ থেকেও। ক্যানসারের চিকিৎসায় উন্নত পরিষেবা দিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে ব্র্যাকিথেরাপির যন্ত্র কেনার জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু ২০ বছর আগে কেন্দ্রীয় বরাদ্দে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কেনা রেডিওথেরাপির একটি যন্ত্রের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের ‘ফাইল নম্বর’ না দিতে পারায় ওই বরাদ্দ মিলছে না। লাল ফিতের ফাঁসে আটকে পরিষেবা।
রেডিওথেরাপির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১২৫ জন রোগী আসেন। অন্তর্বিভাগে পরিষেবা নেন আরও ২৫-৩০ জন রোগী। পুরনো রেডিওথেরাপির যন্ত্রটি দিয়েই বর্তমানে ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুরনো যন্ত্রটির পরিস্থিতিও ভাল নেই। সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, সমস্যার কথা স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “খোঁজ নেব। সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বছরখানেক আগে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর কন্ট্রোলিং নন কমিউনিকেবল ডিজিস প্রকল্পে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রতিনিধিরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল ঘুরে দেখে ব্র্যাকিথেরাপির যন্ত্র কেনার বিষয়টি নিয়ে আশ্বাস দেন। বছর তিনেক আগে এক বার ওই যন্ত্র কিনতে মেডিক্যাল কলেজের তরফে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রতিনিধিদের পরামর্শে ফের প্রস্তাব পাঠানো হয়।
নতুন যন্ত্র কেনার জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেতে পুরনো যন্ত্র কেনার ইউসি এবং তার ফাইল নম্বর সম্প্রতি চেয়ে পাঠায় কেন্দ্র স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আরও বেশ কিছু তথ্য তারা চাইলেও মূলত ওই দুটি বিষয় না দিতে পারায় বরাদ্দ আটকে পড়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও পাঠানো হয়। এর পরেই ২০ বছর আগে ওই যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে সরকারি যে নির্দেশিকা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিল সেই নথি পাঠানো হয়। তাতে কাজ হয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে ইউসি আগেই পাঠানো হয়েছে বলে জানান উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে ফাইল নম্বর তাদের কাছে নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছেই তা রয়েছে। বিষয়টি জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানান, ওই যন্ত্রে ক্যানসার আক্রান্তের নির্দিষ্ট কোষগুলিতে সহজে ‘রে’ দেওয়া যায়। তবে ‘লিনিয়ার এক্সেলেটর’ যন্ত্র অত্যাধুনিক। পরবর্তীতে তা কেনার কথাও ভাবছেন কর্তৃপক্ষ।
গত ১৫ অগস্ট থেকে কেন্দ্রের একটি প্রকল্পে ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রত্যেক রোগীকে অন্তত এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া হাসপাতালের ‘ডে কেয়ার ইউনিট’-এ ছ’টি শয্যা রয়েছে। ২০ শয্যার রেডিওথেরাপির অন্তর্বিভাগও চালু করতে চান কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে ব্র্যাকিথেরাপির যন্ত্র হলে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকদের অনেকেই।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “রেডিওথেরাপির পুরনো যন্ত্রটি কেনার ক্ষেত্রে তার ইউসি এবং হিসেবের বিস্তারিত আগেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছিল বলে জেনেছি। কিন্তু পুরনো ওই যন্ত্র কেনার জন্য সরকারি নথির ফাইল নম্বর আমাদের কাছে নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকেই তা পাওয়া সম্ভব।” রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান রজত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ইউসি পাঠিয়েছি। ফের চাইলে দেওয়া যাবে। ফাইল নম্বর নেই।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্র্যাকিথেরাপির যন্ত্র কেনার বিষয়টির উপর ওই বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালুর বিষয়টিও নির্ভর করছে। কেন না পিজি চালুর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ব্র্যাকিথেরাপি, কোবাল্টথেরাপি এবং ডে-কেয়ার কেমোথেরাপি ইউনিট চালু থাকতে হবে। ব্র্যাকিথেরাপি ছাড়া বাকি দুটো রয়েছে। ব্র্যাকিথেরাপি চালু করা হলে পিজি চালুর জন্য আবেদন করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.